চিকিৎসকের পাশেই বসেন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা
Published : Wednesday, 30 October, 2024 at 2:44 PM Count : 354
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে পর্যায়ক্রমে ইমাজেন্সি ডাক্তারের সহযোগী হয়ে ডাক্তারের মাধ্যমে নিজেদের কোম্পানির ঔষধ লেখানোর সুবিধা নিচ্ছেন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা।
চোখের সামনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি নিষেধ অমান্য করে ডাক্তারের পাশের চেয়ারে বসে এমন কার্যক্রম চললেও প্রমাণ চান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিন সরকারি বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানীর সেলস-রিপ্রেজেনটেটিভরা তাদের মোটরসাইকেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যত্রতত্র রেখে অনাকাঙ্খিত জটলা করছেন। এতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মক ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ইমার্জেন্সিতে সরকারি চেয়ারে বসে, সরকারি রেজিষ্ট্রারে লেখালেখির সহযোগীতার ওযুহাতে কর্তব্যরত ডাক্তার তার কোম্পানির ঔষধ লিখছেন কি না তা তদারকি করছেন।
এছাড়াও, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে রোগীদের থেকে ডাক্তারী ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নিয়ে ছবি তুলছেন। সরকারি অফিস সময়ের বেশীর ভাগ সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কর্তব্যরত চিকিৎসকদের চেম্বার রিপ্রেজেন্টেটিভদের দখলে থাকায় চিকিৎসা সেবাপ্রত্যাশী সাধারণ রোগীদের ঘন্টার পর ঘন্টা বাইরে অপেক্ষা করতে হয়। রিপ্রেজেনটেটিভদের দেওয়া পরামর্শে প্রেসক্রিপশন লেখার কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ঔষুধ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক রোগী।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা পৌর এলাকার থানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা দুখু মিয়া বলেন, 'আমি আমার ছোট শিশুকে সাথে নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় এখানে এসেছি। আধা ঘন্টা ধরে ডাক্তার সাহেবের চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে আছি তারপরও ওনার ব্যস্ততা কাটে না। পরে শুনলাম ডাক্তার সাহেব তার কক্ষে রিপ্রেজেনটেটিভদের সাথে কথা বলছেন। আধা ঘন্টা পর ডাক্তারকে আমার রোগী দেখালাম।'
তিনি বলেন, 'ডাক্তার আমার রোগীকে ভালো করে না দেখে ঔষুধ লিখে দিলো। আমি প্রেসক্রিপশন নিয়ে বাহিরে আসতেই এখানে থাকা রিপ্রেজেনটেটিভরা আমার প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানা টানি শুরু করে দিলো। প্রেসক্রিপশনে যে ঔষধ লেখা হয়েছে তা হাসপাতালে পাওয়া যায় না।'
শিবনগর ঘাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোছা নুরজাহান বলেন, 'আমার বোনকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য এসেছি। ডাক্তার আমার রোগী দেখে ঔষধ লিখেছে, যে ঔষধ হাসপাতালে নাই। আমরা গরিব মানুষ বাইরে ঔষধ কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই।
এমন অভিযোগ করছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা অনেক রোগী ও তার পরিবারের লোকজন।
ইমাজেন্সি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত ডাক্তার শামীম বলেন, 'রোগীর চাপ বেশি থাকায় রিপ্রেজেনটেটিভদের সহযোগীতা নিয়ে ভর্তি রেজিষ্ট্রারে লেখিয়ে নিচ্ছি। এ বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়া আছে।'
এখানে রিপ্রেজেটেটিভ দিয়ে লেখালেখি করতে হবে কেন, সমাজে আরও তো লোক আছে এমন প্রশ্ন করা হলে ডাক্তার শামীম উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রিপ্রেজেটেটিভের দখলে। তারাই এখন ইমাজেন্সিতে বসে তাদের ইচ্ছেমতো ঔষধ লেখাতে পারছেন। রিপ্রেজেটেটিভরা এমন সুবিধা আপনার অনুমতিতে পাচ্ছে। এমন প্রশ্ন করা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো. মশিউর রহমান বলেন, 'রিপ্রেজেটেটিভরা যাতে সব সময় হাসপাতালের ডাক্তারদের ভিজিট না করাতে আসে সে জন্য আমি অনেক নোটিশ করেছি। রিপ্রেজেনটেটিভদের সাথে আলোচনা করেছি কিন্তু তারা কোনো কথাই শুনতে চান না। তারা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনাগোনা করে। আমি বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সাথে কথা বলবো।'
আপনার অনুমতিতে ইর্মাজেন্সিতে চেয়ারে বসে পর্যায়ক্রমে রিপ্রেজেনটেটিভরা সরকারি রেজিষ্ট্রারে লেখালেখি করে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমি কাউকে এমন কোনো অনুমতি দেই নাই। ইমার্জেন্সিতে রিপ্রেজেটেটিভ বসার কোনো প্রশ্নই আসে না। যদি প্রমাণ হয়, তাহলে যে ডাক্তার বসিয়েছে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
-এমএ