সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সবজি ও মুরগির দাম কমেছে। তবে কমেনি পেঁয়াজ ও আলুর দাম। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলুর দাম গত সপ্তাহের চেয়ে ৫ টাকা এবং দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়েছে। যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ কেজি টাকা দরে। আলুর এ দাম চলতি বছরের সর্বোচ্চ। নতুন আলু ১২০ টাকা, বগুড়ার আলু ১০০ টাকা ও পুরান আলু ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারের বিক্রেতারা জানান, গত শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি আলু ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তার আগের সপ্তাহে আরও পাঁচ টাকা কম ছিল। অর্থাৎ দুই সপ্তাহ আগে আলুর দাম ছিল ৬০ টাকার মধ্যে।
পাইকারি বিক্রেতারা জানান, এখন পাইকারিতেই প্রতি কেজি আলু ৬২-৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে ৫৮-৬০ টাকা ছিল।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর মৌসুম এখন শেষের দিকে। প্রতি বছর এ সময় দাম বাড়ে। তবে এ বছর শুরু থেকে আলু চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এরপর এখন বেড়ে আরও অস্থিতিশীল হয়েছে।
ফিরোজ আলম নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, নতুন আলু না আসা পর্যন্ত দাম কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ বছর অতিবৃষ্টি ও বন্যায় দুই দফায় আলুর বীজ নষ্ট হওয়ায় সারা বছর আলুর দামে ছিল অস্থিতিশীলতা।
বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। তবে শিম ও কাঁচা মরিচ কেজিতে ৪০ টাকা কমে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ৩০ থেকে ৫০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ছোট সাইজের ৪০ টাকা পিস, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা ও জলপাই ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কচুরমুখী প্রতি কেজি ৭০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনেপাতা কেজিতে ১০০ টাকা কমে ২০০ টাকা, কাঁচা কলা হালি ৫০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা পিস ও মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
লাল শাক ১৫ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ২০ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা ও ডাটা শাক ৩০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
দেশি পেঁয়াজ ১৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ টাকা, কাঁচা আদা ১২০ টাকা, পুরান আদা ২৮০ টাকা, রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতারা আবু হানিফ জানান, শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ছে। আগামীতে দাম আরও কমে আসবে।
কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি সবজি কিনে এনে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন আলমগীর হোসেন। সবজির দামের বিষয় তিনি বলেন, এই সময় বেশির ভাগ সবজির মৌসুম শেষ হয়ে যায়, নতুন করে সবজি ওঠার অপেক্ষায় আছেন কৃষকরা। সেই কারণে সবজির দাম একটু বেশি যাচ্ছে। আবার একেবারে নতুন কিছু সবজি উঠেছে বাজারে সেগুলোর দামও কিছুটা বেশি। তবে শীত চলে আসলে, নতুন সব সবজি বাজারে উঠবে তখন সবজির দাম অনেক কমে যাবে। এখন বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম, সে কারণেই বাজার কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে।
রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, গেল কয়েক সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কিছুটা কমেছে। বাজারের সাত-আট ধরনের সবজির দাম ১০০ টাকা বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি। বাকি সব সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে। গেল কয়েক সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম কিছুটা কম।
এদিকে, গত সপ্তাহের তুলনায় সব ধরনের মুরগির দাম কমেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৪০ টাকা কমে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিড ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩০০ টাকা ও সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংস এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, হাঁসের ডিম ২৩০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে ইলিশ আসতে শুরু করায় মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারগুলোতে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১ হাজার ৫০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে প্রতিকেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১ হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকা, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকা, রুপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম মাছ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই ১ হাজার ২০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা ও কোরাল মাছ ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ৫ কেজি সোয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৬ থেকে ৮০ টাকা ও নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৮২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মহাখালী বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, রাজধানীতে শীত আসছে আসছে ভাব। এই সময় সবজির দাম থাকবে সবচেয়ে কম। অথচ বাজারে বেশির ভাগ সবজির দাম ১০০ টাকা বা তার ওপরে। কিছু সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে। কিছুদিন আগেও এর সবগুলোর দাম আরও বেশি ছিল। অথচ এই সময়ে এসে সবজির দাম অনেক কম থাকার কথা। এত দাম দিয়ে যদি সবজি কিনতে হয়, তাহলে অন্য পণ্য কিনবো কীভাবে?
রাজধানীর মালিবাগ বাজারের আরেক ক্রেতা সাইদুর রহমানও একই ধরনের অভিযোগ জানিয়ে বলেন, বিক্রেতারা বলছে আগের চেয়ে সবজির দাম কমেছে। হ্যাঁ কমেছে সেটা ১৪০/১৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় নেমেছে। কিছু সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এটাকে তো সবজির দাম কমেছে বলা যায় না। বরং সবজির দামের ঊর্ধ্বগতি। সাধারণ ক্রেতাদের বাজার দর নিয়ে এমন আপত্তি, ভোগান্তি তবুও বাজার মনিটরিংয়ের কোনো উদ্যোগ কখনোই দেখলাম না।
-এমএ