গ্যাসের দাম গড়ে ৩২.০৮ শতাংশ বৃদ্ধি করায় প্রথম দিনেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন গ্র্রাহকসহ সংশ্লিষ্টরা। দৈনন্দিন পণ্যের বাড়তি দামের মধ্যে গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে অসন্তোষ ঝরেছে গ্রাহকদের কণ্ঠে। তারা বলছেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অনেকটা ‘মরার উপর খরার ঘাঁ’।
১লা জুলাই থেকে গ্যাসের বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে। এ নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে অসন্তুষ্ট গ্রাহকরা। প্রতিনিয়ত দৈনন্দিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে গ্যাসের দাম বাড়লে বাড়ি ভাড়াও বাড়বে। যা সকলের কাছেই বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়াবে। দাম না বাড়িয়ে বিকল্প পদ্ধতি বের করা উচিত ছিল বলেও মনে করছেন তারা।
রাজধানীর বাসাবো এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবার করেন স্বল্প আয়ের চাকুরিজীবী মো. মিজানুর রহমান। অবজারভার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘সরকার আমাদের মত স্বল্প আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে না। তারা কিভাবে ধনীরা আরও ধনী হবে সে রাস্তা খুলে দেয়। প্রতিদিনই জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তার ওপর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি মানে বাড়ি ভাড়াও বাড়বে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল কিছুর দাম বাড়বে। এটা আমাদের জন্য বাড়তি চাপ।’
মগবাজার এলাকার আল আমিন আনাম নামের এক ব্যক্তি অবজারভার অনলাইনকে বলেন, ‘গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অনেকটা ‘মরার উপর খরার ঘাঁ’। এমনিতেই সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তার উপর বাড়তি খরচ। এ সিদ্ধান্ত নেবার আগে সরকার বা সংশ্লিষ্টদের বিকল্প ব্যবস্থা ভাবা উচিত ছিল।’
উচ্চ দামে আমদানি করা এলপিজিতে ভর্তুকির ভার লাঘবে সরকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করায় সরকারের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে বলে মনে করছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে রাজনৈতিক দলগুলোও।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান অবজারভার অনলাইনকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে গ্যাসের দাম যে হারে বাড়ানো হয়েছে, তা সীমিত আয়ের মানুষের জন্য অনেক কষ্টকর হবে।’
তিনি বলেন, ‘গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ করতে ক্যাব হাইকোর্টে গিয়েছিল। সেখানে বিচারক কিছু অভজারভেশন দিয়েছিলেন। দুর্নীতি, অপচয় বন্ধ করতে বলেছিলেন। বিইআরসির উচিত ছিল বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করা। অব্যবস্থাপনা কমে গেলে গ্যাসের দাম কমে যাবে। জনগণ উপকৃত হবে, সরকারেরও সুনাম হবে।’
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রতি চুলায় গ্যাসের দাম ১৭৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। শুধুমাত্র তাদের যে ব্যবসায়ী যারা এলএনজি গ্যাস আমদানি করছে, তাদেরকে সুবিধা দেওয়ার জন্য, তাদের পকেট ভারী করার জন্য এবং দুর্বৃত্তদের পকেট ভারী করার জন্য তারা (সরকার) গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করেছে।
সব পর্যায়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সমালোচনা করে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন বাম দল। দাম বাড়ার প্রতিবাদে আগামী ৭ জুলাই দেশজুড়ে আধাবেলা হরতালও ডেকেছে দলগুলো।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) রোববার গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে ঘোষণা দিয়েছে, তাতে সব পর্যায়ে গ্যাসের দাম গড়ে ৩২.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিইআরসি সূত্র মতে, আবাসিক খাতে দুই চুলার খরচ ৮শ থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা আর এক চুলার খরচ ৭৫০ থেকে ৯২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গৃহস্থালি মিটারে দাম বেড়েছে প্রতি ঘনমিটারে ৯.১০ টাকা থেকে ১২.৬০ টাকা।
সিএনজি'র ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৩ টাকা করা হয়েছে, অর্থাৎ দাম বেড়েছে ৭.৫ শতাংশ।
এছাড়া, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনের জন্য, হোটেল ও রেস্তোঁরা, ক্যাটপিভ পাওয়ার, শিল্প ও চা বাগানে ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে অপরিবর্তিত আছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম।
গড়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭.৩৮ টাকা থেকে ২.৪২ টাকা বাড়িয়ে ৯.৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এলএনজি'র আমদানি খরচ এবং বাংলাদেশের বাজারে গ্যাস বিক্রি থেকে আসা রাজস্ব আয়ের মধ্যে ঘাটতির পরিমাণ হবে ১৮ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। যার মধ্যে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি থেকে অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হওয়ার কথা ৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।
এরপরও আরও ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ সরকারকে ভর্তুকী দিতে হবে এই খাতে।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে আবাসিক খাত, পরিবহন খাত, সার উৎপাদন খরচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ, শিল্প কারখানার পরিচালনা ব্যয় বাড়বে। এর প্রভার মানুষের জীবন ব্যবস্থার সকল স্তরেই পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
-এমএ