জাপানের মাউন্ট ফুজিতে গত ১৩০ বছরের মধ্যে চলতি বছর সবচেয়ে দেরিতে তুষারপাত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এ তুষারপাত হয়।
জাপানের স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ মাধ্যম সিনহুয়া।
সংবাদ মাধ্যম বলছে, প্রতি বছর মাউন্ট ফুজির তুষারে ঢেকে যাওয়ার ঘটনা সরকারি ভাবে ঘোষণা করে কোফুর স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জাপানি সংবাদপত্র আসাহি শিম্বুনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে মাউন্ট ফুজির শিখর তুষারে ঢেকে যায়।
আবহাওয়া অফিস বলছে, উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে এবার নির্ধারিত সময়ের পরে মাউন্ট ফুজির শিখর তুষারে ঢেকেছে। এর আগে ১৯৫৫ ও ২০১৬ সালে ২৬ অক্টোবর এটি হয়েছিল। এবার আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ১৮৯৪ সাল থেকে এই রেকর্ড রাখা শুরু হয়।
এদিকে, স্থানীয় সময় সকাল ৭টার দিকে শিযুওকা ও ইয়ামানাশি অঞ্চলের ৩ হাজার ৭৭৬ মিটার উঁচু পর্বতের চূড়ায় তাপমাত্রা মাইনাস ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। এর আগে বুধবার কিছু স্থান থেকে তুষারপাত দেখা গেছে। কিন্তু মেঘের কারণে অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় তুষারপাত নিশ্চিত করতে পারেনি ইয়ামানাশির দিকের কোফু পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র।
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, গত অক্টোবরে পর্বত চূড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়েছে। সাধারণত মাউন্ট ফুজিতে প্রথম তুষারপাত ০২ অক্টোবর হয়ে থাকে। তবে ২০২৩ সালের রেকর্ডে প্রথম তুষারপাত ০৫ অক্টোবর হতে দেখা গেছে।
সংবাদ মাধ্যম বলছে, সাধারণত প্রতি বছর অক্টোবরের শুরু থেকেই মাউন্ট ফুজির মাথায় তুষার জমতে শুরু করে। সংবাদসংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর ৫ অক্টোবরের মধ্যেই আগ্নেয়গিরির সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি বরফে ঢেকে গিয়েছিল।
কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। উষ্ণতার পারদ এতটাই বেড়েছে, নভেম্বরের মাঝামাঝিতেও মাউন্ট ফুজিতে তুষার দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন আবহাওয়াবিদেরা। তবে শেষ পর্যন্ত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের শেষে এসে মাউন্ট ফুটির শিখরে দেখা মিলল বরফের।
উল্লেখ্য, প্রশান্ত মহাসাগরের এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি এবারের গ্রীষ্মে রেকর্ড উষ্ণতা অনুভব করেছে। জাপানি আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এ বছরের জুন এবং আগস্টে তাপমাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। এই দুই মাসেই গড় উষ্ণতার থেকে তাপমাত্রা ছিল ১.৭৬ সেন্টিগ্রেড বেশি। সেপ্টেম্বরেও প্রত্যাশার চেয়ে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে বেশি গরম অনুভূত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মাউন্ট ফুজি জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হনশু দ্বীপে অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে সৌন্দর্যময় এই পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা ৩ হাজার ৭৭৬ মিটার (১২ হাজার ৩৮৯ ফুট)। জাপানিদের কাছে এটি শুধু একটি পর্বত নয়; জাতীয় ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীকও।
দর্শনীয় এই স্থানকে ২০১২ সালে জাপানের ১১তম বিশ্ব হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে ইউনাইটেড নেশনস এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশন (ইউনেস্কো)। প্রতি বছরই বহু পর্যটক সেখানে বেড়াতে যান। দুর্গম পথ ধরে হেঁটে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠেন।
-এমএ