'মাছ ধরলে পেটে ভাত আইয়ে, না ধরলে উপাস'
Published : Monday, 21 October, 2024 at 12:54 PM Count : 306
'মাছ ধরলে পেটে ভাত আইয়ে, না ধরলে উপাস (উপবাস)। ২২ দিন নদীতে যাইতাম (যেতে) পারুম (পারবো) না। মাছ ধরোন নিষেধ। অভিযান চলে। আমরাও চাই না কেউ মাছ ধারুক। কিন্তু অন (এখন) আমরা কি করুম (করবো)? আঙ্গো (আমাদের) তো একমাত্র উপায় মাছ ধরা। কেন্নে (কিভাবে) সংসার চলবো?।'
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ আইব আলি মাঝি।
একই ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা ইসমাইল মাঝি বলেন, 'সামনে আর কয়টা দিন। শুধু বসে বসে গুনছি। এখন না খেয়ে সংসার চললেও অভিযান শেষে তো মাছ ধরতে পারবো। তখন এ দুঃখ ভুলে যাবো।'
শুধু তারাই নন। উপকূলের সকল জেলেদের কথা যেন একই।
তবে উপজেলা মৎস্য অফিস বলছে, চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় তারা সব জেলেকে এ সুবিধা দিতে পারছেন না। পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া এ পেশাতেই প্রতিষ্ঠিত উপকূলের জেলেরা।
ইলিশের প্রজনন মৌসুম চলায় তারা মাছ শিকারে যেতে পারছেন না জেলেরা। চলছে অলস সময়। নিষিদ্ধ এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে যে বরাদ্দ রয়েছে তা পাননি ইসমাইল মাঝি। বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানও পাচ্ছেন না। দাদনের টাকা পরিশোধ করতে করতে অতিষ্ঠ তিনি। স্বপ্ন দেখলেও এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না। ফলে আয়-রোজগার না থাকায় অনাহারে-অর্ধাহারে চলছে তার সংসার।
গত কয়েক দিনে উপকূলের জেলে পাড়াগুলো পরিদর্শন করে দেখা গেছে, দীর্ঘ ২২ দিনের নিষিদ্ধ সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চরম হতাশায় দিন কাটছে অনেকেরই। কীভাবে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকবেন- সেই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে সবারই। কাজ না থাকায় খণ্ডকালীন এ সময়টির জন্য অন্য
পেশা খুঁজছেন অনেকেই। মিলছে না তাও।
ইলিশ প্রজননের এ মৌসুমে জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে সরকার। নিষিদ্ধ এ সময়টিতে বেকার জেলেদের ভর্তুকি হিসেবে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউনিয়ন
পরিষদ ও উপজেলা মৎস্য অফিসের মাধ্যমে এসব বরাদ্দ বিতরণ করায় অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে কার্ড বিলি বণ্টন হয় এমনটাই অভিযোগ এখনকার জেলেদের।
স্থানীয়রা জানান, তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিডি কার্ড প্রকৃত জেলেরা পান না। বেশির ভাগ জেলেরই দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে।
সামরাজ বাজারের জেলে নুর হোসেন মাঝি জানান, সাত সদস্য নিয়ে তার সংসার। এ বছর ইলিশ বেশি ধরা পড়ায় মহাজনদের বিগত বছরের ধার-দেনা শোধ করেছেন। তবে টাকা-পয়সা না থাকায় ৪০ হাজার টাকা দাদন নিয়ে নৌকা মেরামত করছেন। এ জন্য সরকারের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি।
-এমএ