আজকের পৃথিবীতে সংবাদের হাজারও অনলাইন উৎস ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে মিথ্যা সংবাদ, যা এক ধরনের গুজব বা অপপ্রচারণা সেটি একটি বিপদজনক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের জীবন যাত্রার উন্নয়নে প্রযুক্তিকে একটি আর্শীবাদ হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মানুষেরা যেভাবে ভুয়া সংবাদের মতন বিষয়গুলো দ্বারা প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা আমাদেরকে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশে এরকম বেশকিছু সমস্যার সম্মুখীন আমরা বিগত কিছু দিনে হয়েছি। যার ফলে আমাদের সরকারকে এ সমস্যা মোকাবেলায় কঠোর কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে। এই ধরনের সংবাদে অজ্ঞভাবে বিশ্বাস করার ও প্রতিক্রিয়া দেখাবার আমাদের যেই অন্তর্নিহিত প্রস্তুতি সেখানেই এই সমস্যার মূল নিহিত এবং অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এটি এখনো একটি দ্রুত বর্ধমান সমস্যা।
মিথ্যা সংবাদ সাধারণত তিন রূপে আসতে পারে। প্রথমত, সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য, ছবি বা ভিডিও যেটি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রস্তুত ও প্রচার করা হয়। দ্বিতীয়ত, কোন পুরাতন তথ্য, ছবি বা ভিডিও মানুষকে ধোঁকা দেবার উদ্দেশ্যে নতুনভাবে শেয়ার করা। তৃতীয়ত, কোনো ব্যঙ্গচিত্র বা ব্যঙ্গ কবিতা যা হয়তো কোনো ক্ষতির কারণ নয় কিন্তু মানুষকে বোকা বানানোর নিমিত্তে ব্যবহার করা হয়। এর সবগুলোই কোনো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অথবা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলের স্বার্থে মানুষের আবেগকে উথলে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ভুয়া সংবাদ প্রস্তুতকারীরা অর্থনৈতিকভাবেও বেশ লাভবান হয় কারণ, বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, সত্য সংবাদের থেকে এই ভুয়া সংবাদগুলো অনেক বেশি বার দেখা ও শেয়ার করা হয়। আশঙ্কার ব্যাপার হল এই যে, ব্যবহারকারীরা এ ধরনের ভুয়া পোস্টগুলোকে সনাক্ত করতে পারার পরেও সাধারণত এগুলোকে দেখে, পড়ে এবং শেয়ার করে।
সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময়ে বহু সংখ্যক ভুয়া খবর ও পোস্টের ছড়াছড়ি পরিলক্ষিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো এ আন্দোলনে বিশাল ভূমিকা রেখেছে এবং শেষের দিকে মাত্রাহীন অপব্যবহারের দরুণ এগুলো অত্যন্ত কুৎসিতরূপ ধারণ করে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ে গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইমরান এইচ সরকার একজন আন্দোলনত ছাত্রের মৃত্যুর ব্যাপারে একটি ভুয়া সংবাদ পোস্ট করে। তার এই পোস্ট আন্দোলনকারীদেরকে ক্ষুব্ধ করে তোলে এবং এর ফলে উপাচার্যের বাসভবনে বর্বোরোচিত হামলা হয়। এছাড়াও নারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের গ্রেফতার এ ধরনের অসংখ্য ভুয়া খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো এবং অনলাইন সংবাদ পোর্টালগুলো ভরে গিয়েছিল। অনেক খবর এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল যা অবিশ্বাস করা খুব কঠিন। আবার অনেকগুলো খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য ছিল না কিন্তু তার পরেও মানুষের আবেগকে মারাত্মকভাবে নাড়া দিয়েছিল। আর এর মাধ্যমে বিভিন্ন পক্ষ রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত হয়।