মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের নতুন বাজারের মাছ বাজারের পাশে বানানো হয়েছে ছোট্ট একটি ঘর। সেখানে টেবিলের ওপর সাজানো শাক-সবজি, ডিম, বিস্কুট, কেক, সেমাই, তেল, চাল, ডালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য। পাশেই এলাকার প্রধান বাজার থাকলেও বাজারের অন্যান্য দোকানের চেয়ে দামে কম হওয়ায় ক্রেতারা ভিড় করছেন এখানে।
শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সদস্য মহসিন মিয়ার উদ্যোগে গত ৪ নভেম্বর থেকে চালু হয়েছে এই বাজার। সাবেক মেয়রের আত্মীয়-স্বজন ও বিএনপির নেতাকর্মীরা এই বাজারে স্বেচ্ছাশ্রমে সময় দিয়ে বিক্রেতার ভূমিকা পালন করছেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এই বাজার খোলা থাকে।
রোববার বিক্রয় কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতারা ভিড় করে এই বিক্রয় কেন্দ্র থেকে লাল শাক, টমেটো, চাল, তেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, লেবু, মুলা, পেঁপে, লতা, লাউ, ডিম, আলু, প্যাকেট আটা, লবণ, বিস্কুট, কেক, তেল ইত্যাদি নিত্যপণ্য কিনছেন।
উদ্যোক্তা মহসিন মিয়া বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ক্রেতাদের আওতায় না আসবে, বাজার সিন্ডিকেট চলমান থাকবে ততদিন পর্যন্ত এই বিনা লাভের পণ্যের বাজার চলমান থাকবে।’
সুমাইয়া বেগম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে ডিমের হালি ৫২-৫৫ টাকা, এখানে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। বিস্কুট, কেক, তেল- সবকিছুই এখানে কম টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আমরা যারা স্বল্প আয়ের মানুষ, তাদের জন্য এই দোকান খুবই কাজে আসছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসই এখানে পাওয়া যাচ্ছে।’
বিনা লাভের এই বিক্রয় কেন্দ্রে বাজার করতে আসা মো. রবি উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে একটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দামে। এখানে এসে সেই একই মাপের লাউ কিনলাম ৪০ টাকায়। অন্য শাক-সবজির দামও প্রায় এ রকমই পার্থক্য বাজারের সঙ্গে। আমাদের সাধারণ মানুষের বড় উপকার হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই দোকানের সঙ্গে পাল্লা দিতে অনেক দোকানিই এখন জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে আনছেন। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, সরকারের পক্ষ থেকেও যেন এ ধরনের একটি দোকান সারা বছর থাকে। তাহলে ক্রেতারা ন্যায্যমূল্যে জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।’
বিক্রেতার দায়িত্বে থাকা শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা মীর এম এ সালাম বলেন, ‘আমাদের সাবেক মেয়র সাহেব যখন এই উদ্যোগের কথা বললেন, আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা সবাই এই উদ্যোগে শামিল হয়েছি। আমরা খুব ভোরে সরকারি কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছি। সে জন্য আমরা কৃষকদের কাছ থেকে কেনা মূল্যেই বিক্রি করতে পারছি। ক্রেতারাও খুব আগ্রহ নিয়ে কিনছেন। যার যতটুকু প্রয়োজন, নিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের এই দোকানের মূল্য তালিকা দেখে এখন বাজারের অন্য দোকানিরাও দাম কমিয়ে আনছেন। আমরা মনে করি, এভাবে আমাদের দোকান চালু থাকলে বাজারের সিন্ডিকেট সহজেই ভেঙে যাবে। সাধারণ মানুষ ন্যায্যমূল্যে জিনিস কিনতে পারবেন।’
এই বিক্রয় কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মহসিন মিয়া বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র ছিলাম। সব সময় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আমি সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আমার আত্মীয়-স্বজন ও নেতাকর্মীদের নিয়ে এই বাজারের উদ্যোগ নিয়েছি। সারাদেশে বাজারে সিন্ডিকেট করে অসাধু ব্যবসায়ীরা নৈরাজ্য করে চলছেন। বর্তমান সরকারও অসাধু ব্যবসায়ীদের নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কাজ করছে। আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আহ্বানে আমি আমার নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয়-স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে পাইকারি মূল্যে খুচরা ক্রেতাদের জন্য নিত্যপণ্য বিক্রয় কেন্দ্র চালু করেছি। আমার একটাই লক্ষ্য, নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখি, একজন কৃষক অনেক কষ্ট করে ফসল ফলান, সেই ফসল আড়তদাররা কম টাকায় কিনে অধিক মুনাফায় পাইকারি বিক্রেতার কাছে বিক্রি করেন। সেই পাইকার আবার খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। যখন একজন ক্রেতা খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে পণ্য কেনেন, সেটা অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়। আমরা সরাসরি কৃষক ও ক্রেতার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমার ভাইয়ের একটি পোলট্রি ফার্ম আছে, সেখান থেকে কম দামে ডিম কিনে ওই দামেই বিক্রি করছি। আমার একটি ফ্যাক্টরি আছে, সেখান থেকে উৎপাদন খরচ রেখে কোনো লাভ ছাড়াই সব পণ্য খুচরা বিক্রি করছি। সাধারণ মানুষ খুশি হচ্ছেন, এটাই আমার বড় পাওয়া।’
আরএ/এমএ