অযত্নে-অবহেলায় বিলুপ্তীর পথে হরিপুর জমিদার বাড়ি |
![]() তাদের নিকট থেকে বাড়ির মালিকানা ও জমিদারি আসে উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরী। কালক্রমে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হওয়ার পর জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে তারা বাড়িটি ফেলে কলকাতায় চলে যান। ওই সময় পুরোহিতদের রেখে যায়। এখনও জরাজীর্ণ জমিদার বাড়িতে পুরোহিতদের বংশধররা বসবাস করছেন। অযত্নে অবহেলার কারণে বাড়িটির দেয়ালের অধিকাংশ পলেস্তারা খসে পড়ছে, আর সেখানে জমেছে শেওলার আবরণ, শৈবালের বালখিল্লতায় বাড়িটির পুর্বরুপ বিবর্ণ প্রায়। নান্দনিক কারুকাজের খুব অল্প কিছু অংশই বিলীন হতে বাকি আছে। জনশ্রুতি আছে, মেঘনা তথা তিতাসের পূর্বপ্রান্তে এত বড় বাড়ি আর কোথাও নেই। তাই দূর থেকে এই বাড়িটি ভারতের আগ্রার তাজমহলের মত মনে হত। প্রায় ৪৮০ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত তিনতলা জমিদার বাড়িটিতে প্রায় ৬০টি কক্ষ, রং মহল, দরবার হল, ধানের গোলা, গোয়ালঘর, রান্নার ঘর, নাচ ঘর, মল পুকুর, খেলার মাঠ, মন্দির ও সীমানা প্রাচীর রয়েছে। বিশাল আয়তনের বাড়িটির পুরো ভবনের কোথাও কোন রডের গাঁথুনি নেই। লাল ইট সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি ভবনের দু'পাশে দুটি সুউচ্চ গম্বুজ স্বগর্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করছে জমিদার বংশের ঐতিহ্যের কথা। দু’তলায় উঠার ৬ দিকে ৬টি সিঁড়ি ও তিন তলায় উঠার ২ দিকে ২টি সিঁড়ি রয়েছে। বাড়িটির পশ্চিম-উত্তর কোণে ৬টি বেড রুম এবং মল পুকুরের পূর্বপাড়ে ৪টি ও পশ্চিম পাড়ে ৪টি বেড রুম রয়েছে। বাড়ির পশ্চিম দিকে তিতাস নদীর পাড়ে পাকা ঘাটলার উত্তর দিকে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী ও দক্ষিণ দিকে গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরীর সমাধি মঠ রয়েছে। হরিপুর গ্রামে তিতাস নদীর পূর্বপ্রান্তে হরিপুর জমিদার বাড়ি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জনশ্রুতি আছে, এ বাড়িটিকে কেউ বলে রাজবাড়ি, বড়বাড়ি আবার কেউ বলে জমিদার বাড়ি। নাসিরনগর থেকে মাধবপুর যাওয়ার পথে উপজেলার শেষ সীমান্তে হরিপুর গ্রামের রাস্তার পশ্চিম পাশে তিতাস নদীর পাড়ে চোখে পড়ার মত দুই গম্বুজের তিনতলা সুবিশাল বাড়িটি। বাড়িটির পূর্ব পাশে নাসিরনগর-মাধবপুর সড়ক। বাকি দিকে তিতাস নদীর ফাঁকা জায়গা। অনেক বড় বারান্দা ডিঙিয়ে মূল বাড়ি। নান্দনিক স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত বাড়িটি সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির বাইরের অবয়বটি অবিকল রয়ে গেছে। কারুকাজ খচিত দেয়াল, স্তম্ভ ও কার্নিশ। সব কয়টি কক্ষেরই পুরানো সেই দরজা নেই। বর্তমানে বসবাসকারীরা সাধারণ মানের দরজা লাগিয়ে বসবাস করছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০টি পরিবার রয়েছে এখানে। বাড়িটি দেখার জন্য এখনও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক দর্শণার্থী বনভোজনে আসেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে তিতাসের বুকে যখন পানি থৈ থৈ করে তখন বাড়িটির সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়। বাড়িটিতে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি কখনো। দিনকে দিন বাড়িটি সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। এক সময়ে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা হরিপুর জমিদার বাড়ির নদীর ঘাট থেকেই শুরু হত। এ বাড়িতে পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি মধুমালতি, ঘেটুপুত্র কমলা এবং নাইওরীসহ অনেক ছবি চিত্রায়িত হয়েছে। আশার বাণী হলো, প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটির সংস্কার কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। সংস্কার কার্য সম্পন্ন হলে বাড়িটি তার পূর্ব রুপ ফিরে পাবে। ফলে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। -এএএল/এমএ |