বাংলাদেশে ইজতেমা একবার হবে, দুবার নয়। গাজীপুরের টঙ্গীতে ইজতেমার মাঠ ও ঢাকার কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের দিল্লির মাওলানা সাদপন্থীদের আর ঢুকতে দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক মহাসম্মেলনে এসব কথা বলেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ নেতারা। তাবলিগ কওমি মাদরাসা ও দ্বীন রক্ষার্থে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ। মহাসম্মেলনে দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরামরা বক্তব্য দেন।
আলেম-ওলামারা অভিযোগ করে বলেন, সাদপন্থীরা হচ্ছে আওয়ামী লীগের দোসর ও ভারতের ‘র’ এজেন্ট। ইসলামকে বিভক্ত করার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ চলে গেলেও তারা এখন বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে। যদি মাওলানা সাদকে দেশে এনে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হয়, তাহলে এই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান সেটা মেনে নেবে না। পাশাপাশি কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করে, এমন সম্মেলন আয়োজনের আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্বঘোষিত আমির সাদ ও তার অনুসারীরা বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা কোনোভাবেই সেটি হতে দেব না। তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র যেকোনো মূল্যে আমরা ব্যর্থ করে দেব।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলব, আপনারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। আমরা আপনাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। আপনাদের মনে রাখতে হবে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনেক ওলামায়ে কেরাম শাহাদাতবরণ করেছেন। আমরা শাপলা চত্বরে জীবন দিয়েছি। আওয়ামী জালিম সরকারের অনেক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছি।
সমাবেশে মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী বলেন, তাবলীগের স্ব-ঘোষিত আমির সাদ কোরআন হাদিস, আলেম-ওলামা, আল্লাহর অলি, নবী ও স্বয়ং আল্লাহর বিরুদ্ধে কুফরি বক্তব্য দিতে থাকেন৷ তাই সারা বিশ্বে তাবলীগের মূলধারা তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়। সাদের অনুসারীরা হচ্ছে কাদিয়ানী গ্রুপ। তারা ইসলামের মূলধারায় বিভক্তি সৃষ্টি করছে। এই সরকারকে তাবলীগের নামে কাদিয়ানীদের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। কাদিয়ানীরা বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত।
বিশিষ্ট এই ইসলামি ব্যক্তিত্ব আরও বলেন, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে আজকের সম্মেলন থেকে ওলামায় কেরামের পক্ষ থেকে যে ঘোষণা দেওয়া হবে, সরকারকে সেই নির্দেশনা মানতে হবে। এর বাইরে কারও সিদ্ধান্ত তৌহিদী জনতা মেনে নেবে না।
এ সময় মাওলানা আব্দুল হামিদ (পীর মধুপুর) বলেন, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। আমি বলব- কিসের পরামর্শ, এই সম্মেলন থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সরকারকে এটাই বাস্তবায়ন করতে হবে। ভিন্ন কোনো চিন্তা করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারকে সহযোগিতা করব। সরকারকেও আলেমদের সহযোগিতা করতে হবে। নয়তো পূর্ববর্তী সরকারের মতোই তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যদি বেয়াদবকে বাংলাদেশে আসতে দেয়, তাহলে সরকারকেও পালিয়ে যেতে হবে।
জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার হোসেন কাসেমী বলেন, তাবলীগের সৃষ্টি দেওবন্দ থেকে। তাদের হাতেই লালিত-পালিত হচ্ছে। এই তাবলীগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চাইলে আলেম-ওলামারা বসে থাকবে না। এখানে অনেক সংগঠনের সবাই এসে উপস্থিত হয়েছেন। এটাই প্রমাণ করে আমরা আর যাই ভাগ করি না কেন আমরা ইসলামকে ভাগ করতে পারি না।
ইসলামি মহাসম্মেলনে যোগ দিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যায় আলেম-ওলামা জড়ো হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে এ সম্মেলন শুরু হয়। বেলা সোয়া ১টার দিকে সম্মেলন শেষ হয়।
উল্লেখ্য, তাবলীগ দীর্ঘ দিন ধরে দুটি অংশে বিভক্ত। দুটি অংশের একটি দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির ও আরেকটি অংশ প্রয়াত মাওলানা জুবায়েরুল হাসানের অনুসারীদের।
-এমএ