বিশ্বজুড়ে সকল দেশ আজ বিশ্বায়নের ধারণার দ্বারপাশে আবদ্ধ। বাণিজ্য, রাজনীতি, অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রগুলোই এখন এই ধারণা দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছে। বাইরের অংশীদারদের প্রভাব বলয়ের বাইরে থেকে এখন আর কোনো প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই আঞ্চলিক সহযোগিতা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল এন্ড ইকোনোমিক কোঅপারেশন’ বা বিমসটেক দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশের জন্য এমনই একটি ফোরাম। ২০১৬ সালের সার্ক সম্মেলন ভারত ও পাকিস্তানের কলহের কারণে বাতিল হয়ে যাওয়ার দরুণ সাম্প্রতিক সময়ে বিমসটেক একটি সহযোগিতা সংস্থা হিসাবে বেশ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বেশ কিছু সর্বজনীন স্বার্থ থাকার কারণে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলি আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র স্থাপনের মাধ্যমে ব্যাপক উপকৃত হতে পারে।
ব্যাংকক ঘোষণার মাধ্যমে ১৯৯৭ সালে বিমসটেক গঠিত হয়। এর সাত সদস্যের মধ্যে বাংলাদেশ, ভূটান, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ এশিয়ার এবং মায়ানমার ও থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্তর্ভূক্ত। প্রাথমিকভাবে এই অর্থনৈতিক গোষ্ঠীটি মাত্র চারজন সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত হয়েছিল। তখন এই রাষ্ট্রগুলোর নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে গোষ্ঠীটির নাম ছিল বিসট-এক (বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড ইকোনোমিক কোঅপারেশন)। ২০০২ সালের ২২ শে ডিসেম্বর ব্যাংককে একটি বিশেষ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মায়ানমারকে অন্তর্ভূক্ত করার পর এই গ্রুপটির নতুন নামকরণ করা হয় বিমসট-এক (বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা এন্ড থাইল্যান্ড ইকোনোমিক কোঅপারেশন)। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে থাইল্যান্ডে ৬ষ্ঠ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে নেপাল ও ভূটানকে অন্তর্ভূক্ত করার পরে এই ফোরামের নাম হয় ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল এন্ড ইকোনোমিক কোঅপারেশন’ (বিমসটেক)।
এই আঞ্চলিক গোষ্ঠীটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি সেতু বন্ধন রচিত করে। সার্ক ও আসিয়ান সদস্যদের মধ্যে আন্তঃআঞ্চলিক সহযোগিতার একটি মঞ্চ বিমসটেকের মাধ্যমে উদ্ভব হয়। প্রায় দেড় বিলিয়ন মানুষ বিমসটেক এলাকায় বসবাস করে যা বিশ্ব জনগোষ্ঠীর প্রায় ২২ শতাংশ। এই অঞ্চলের সম্মিলিত জিডিপি প্রায় ২.৭ ট্রিলিয়ন যা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে ফুটিয়ে তোলে। গত পাঁচ বছরে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলি গড়ে ৬.৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়।
বিমসটেক আসলে একটি সেক্টর ভিত্তিক সহযোগিতা সংগঠন এবং এদিক থেকে এটি অন্য অনেক আঞ্চলিক গোষ্ঠীর তুলনায় ব্যতিক্রম। প্রথম দিকে এটি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, জ্বালানি, পরিবহন, পর্যটন ও মৎস্যসম্পদÑ এই ছয়টি খাত নিয়ে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে আরও ৯টি খাতের অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে এর পরিধি বিস্তৃত হয়। এ খাতগুলো হলো কৃষি, জনস্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন, সন্ত্রাস বিরোধ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং জলবায়ু পরিবর্তন। এটি সমুদ্র অর্থনীতি ও পার্বত্য অর্থনীতির ওপরেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
সম্প্রতি ২০১৮ সালের আগস্ট ৩০-৩১ তারিখে নেপালের কাঠমান্ডুতে ৪র্থ বিমসটেক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সমস্ত সদস্য দেশগুলির রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানেরা এতে অংশগ্রহণ করে। কাঠমান্ডু ঘোষণার মধ্যদিয়ে এ সম্মেলনটি শেষ হয়। এতে এই অঞ্চলের সমষ্টিগত উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক একীভূতকরণের নিমিত্তে বহুমাত্রিক সংযোগকে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে গুরুত্বারোপ করা হয়। এতে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে তুলে ধরা হয়।
এই ঘোষণার মাধ্যমে বিমসটেক অঞ্চলে বিভিন্ন কারিগরি ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার মাধ্যমে বিমসটেক সচিবালয়ের কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হয়। বিমসটেক গ্রিড আন্তঃসংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ শক্তি সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলি একটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর করে।
বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নেতারা সকল ধরনের ও অভিব্যক্তির সন্ত্রাসবাদের দৃঢ়ভাবে নিন্দা করেন। তারা জোর দিয়ে ব্যক্ত করেন যে, কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমেরই কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারেনা। তারা নিশ্চিত করেন যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শুধুমাত্র সন্ত্রাসী, সন্ত্রাসী সংগঠন ও নেটওয়ার্ককেই নয় বরং সে সকল রাষ্ট্র বা অরাষ্ট্রীয় সংগঠন এবং ব্যক্তি যারা সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত, সমর্থন বা অর্থায়ন করে অথবা সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে নিরাপত্তা প্রদান করে এবং ভুলভাবে সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর চিন্তাধারাকে প্রশংসা করে তাদেরকেও চিহ্নিত ও দায়ী করা হবে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামগুলো প্রায়শই কিছু সদস্যের দৃঢ় প্রচেষ্টা ও অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও সদস্যদের মধ্যে অন্তঃকলহ থাকার কারণে ব্যর্থ হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় কলহ এই ফোরামগুলো থেকে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে অনেক বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে দ্বন্দ্ব দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যত সহযোগিতাপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে। যদি সমস্যাটি সমাধানের কোনো চেষ্টা না করা হয়, তবে একজন সদস্যের স্বার্থ উপেক্ষা করার প্রশ্ন উঠতে পারে। এই বছরের বিমসটেক সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচিত হবে বলে আশা করা হয়েছিল কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হয়নি।
সদস্য রাষ্ট্রগুলো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করার পরেও মায়ানমারের রোহিঙ্গা ইস্যুটি কেন আলোচনার টেবিলে উঠলো না তা নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা আগ্রহী হয়ে ওঠে। এর জবাবে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গ্যায়ালী বলেন যে, বিমসটেক প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিলো সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সর্বজনীন স্বার্থ ও উদ্বেগ নিয়ে কাজ করা এবং তাই কোনো একটি বিশেষ দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বা কোনো দুটি দেশের মধ্যকার বিরোধ সামিটে প্রবেশ করেনি। কিন্তু এটি ছিল একটি জ্বলন্ত সমস্যা উপেক্ষা করার চরম দৃষ্টান্ত এবং একে একজন সদস্যের বা সর্বজনীন স্বার্থ না রক্ষা করার পন্থা হিসেবে দেখা যেতে পারে।
রাজনৈতিক শান্তি ব্যতীত আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলো সফল হওয়া খুবই কঠিন। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাণিজ্য ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোই যথেষ্ট নয়। যদি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যা অথবা আসাম-ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের ভেতর মানবিক সমস্যা বা বাংলাদেশ-মায়ানমারের ভেতর রোহিঙ্গা সমস্যার মতবিরোধগুলো সঠিকভাবে মীমাংসা করার উদ্যোগ না নেওয়া হয় তবে বিমসটেকের সাফল্য বাধাগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশ অবশ্যই এবিষয়গুলোতে অযৌক্তিক আচরণ না করার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করে আসছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা বজায় রাখতে মানবিক প্রেক্ষাপট অত্যাবশ্যকীয়। সীমান্তে অস্ত্রের ব্যবহার, ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে সক্ষম অস্ত্রের ব্যবহার বা দূষণক্ষম অস্ত্রের ব্যবহার আঞ্চলিক সহযোগীদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সম্পূর্ণ রুপে পরিহার করতে হবে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে ধারণ না করলে সার্কের মতোই বিমসটেকও ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হতে পারে।
ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত বিমসটেক তার লক্ষ্যগুলো পূরণে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে এবং এর কিছু কারণও রয়েছে। যেমন- বিমসটেক সদস্যদের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ফোরামের সদস্যপদ গ্রহণ করে বিভিন্ন স্তরে সহযোগীতাকে উৎসাহিত করা; রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব; সংযোগের অভাব; আন্তঃআঞ্চলিক বিনিয়োগের স্বল্প প্রবৃদ্ধি; পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব যা খরচ ও সময় বাড়িয়ে বাণিজ্যের জন্য বাধা সৃষ্টি করে ইত্যাদি। তদুপরি, আঞ্চলিক ফোরামগুলোতে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ অভ্যন্তরীণ নীতির সঙ্গে প্রচুর দ্বন্দের সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে সামগ্রিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য এসব ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সমন্বয় সাধন করা অতীব জরুরী।
