কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে অভিযান পরিচালনাকালে ছাত্রলীগের দুই নেতার কক্ষ থেকে পিস্তল ও ফেন্সিডিল পান। উদ্ধার হওয়া জিনিসগুলো পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিতে অপেক্ষা করেন শিক্ষার্থী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
কিন্তু কেউ সেগুলো উদ্ধার করেনি। পরবর্তীতে এগুলো কে নিয়ে গেছে তা কেউ বলতে পারছে না। পুলিশ এগুলো পায়নি বলে দাবি করায় এ নিয়ে কোনো মামলা হয়নি।
গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ভাঙচুর করেন আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীরা সে দিন বঙ্গবন্ধু হলে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বেশ কিছু মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। এরপর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিবের কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এর আগেই পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ছাত্রলীগের এ দুই নেতাসহ অন্যরা ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যান।
এ সময় সভাপতির কক্ষে দুটি বিদেশি পিস্তল, রামদা ও বিদেশি মদের বোতল দেখা গেছে। আর সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে ফেন্সিডিলের ২০ থেকে ২৫টি বোতল দেখা যায়। এসব ছবি এবং ভিডিও সে দিন ছড়িয়ে পড়ে।
সে দিন আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, পিস্তল ও ফেন্সিডিলের বোতল থাকার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হয়। তারা এগুলো পুলিশ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু প্রায় দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কেউ যায়নি। পরে সেখানে উপস্থিত হন গোয়েন্দারা। তাদের এই অস্ত্র ও ফেন্সিডিলের বোতল দেখে রাখতে বলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওই হল থেকে বেরিয়ে যান। পরে অস্ত্র ও ফেন্সিডিলের বোতলগুলো কে নিয়ে গেছে তা এখনো জানতে পারেনি কেউ।
সে দিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পরেও কিছু সময় অস্ত্র ও ফেন্সিডিলের বোতল দেখে রেখেছিলেন নগর পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্য সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শুধু আমি না, দুটি পিস্তল এবং কিছু ফেন্সিডিলের বোতল সবাই দেখেছে। আমরা অনেক সময় অপেক্ষা করেছিলাম যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা পুলিশ এলে এগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও কেউ আসেননি। আমরাও ওখানে নিরাপদ ছিলাম না। তাই আর অপেক্ষা না করে ফেন্সিডিলের বোতল ও পিস্তল যেভাবে ছিল ওইভাবে রেখেই চলে এসেছিলাম।’
ওই পিস্তল দুটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্ধার না করার কারণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে থাকা রাবির একাধিক শিক্ষার্থী। তারা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়ার পরও নিরাপত্তা বাহিনী তা উদ্ধার না করা উদ্বেগজনক। কারণ তারা এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন বলে অনেকেই তাদের ওপর রুষ্ট। এ অবস্থায় ওই আগ্নেয়াস্ত্র পরবর্তীতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দমনে ব্যবহার করা হবে না, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি বঙ্গবন্ধু হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শায়খুল ইসলাম মামুন জিহাদ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা ওই হলে অভিযান চালাই। কিন্তু তখন সেখানে কোনো পিস্তল পাওয়া যায়নি। কিছু দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গেছে, তা আমরা উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছি।
মহানগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোবারক পারভেজ বলেন, আমরা কোনো পিস্তল কিংবা ফেন্সিডিলের বোতল পাইনি। এগুলো পেলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি মামলা হতো।
ওই পিস্তল ও ফেন্সিডিলের বোতল কে নিয়ে গেল তা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদৌ কোনো পিস্তল কিংবা ফেন্সিডিলের বোতল কোথাও ছিল কি না সেটাও আমরা জানি না।
ওসি বলেন, সে দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে হামলার ঘটনায় এক শিক্ষার্থী বাদি হয়ে থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলায় ২৭টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে এ মামলায় কোনো ফেন্সিডিলের বোতল বা পিস্তলের কথা কোথাও উল্লেখ নেই।
কক্ষে অস্ত্র থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনার দিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, এগুলো তার নয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রথম দফায় হামলার সময় এই পিস্তল দুটি তার কক্ষে রেখে আসেন। দ্বিতীয় দফায় হামলার সময় সেগুলো সাংবাদিকদের ডেকে দেখান।
নিজ কক্ষে ফেন্সিডিলের বোতল থাকার বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল গালিব এখনও মুখ খোলেননি।
-আরএইচ/এমএ