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের সময়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি বিশাল ভূমিকা পালন করে। পুলিশ ও সরকারের বিরুদ্ধে অনেক অবাঞ্চিত বক্তব্যসহ ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক ছাত্রছাত্রীদের ছবির পোস্ট আমরা এ সময় দেখেছি। যার প্রায় সবগুলোই ছিল বানোয়াট এবং ফটোশপ দ্বারা পরিবর্তন করা। যদিও অবিশ্বাস্য কিন্তু এই পোস্টগুলি যেন আমাদের অজ্ঞতাকে প্রমাণ করতেই লাখোবার শেয়ার করা হয়েছিল। আন্দোলনের শেষভাগে সরকারি পার্টি অফিসে আটকে রেখে ছাত্রদেরকে নির্যাতন এবং ছাত্রীদের ধর্ষণের মিথ্যা সংবাদ ভিডিও পোস্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বাঁচাবার আকুতি জানিয়ে একজন ছাত্রীর এবং একজন প্রথিতযশা অভিনেত্রীর দুটি ফেসবুক ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। যার ফলে সেই পার্টি অফিসে ছাত্ররা হামলা করে বসে। কিন্তু খবরটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা। তা সত্ত্বেও অনেকে এটি বিশ্বাস করেছিল এবং আন্দোলনকারীদের ও তাদের সমর্থণকারীদের ভেতরে প্রচন্ড ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এগুলো আসলে একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে একটি সহিংস রূপ প্রদান করার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
এ ধরনের ভুয়া পোস্টের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িক হামলা বাংলাদেশে বর্তমানে একটি প্রচলিত বিষয়। ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২ তে কক্সবাজারের রামুতে স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপরে যে হামলা হয়েছিল সেটিই এ ধরনের প্রথম হামলা। কোরানের অবমাননা করে একটি ভুয়া বৌদ্ধ নামের ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে এই হামলা হয়। হামলাকারীরা বৌদ্ধদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মন্দির ও আশ্রম ধ্বংস করে দেয়। বাংলাদেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য এটি একটি লাল সংকেত প্রদান করে।
২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবরে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নারিসনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর একইরকম আরেকটি হামলার ঘটনা ঘটে। রসরাজ দাস নামক একজন স্থানীয় জেলের একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ঐ ঘটনা ঘটে। ঐ পোস্টে দেখা যায় যে, হিন্দু দেবতা শিব মুসলমানদের পবিত্র কাবা শরিফের উপরে বসে আছে। এই ইসলামের অবমাননাকারী পোস্টটি সত্যিকার অর্থে ফটোশপের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু এরই জের ধরে উপরোক্ত দিনে ১৫০ থেকে ২০০ সহিংস ব্যক্তি প্রায় ১৫টি হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে দেয় এবং শতশত স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি আক্রমণ করে। এই আক্রমণের ঘটনার আগেই পুলিশ রসরাজকে গ্রেফতার করে। সে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানায় যে তার ফেসবুক একাউন্টটি হ্যাক হয়ে গিয়েছিল। ঐ ছবিটি প্রথম ‘নয়ন চ্যাটার্জী’ নামক একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ছাড়া হয়েছিল যেটি আসলে ছাত্রশিবির কর্মীদের দ্বারা হিন্দুদের বিরুদ্ধে ঘৃণার সঞ্চার করতে ব্যবহৃত হতো।
রংপুরে ১০ নভেম্বর ২০১৭ তে হামলাকারীরা বেশ কিছু হিন্দু ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং মূল্যবান গয়না ও টাকা পয়সা লুট করে নেয়। ‘টিটু রায়’ নামে এক হিন্দু ব্যক্তি ইসলামকে অবমাননা করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করলে এ হামলার ঘটনা ঘটে। যদিও সে বহু বছর ধরে ঐ এলাকায় বাস করছিলোনা এবং সে লিখতে অথবা পড়তেও জানতো না। একই ধরনের ঘটনা ২০১৪ সালে কুমিল্লায় এবং ২০১৩ সালে পাবনাতেও ঘটে।