সমষ্টিগত লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সঙ্গে সদস্যদের মাঝে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সৃষ্টিতেও বিমসটেক সহায়তা করে যাচ্ছে। বিমসটেক প্রতিষ্ঠায় পরে বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক লাভবান হয়েছে। ১৯৯৪-৯৫ সালে বিমসটেক প্রতিষ্ঠার আগে এর বর্তমান সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ছিল মাত্র ২,৩৯০ মিলিয়ন টাকা যা বিমসটেক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে ২০০৭ সালে ২১,৬০০ মিলিয়ন টাকায় এসে দাঁড়ায়। বিমসটেক প্রতিষ্ঠার আগে এর সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সমগ্র বৈশ্বিক বাণিজ্যের মাত্র ১.৫ শতাংশ ছিল যা পরবর্তীতে ২.৬ শতাংশ হয়। এছাড়াও ভারত ও নেপালের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।
আঞ্চলিক বাণিজ্য অথবা অর্থনীতিতে নতুন সাফল্য যোগ করার জন্য বিমসটেক সদস্যদের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হওয়া প্রয়োজন। বিশেষত ভারতের প্রভাবের কারণে এ ধরনের চুক্তি এখনো কার্যকর হয়নি যদিও কিছু ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক অগ্রাধিকার ভিত্তিক কিছু নিয়ম কার্যকর হয়ে থাকে কিন্তু কঠিন আইন ও মানদন্ডের মাধ্যমে নানাবিধ বাধা তৈরি করা হয়। যেমন: কিছু আঞ্চলিক সহযোগী যেমন ভারতের মাত্রাতিরিক্ত মান নিয়ন্ত্রণ। অন্তত মৌলিক চাহিদা পূরণকারী পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে আমাদের আরও সহজ শর্ত আরোপ করা উচিত। সদস্য দেশগুলোর মুদ্রার মূল্যায়ন অত্যন্ত কাছাকাছি হওয়ার কারণে বিমসটেকেরও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের মতো অনেক অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা রয়েছে। তার ওপরে, যদি এই সাতটি দেশের মধ্যে নাগরিকদের ভিসাবিহীন চলাচল নিশ্চিত করা যায়, তবে সাধারণ মানুষও এই সমন্বিত আঞ্চলিক সহযোগীতার বিষয়টি আরও গভীরভাবে অনুধাবণ করতে পারবে। এখানে সাংস্কৃতিকভাবে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যথেষ্ট মিল থাকার কারণে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক সহযোগীতার সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা সম্ভব যদি সকলের সৎ অভিপ্রায় থাকে।
বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের নিজস্ব বিভিন্ন উদ্বেগের কারণে কখনো কখনো সর্বজনীন লক্ষ্যগুলো গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। যেমন- ভারত বিমসটেককে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকে কারণ এটি ভারতকে তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণে এবং একই সঙ্গে চীনকেও যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। তার ওপর এই ফোরামে ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের অনুপস্থিতি ভারতকে এই অঞ্চলের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী করে তুলেছে। বিমসটেক প্রকৃত পক্ষে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত যে দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তার সবগুলোকে একত্রিত করে।
ভারতের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সকল দেশগুলোর ওপরে নিয়ন্ত্রণ হারনোটা এই অঞ্চলে তাদের আধিপত্যের জন্য একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অর্থনৈতিক সুবিধাজনক অবস্থান ও কূটনীতিকে ব্যবহার করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিজেদের স্বার্থকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভারতের যেই নীতি তার সঙ্গে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্য সদস্যদের জন্যও এমন কিছু উদ্বেগ ও সমস্যা রয়েছে যেগুলো তারা বিমসটেকের মাধ্যমে সমাধান করতে চায়। কিন্তু স্ব-সচেতন রাষ্ট্রগুলোর উত্থান, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের সদ্যজাত ভীতির দরুন সীমান্ত প্রহরা জোরদারকরণ, অপ্রতুল সম্পদের জন্য ক্রমবর্ধমান সংগ্রাম ইত্যাদি সর্বজনীন কল্যাণে বৈশ্বিক সহায়তা লাভ করাকে অত্যন্ত জটিল বিষয়ে পরিণত করেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগীতার স্বপ্ন দেখেছিলেন যা তার দুরদর্শী নেতৃত্বেরই প্রতিফলন। আজকের পৃথিবীতে যখন বিভিন্ন অর্থনীতির কার্যকারীতা একে অপরের উপর নির্ভরশীল তখন বাংলাদেশকে অবশ্যই শক্ত দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহযোগীতার ক্ষেত্র স্থাপন করতে হবে। সমষ্টিগত কল্যাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার পাশাপাশি আমাদেরকে সতর্কতার সঙ্গে আঞ্চলিক উদ্যোগগুলোকে নিজেদের স্বার্থে পরিচালনা করতে হবে। আমাদের আঞ্চলিক বন্ধনগুলোকে যথার্থভাবে ব্যবহার করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে কারণ বর্তমান পৃথিবীতে বাক্সবন্দী চিন্তাধারা এখন অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমান সময়ের উন্নয়নের ধারাবাহিকতার সঙ্গে যদি এই বিষয়টিও যুক্ত হয় তবে জাতিগতভাবে আমাদের অগ্রগতি হবে দ্রুত ও বাধাহীন। এজন্য আমাদের সরকার ও জনগণকে এখনই কাজ শুরু করতে হবে।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, মোহাম্মদী নিউজ এজেন্সি (এমএনএ); সম্পাদক, কিশোর বাংলা এবং ভাইস চেয়ারম্যান, ডেমোক্রেসী রিসার্চ সেন্টার (ডিআরসি)।