সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই নীলফামারীর জলঢাকার রাজা হরিশচন্দ্রের বাড়ির। হরিশচন্দ্র পাঠ নীলফামারী জলঢাকা উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত খোদামারা ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম। রাজা হরিশ চন্দ্রের নাম অনুসারে গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে।
আর এখানেই হরিশ চন্দ্রের প্রাচীন রাজবাড়ি রয়েছে। সময় ও কালের আবর্তনে এ রাজবাড়িটি মাটির নিচে দেবে যাওয়ায় তার ধ্বংসাবশেষের নাম হরিশচন্দ্র পাঠের শিব মন্দির। চারালকাটা নদীর দক্ষিণ তীরে এক বিঘা জমির উপর পাঁচটি বড় কালো পাথর খণ্ডে ঘেরা স্থানটিকে দূর থেকে রাজবাড়ির শিব মন্দিরের জায়গাটি উচু মাটির ঢিবি বলে মনে হয়। ঢিবির উচ্চতা ৫০ থেকে ৬০ ফুট থাকলেও সময় ও কালের আবর্তনে উচ্চতা কমে ১০ ফুট হয়ে গেছে। যদিও প্রচলিত আছে পাথরগুলো এভাবে টিবির মাটির নিচে তলিয়ে গিয়ে আবার ভেসে ওঠে।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকাবাসী কর্তৃক নির্মিত দেয়ালের ভিতরে মন্দির ছাড়াও হরিশচন্দ্র পাঠ গ্রামে রাজা হরিশ চন্দ্রের প্রাচীন কিছু স্থাপনার ধ্বংসাবশেষসহ কিছু মুর্তি ও বট গাছ রয়েছে। এ রাজবাড়িটি রক্ষা ও সংস্কার করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের আমলে খনন কাজ শুরু হয়েছিল এলাকাবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে।
জনশ্রুতি আছে দেবে যাওয়া রাজবাড়ির খননের তৃতীয় দিন মাটির নিচে একটি দরজার মুখ দেখতে পায় খনন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা। সে দরজা দিয়ে খনন কাজে নিয়োজিত আট ব্যক্তি মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করলে মন্দিরের দরজা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। দরজাটা আর খোলা যায়নি। এতে খনন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ঘাবরে যান ও ভয় পেয়ে খনন কাজ বন্ধ করে দেন। দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা সেই আট ব্যক্তির ভাগ্যে সে দিন কি ঘটেছিল তা আজও জানা যায়নি। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত মন্দিরের আর কোনো সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ হয়নি।
রাজবাড়িটি বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় আছে। সরকারি ভাবে প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে এসব নিদর্শন সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ না থাকার ফলে অযত্ন আর অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে নিদর্শন স্থানটি আজ হুমকির মুখে পড়েছে।
জানা যায়, হরিশচন্দ্র পাঠের নির্মিত শিব মন্দিরে প্রতি বছর তিনটি ধর্মীয় উৎসব জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে আয়োজনের মাধ্যমে পালন করে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। দানশীল রাজা হরিশচন্দ্রকে নিয়ে অনেক পালা গান, যাত্রা পালা রচিত হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর আগে রাজা হরিশ চন্দ্র এই স্থানে একটি শিব মন্দিরে নির্মাণ কাজ শুরু করলেও তা শেষ করে যেতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্যোগে মন্দিরের বাকি কাজ সম্পন্ন হয়। প্রাচীনকালে এখানে বেশ কিছু মূর্তি ছিল যা এখন আর নেই।
এলাকাবাসী জানান, বিশ্বনাথ মন্দির নিয়ে নানা ধরনের লোক কথা প্রচলিত রয়েছে। কথিত আছে এই মন্দিরের আশপাশের স্থান থেকে এক মুঠো মাটি, ইট বা পাথর যদি কেউ নিয়ে যায় তবে সে ব্যক্তির নাক, মুখ দিয়ে রক্তপাত হয়ে মারা যায়। এরপর নীলফামারী জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ১৯৯৮ সালে সরকারি ভাবে এ নিদর্শন রক্ষার জন্য এলাকার কিছু অংশকে পুরাকীর্তি এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে নির্মাণ করে দেয়াল।
রাজা হরিশচন্দ্রের বাড়ী পরিদর্শনে আসা রংপুরের পীরগাছা থেকে আসা আব্দুল মালেক নামে এক তরুণ বলেন, এলাকাটি খুব সুন্দর, ভালো লেগেছে। তবে কোনো কিছু দেখা যায় না সব মাটির নিচে। এই এলাকার উন্নয়ন করে পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলে এখানে দর্শনার্থীদের যাতায়াত বৃদ্ধি পাবে।
এই স্থানটির উন্নয়ন করে পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দা বাসুদেব (৭০)।
রনজিত বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে দেখছি মন্দিরের কোনো সংস্কার বা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি আর সারোয়ার বলেন, এই এলাকাকে দর্শনীয় স্থান করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। আশা করি এটি বাস্তবায়ন হলে এলাকাটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে। এলাকাবাসীর দাবি রাজা হরিশ চন্দ্র পাঠ মন্দিরের স্থানটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা না করার ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। তাই এই এলাকাকে পর্যটন শিল্প এলাকা গড়ে তুলে তা বাস্তবায়ন করার দাবি জানাই।
-এইচএস/এমএ