২০১৩ সালের মার্চে একটি গুজব ছড়ায় যে দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত-ই-ইসলামের নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ছবি চাঁদে দেখা গেছে। এই গুজবটি বগুড়ার মানুষের ভাবাবেগকে আন্দোলিত করে এবং তারা স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে হামলা করে বসে। তাতে ১৪ জন নিহতসহ শতশত লোক আহত হয়। এটি আসলে জামাত শিবির কর্মীদের একটি অপপ্রচারণা ছিল এবং এই গুজবকে তারা সহিংসতা ছড়াবার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
ভুয়া খবর ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে মানুষজনকে হয়রানি করা বা হুমকি প্রদান করা আরেকটি গুরুতর সমস্যা। এ ধরনের কার্যকলাপের মাধ্যমে বহু লোকের সম্মান নষ্ট করা হয়েছে। নারীরা এর সব চাইতে বড় শিকার। এ ধরনের সংবাদের রগরগে বৈশিষ্ট্যটি কারো সম্মানহানিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। এটি যেকোনো দিক থেকে বিবেচনা করলে অত্যন্ত গুরুতর একটি অপরাধ।
বাংলাদেশ ভুয়া সংবাদের নানাবিধ খারাপ দিকগুলোর ভেতর দিয়ে বর্তমানে যাচ্ছে যার বেশিরভাগই আসলে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি বর্তমান সময়ে আমাদের জন্য এক বিশাল মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি আসলে একটি বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে এবং এর হাজারও উদাহরণ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘ইরমা’২০১৭ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানে। মার্কিন ওয়েবসাইট ‘ইনফোওয়ার্স’থেকে এলেক্স জোনস এটিকে ষষ্ঠ শ্রেণির ঘূর্ণিঝড় বলে প্রচার করেন যা ফেসবুকে তার ৭,৫০,০০০ এরও বেশি ফলোয়ার এর মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু অবাক বিষয় হল যে, ষষ্ঠ শ্রেণির ঘূর্ণিঝড় বলে আসলে কিছু নেই। এটি সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা সংবাদ ছিল।
২০১৭ সালের ২২ মার্চ লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজে একটি সন্ত্রাসী হামলা হয় যাতে ছয়জন নিহত ও পঞ্চাশজন আহত হয়। হামলার পর পরই ঘটনাস্থলে মোবাইল ফোনে আলাপরত একজন হিজাব পরিহিত তরুণীর ছবি সবখানে প্রচার করা হয়। সেখানে তাকে একজন মুসলিম তরুণী হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আক্রান্ত ব্যক্তিদের যন্ত্রণায় অবিচলিত বলে দাবি করা হয়। পরবর্তীতে সে মুসলিম তরুণী একটি বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে জানাতে বাধ্য হয় যে, ঐ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পরিণাম প্রত্যক্ষ করে সে কতটা ভেঙ্গে পড়েছিল। যে একাউন্ট থেকে প্রথম ঐ ছবিটিকে টুইট করা হয়েছিল সেটি সে বছরেরই নভেম্বর মাসে টুইটার রাশিয়ান বট হিসেবে চিহ্নিত করে বাতিল করে দেয়।
২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চলাকালীন হিলারি ক্লিন্টনের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার জন পডেস্টাকে ঘিরে বিখ্যাত ‘পিজ্জাগেট’ষড়যন্ত্র রচিত হয়। পডেস্টার ব্যক্তিগত ইমেইল একাউন্টটি হ্যাক হয়ে যায় এবং তার ইমেইলগুলো ধীরে ধীরে উইকিলিকস প্রকাশ করে দেয়। পরবর্তীতে মিথ্যাভাবে দাবি করা হয় যে সেই ইমেইলগুলোতে মার্কিন বেশকিছু রেস্টুরেন্টকে কেন্দ্র করে ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত মানবপাচার সংগঠনের ব্যাপারে বেশকিছু কোডকৃত ম্যাসেজ রয়েছে। সেখানে বিশেষ করে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত কমেট পিং পং রেস্টুরেন্টে পরিচালিত শিশু যৌনচক্রের উল্লেখ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নর্থ ক্যারোলিনা থেকে এক ব্যক্তি সেই রেস্টুরেন্টে বিষয়টি অনুসন্ধান করতে যায় এবং এক পর্যায়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে রাইফেল থেকে গুলি চালায়। এছাড়াও সেই রেস্টুরেন্টের মালিক ও কর্মচারীরা বেশ কয়েকবার হত্যার হুমকি পায়। ঐ লোকটি বিশ্বাস করেছিল যে, হিলারি ক্লিন্টন ঐ কমেট পিং পং থেকে একটি শিশু পাচার চক্র পরিচালনা করতো। এই ভুয়া খবরটি রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
