প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে না পারলে দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
বুধবার জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সাংসদ নূর মোহাম্মদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
সংসদ নেতা বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা অধিবাসীরা অসন্তুষ্টিতে ভুগছে। তাদের অনেক অভাব অভিযোগ রয়েছে। তাদের প্রত্যাবাসনে সরকার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এই সকল বাস্তুচ্যুত অধিবাসীরা স্বাভাবিকভাবেই অসন্তুষ্টিতে ভুগছে। তাদের রয়েছে অনেক অভাব-অভিযোগ। এদেরকে অতিদ্রুত ফেরত না পাঠালে আমাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।
আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চুক্তি করার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা না ফেরায় এবং তারা ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় সেই পরিকল্পনা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে যায়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নির্ভয়ে বসবাসের পরিবেশ তৈরি না করার মধ্য দিয়ে প্রত্যাবসনে মিয়ানমারের অনাগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে।
সংসদে নূর মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর কাজে কোনো অগ্রগতি আছে কি না?
জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে চুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দু’দেশের সম্মতিক্রমে দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর সম্ভ্যাব্য তারিখ হিসেবে ১৫ নভেম্বর ২০১৮ নির্ধারণ করা হয়।
“কিন্তু মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকরা স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে রাজি হয়নি।”
মিয়ানমারের তালবাহানার দিকটি দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “রাখাইন রাজ্যে যথাযথ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারে উপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। কিন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে মিয়ানমার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে এবং বলছে যে বাংলাদেশের অসহযোগিতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্ব হচ্ছে।
“আমরা বারবার বিভিন্ন ফোরামে বলেছি যে, এ সকল বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার জনগণের ফেরত মিয়ানমার সরকারের উপর বর্তায় এবং তাদেরকেই উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্ব জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অব্যাহতভাবে আমাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ এ বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনে একটি রিপোর্ট প্রেরণ করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকার তাদেরকে এ বিষয়ে কাজ করতে দিচ্ছে না। মিয়ানমারের অসহযোগিতা সত্ত্বেও আমরা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক দুটি পথই খোলা রেখেছি।”
এইচএস