মোটরসাইকেল ও স্কুটিতে হেলমেটের ব্যবহার বাড়লেও নিশ্চিত হচ্ছেন না নিরাপত্তা। ব্যবহৃত বেশিরভাগ হেলমেটই মানসম্মত নয়। সুরক্ষার পরিবর্তে দুর্ঘটনায় এসব হেলমেটই প্রাণঘাতি হয়ে উঠতে পারে বলে আশংকা বিশেষজ্ঞদের।
বুয়েটের এক গবেষনায় বলা হয়েছে, দেশে ব্যবহৃত হেলমেটের বেশিরভাগই দুর্ঘটনায় সুরক্ষা দেবে না। নিরাপত্তার পরিবর্তে দুর্ঘটনায় এসব হেলমেট ভেঙ্গে মারাত্মক জখম এমনকি প্রাণসংহারের আশঙ্কা রয়েছে। হেলমেটের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বিএসটিআই’র হলেও প্রতিষ্ঠানটির নেই এ কাজের সক্ষমতা।
হেলমেট হচ্ছে মাথার সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত শিরোস্ত্রাণ বা বর্ম, যা মাথাকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। এর উপদানগুলো কি এবং কোনমাত্রায় আঘাত সহিষ্ণু হলে মজবুত বিবেচনা করা হবে বাংলাদেশে তা কোন আইন বা বিধিবিধানের মাধ্যমে নির্ধারিত নেই।
হেলমেটের মান সম্পর্কে পুলিশ বলছে, যেসব হেলমেটে মাথা, কান, মুখমন্ডল ঢাকা থাকে এবং হেলমেটে ব্যবহৃত উপদানগুলো মজবুত থাকলে সেগুলোকেই নিরাপদ বলে বিবেচনা করা যায়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যেসব হেলমেট শক্ত, ওজন সম্পন্ন এবং মাথা থেকে কাঁধ পযন্ত ঢেকে রাখে সেসব হেলমেটই নিরাপদ।
হেলমেট আমদানী কারকরা বলছেন, অধিক ওজন সম্পন্ন, কাজের ভালো ফিনিসিং এবং মাথা, কান, মুখ ঢেকে রাখে সেগুলো ভালো এবং নিরাপদ হেলমেট।
বাস্তবতা হচ্ছে, নিরাপত্তার খাতিরে যত না- তারচেয়ে বেশী পুলিশের মামলা থেকে রক্ষা পেতে মোটরসাইকেলে টুপির মত করে নামেমাত্র হেলমেট ব্যবহার করা হচ্ছে। হেলমেটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কোন মান অনুসরণ না করায় দুর্ঘটনায় এসব হেলমেট প্রত্যাশিত সুরক্ষা দেবে না।
ডিএমপির ট্রাফিক (দক্ষিণ) বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি)এস এম মুরাদ আলি অবজারভারকে বলেন, মোটরসাইকেলে নিরাপত্তার জন্য হেলমেট ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এখন যেধরনের (টুপি আকৃতির) হেলমেট ব্যবহার করছে এগুলো শুধুমাত্র মামলা থেকে বাঁচতে, প্রকৃত অর্থে দুর্ঘটনায় এসব হেলমেট কোন সুরক্ষা দেবে না। হেলমেটের সঠিক মান নির্ধারণ করা উচিত। হেলমেটের মানের সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকায় অনিরাপদ হেলমেট রোধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না ট্রাফিক বিভাগ।
হেলমেটের মান নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই)। বাজারে বিক্রি হওয়া সব হেলমেট বিএসটিআই’র নির্ধারিত মান অনুযায়ী উৎপাদন ও আমদানি হওয়ার কথা। পাশাপাশি হেলমেটে বিএসটিআইয়ের মানচিহ্ন থাকার কথা। কিন্তু বাজার ঘুরে কোনো হেলমেটেই বিএসটিআইয়ের মানচিহ্ন পাওয়া যায়নি। বিএসটিআই এ ক্ষেত্রে কোনো অভিযান চালিয়েছে বলেও জানা যায়নি। এটি বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক মান পরীক্ষার তালিকায় থাকা ১৯৪টি পণ্যের ১২০ নাম্বর পণ্য মোটরসাইকেল ও স্কুটারের হেলমেট। ১৯৮৬ সালে তালিকাভুক্ত হওয়ার ৩৩ বছরেও এর মান পরীক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই প্রতিষ্ঠানটি।
বিএসটিআই’র উপ-পরিচালক গোলাম বাকী বলেন, মোটরসাইকেল বা স্কুটারের হেলমেটের স্ট্যান্ডার অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ টেস্ট করার সুযোগ সুবিধা এখনও আমাদের এখানে ক্রিয়েট হয়নি। আমরা একটা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। সেই প্রজেক্টের আওতায় এটা টেস্ট হবে। অচিরেই এটা শুরু হবে।
মোটরসাইকেলের রেজস্ট্রেশন করার সময় বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে হেলমেট ব্যবহারের জন্য বলা হয়। তবে কোন মানের হেলমেট সে বিষয়ে কোন দিকনির্দেশনা দেয়া হয় না।
বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান অবজারভারকে বলেন, মোটরসাইকেল চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহারের কথা বিআরটিএ থেকে বলে দেয়া হয়। তবে কোন মানের পড়তে হবে সেবিষয়ে কিছু বলা হয় না। যেহেতু হেলমেট নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করতে হয়, সেক্ষেত্রে নিরাপদ এবং দুর্ঘটনা থেকে সুরক্ষা দেবে এমন হেলমেট পড়া উচিত।