একবেলার অবকাশ কাটাতে ‘ছনের ঘরে’ |
![]() যখন ভাবছেন ইট-পাথর আর কংকিটের শহরে আপনি হাঁপিয়ে উঠেছেন। তখন শহরের অতি কাছ থেকেই একটু বেড়িয়ে আসুন না। আর শরীরে একেবারে গাঁও-গেরামের নির্মল মুক্ত বাতাস লাগান। আপনার চোখ জোড়াটি প্রশান্তি দিতে দেখে আসুন সবুজের বন-বনানী। মনে তৃপ্তি মেটাতে নদী-নালা, খাল-বিলের কাছে ছুটে যান। শুনুন কোকিলের কুহু-কুহু ডাক আর নানা জাতের পাখির কিচির-মিচির শব্দ। তবে এত কিছু করতে গিয়ে যাতে ‘ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন জলশানো রুটি’ মনে না হয় সে ব্যবস্থাও করতে হবে। সে ক্ষেত্রে শহরের খুব কাছেই একবেলার অবকাশে ঘুরে আসা আর খাবার সেরে নেয়ার জন্য ‘ছনের ঘর’ হতে পারে আদর্শ স্থান। রেস্তোরাটি সাঁজাতে প্রকৃতি থেকে প্রদত্ত সম্পদের অকৃত্রিম ব্যবহার চোখ জুড়িয়ে যায়। বসার প্রতিটি ঘরে ব্যবহার করা হয়েছে ছনের ছাউনি। এখানে বসে খাওয়ার টেবিল-চেয়ারগুলো বানানো হয়েছে বাঁশ দিয়ে। গ্রামীণ প্রাচীন ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈজসপত্র হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে মাটির তৈরি জিনিস। ছনের ঘরের পরিবেশ ও খাবারের স্বাদ খুবই রুচিশীল। খাওয়া শেষ করে ছনের ঘরের ছাউনির নিচেই বাঁশের চেয়ার-টেবিলে বসে দিতে পারেন জমিয়ে আড্ডা। ঢাকা থেকে সকাল ১০/১১টার দিকে বের হয়ে খেয়ে-দেয়ে সবুজ প্রকৃতি সাথে প্রেম নিবেদন আর গ্রামীণ স্বাদ উপভোগ করে বিকেল ৫/৬টার মধ্যে আবার ফিরতে পারবেন। তবে ফেরার আগে ছনের ঘরে তৈরি এক কাপ লেবুপাতা আর লেবু চা খেয়ে আসবেন। কারণ এই চায়ের অসাধারণ স্বাদই আপনাকে পরের বার ছনের ঘরে যেতে উদ্ভুদ্ধ করবে। গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পানজোড়া গ্রাম। আর ছনের ঘর রেস্তোরাটি এই পানজোড়া গ্রামেই। এই গ্রামেরই কৃষক আব্দুস সামাদের ছেলে মো. সাদেক মিয়া চলতি বছরের শুরুর দিকে ৫ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন ছনের ঘর রেস্তোরাটি। কাঞ্চন-গাজীপুর বাইপাস থেকে কালীগঞ্জের দিকে এগোলেই পানজোড়ায় পেয়ে যাবেন ছনের ঘর। আর গুগল ম্যাপ ধরে এগোলে সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে। রাস্তা দিয়ে গাড়ি, রিকশা বা হেঁটে গেলে ভেতরে যাওয়ার চুম্বক আপনাকে আকর্ষণ করবেই। ভেতরে ঢুকতেই প্রকৃতির দক্ষিণা বাতাসে আপনার শরীর আর মন শীতল হবে। উপরে ছনের ছাউনি। চারপাশে কোন দেয়াল নেই। দু’চোখ ভরেই সবুজ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন। আর বৃষ্টি হলে তো কোন কথাই নেই। দু’হাত বাড়িয়ে করতে পারেন বৃষ্টি বিলাস। ![]() ছনের ঘরের সত্বাধীকারী সাদেক মিয়া বলেন, ব্যক্তি জীবনে তিনি তিন ছেলের জনক। দুই ছেলে পিএসসি শেষ করে মাদ্রাসায় হাফিজি পড়ছে। বাকি ছেলেকেও দেওয়া হবে মাদ্রাসায়। স্ত্রী গৃহিনী। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সর্ব কনিষ্ট। আছে তিন বোনও। ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন খুব ডানপিঠে। যে কারণে এসএসসি’র পর আর লেখাপড়া এগোয়নি। পরিবার চাইলেও তিনি তার দুষ্টুমির কারণে লেখাপড়া এগোতে পারেননি। ১৯৯৭ সালে চলে যান ভারতে। সেখানে তিনি বম্বে গিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ নেন। তারপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের নামিদামি রেস্টুরেন্টে কাজ করেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ২৪ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ফিরে আসেন দেশে। দীর্ঘদিন প্রবাসে কাটালেও দেশের মাটি ও মানুষ তাকে খুব টানতো। দেশে এসেই রাজধানী্র অভিজাত এলাকা ঢাকার গুলশান-বারিধারার একটি নাম করা হোটেলে চাকরি নেন। অস্থির সাদেকের কৈশোরের দূরন্ত পনা এখনো কাটেনি। সেখান থেকে চাকরি ছেড়ে চলে আসেন শিকড়ের টানে গ্রামে। যেখানে কাঁদা মাটির গন্ধ, সবুজ প্রকৃতি হাতে ইশারা করে ডাকে। আর সেখানেই তার ছনের ঘর। তাতে বাঁশের আসবাব ও মাটির তৈজসপত্র। তিনি বলেন, এখানে প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন রান্না হয়। রান্নায় ব্যবহৃত সবজি স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। স্থানীয় বিভিন্ন চাতালের চাল, জেলের জালে ধরা পড়া বিলের দেশি মাছ ও কৃষাণীর পালের দেশী মুরগী হয় রেস্তোরেন্টের রান্নার মূল উপকরণ। খাবারের দামও রয়েছে সাধ এবং সাধ্যের মধ্যে। প্রতিদিন সকাল ১০/১১টার মধ্যে জানিয়ে দিলে সেই হিসেবে খাবারের আয়োজন করা হয়। তবে কয়েকজনের জন্য বাড়তি খাবারের ব্যবস্থা সবসময়ই থাকে। রাত্রি যাপনের জন্য ছনের ঘরে কোন ব্যবস্থা নেই। তবে ভবিষ্যতে রাত্রি যাপনেরও ব্যবস্থা করবেন বলে জানান সাদেক মিয়া। যেভাবে যাবেন: রাজধানীর কুড়িল-বিশ্বরোড থেকে ৩শ ফিট রাস্তার শেষ মাথায় পাবেন কাঞ্চন ব্রীজ। আর বাঁয়ে কাঞ্চন-গাজীপুর বাইপাস সড়ক। ওই সড়ক দিয়ে একটু এগোলেই কালীগঞ্জ শহরে যেতে পানজোড়া গ্রামে পেয়ে যাবেন ছনের ঘর। এছাড়াও, উত্তরা-টঙ্গী-আব্দুল্লাহপুর থেকে বালু নদীর ওপর দিয়ে তেরমূখ ব্রীজ হয়েও আসা যায় ছনের ঘরে। -এমএ |