জাপানে বিভিন্ন সময়ে ভূমিকম্পের পরে মিথ্যা খবর এবং গুজবের মাধ্যমে কলঙ্কজনক সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ঘটানো হয়েছে। বিশেষত ওসাকা শহরে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে। ১৯২৩ সালের গ্রেট কান্তো ভূমিকম্প টোকিও শহর ও এর আশেপাশের এলাকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করার পরে মিথ্যা গুজবের ভিত্তিতে জাপানি নাগরিকেরা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তারা কোরিয়ান ও চাইনিজদের ওপর গণহত্যা চালায়। সে সময়ে কোনো ইন্টারনেট না থাকা সত্ত্বেও এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে গত তিন দশকে বেশ কয়েকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
গত মার্কিন সাধারণ নির্বাচনে ভুয়া খবরের প্রচুর ব্যবহার দেখা যায়। এর মধ্যে ‘ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা স্ক্যান্ডাল’ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এখানে যে সকল বিষয় ভোটারদেরকে চিন্তিত করে তুলতে পারে সেগুলো খুঁজে বের করার জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করা হয়। এগুলো খুঁজে বের করার পর ভোটের ফলাফল নিজের ক্লায়েন্টের পক্ষে আনার জন্য বিভিন্ন ভুয়া খবর চিহ্নিত ভোটারদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি বিনা অনুমতিতে ফেসবুক থেকে লাখ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য যাচাই করে তাদের পদ্ধতিটিকে শক্তিশালী ও কার্যকর তোলে।
এটি সম্পূর্ণরূপে প্রমাণিত যে ইন্টারনেট, অনলাইন নিউজ সাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বে ভুয়া খবর বা গুজব যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে একটি বিশাল সমস্যায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু তারপরেও ভুয়া খবর চিহ্নিত করার কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যেমন, সর্বজন স্বীকৃত মিডিয়া হাউজগুলি ছাড়া কারো প্রচারিত সংবাদ বিশ্বাস না করা, কোনো একটি ঘটনা চলতে থাকা সময়ে কোনো পোস্ট প্রকাশ হলে তা যেই প্রোফাইল থেকে প্রকাশ হয়েছে তা তৈরির তারিখ পরীক্ষা করা, একজন ভুয়া খবর প্রচারকারীর উদ্দেশ্য বোঝার জন্য তার পূর্বের পোস্টগুলি যাচাই করা এবং সবচেয়ে জরুরি হল একটি ভুয়া খবর প্রচারের ফলে যে প্রভাব পড়বে তা পূর্বেই বিবেচনা করে তার পরে খবরটি শেয়ার করা। একজন নাগরিকের সম্মান রক্ষার্থে তাকে নিয়ে কোনো নেতিবাচক পোস্ট আমাদের কখনোই ছড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়।
আমরা যদি আমাদের বিচার বিবেচনা ও নীতির ব্যবহার করি তাহলে আমরা ভুয়া খবর, গুজব ও অপপ্রচারণার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব। যথার্থ শিক্ষার অভাবের সঙ্গে সঙ্গে নীতিগতভাবে দুর্বল শিক্ষিত লোকেদের কারণে বারে বারে আমাদেরকে এ ধরনের ঘটনার স্বীকার হতে হচ্ছে। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ সমস্যাটিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে কিন্তু শুধুমাত্র কয়েকজনকে খুঁজে বের করাটা আমাদেরকে খুব বেশি সাহায্য করবে না। আমাদের নাগরিকদেরকে জাগ্রত হতে হবে। প্রত্যেক পরিবারের গুরুজনকে সেই পরিবারের অন্য সদস্যদের নৈতিকতা তৈরি করতে কাজ করতে হবে। এটি কোনো আইনি লড়াই নয় বরং একটি সামাজিক লড়াই। ভবিষ্যতের মারাত্মক নেতিবাচক ঘটনা এড়াবার জন্য এখনই আমাদের এই সমস্যা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য সচেতন প্রচেষ্টা চালানো অপরিহার্য।
লেখক: প্রধান সম্পাদক, মোহাম্মদী নিউজ এজেন্সি (এমএনএ); সম্পাদক, কিশোর বাংলা এবং ভাইস চেয়ারম্যান, ডেমোক্রেসী রিসার্চ সেন্টার (ডিআরসি)।