পাট থেকে আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত চাষিরা
Published : Tuesday, 30 July, 2024 at 2:49 PM Count : 161
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পাট চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাট কাটা, জাগ দেয়া ও পাটের আঁশ ছাড়ানো নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা।
এদিকে, খরা, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া এবং আগাম বন্যায় ফলন ভালো না হওয়ার শংকা রয়েছে।
গোয়ালন্দ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, সোনালী আঁশ পাটের উৎপাদন ভান্ডারখ্যাত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চলতি মৌসুমে পাটের আবাদ কম হয়েছে গত বছরের তুলনায়। গত বছর যেখানে চাষ হয়েছিল চার হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে সেখানে এবার লক্ষ্যমাত্রা চার হাজার ৮৮০ হেক্টর ধরা হলেও চাষ হয়েছে চার হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে। তবে সামনের বছর পাট চাষের পরিমাণ আরও কমবে বলে আশংকা করছেন তারা।
এর প্রধান কারণ হিসেবে তারা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে পানি সংকটে পাট জাগ দিতে না পারা অন্যতম কারণ। পাট কেটে ক্ষেত থেকে গাড়িতে নিয়ে অন্য এলাকায় জাগ দেওয়া সেখান থেকে ধুয়ে আনতে শ্রমিকের মজুরি, গাড়ির অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে তাদের লোকসানের মুখোমুখি পড়তে হয়েছে। এর পরিবর্তে বিকল্প কৃষি শস্য হিসাবে ভূট্টা, তিল ও আউশ ধানের চাষ লক্ষ্যণীয় হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোমবার সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গার খাল-বিল, পুকুর ও ডোবা-নালায় পাট জাগ দেওয়া, পাট ধোয়া, পাট শুকানোর পর সেই পাট প্রক্রিয়াজাত করে তা বাজারে বিক্রি করার উপযোগী করে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। পাট চাষের শুরুর দিকে খরা থাকার কারণে এবং আগাম বন্যার কারণে অধিকাংশ জায়গায় পাটের ফলন ভালো হয়নি। শ্রমিক সংকটে অতিরিক্ত মজুরিতে পাটের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেলেও বাজারে পাটের দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা অনেক খুশি। এছাড়া পাট কাঠির দামও বেশ চড়া।
উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের ফৈজদ্দিন মোল্লা পাড়ার গোয়ালন্দ ফরিদপুর তাড়াইল সড়কের রমজান মোল্লা বলেন, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এবার পাটের ফলন খুব ভালো হয়নি। তবে আগাম বন্যা হওয়ার কারণে এবার তারা পাট জাগ দিতে পেরেছেন। বর্তমান বাজারে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ পাটের দাম। এছাড়া পাটের খরি ৫/৬ শত টাকা শতক। তবে খরচ বাদ দিয়ে খুব একটা লাভ থাকবে না।
নগর রায়ের পাড়া এলাকার পাট চাষি মিরাজ শেখ বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন হয়েছে ৭ থেকে ৮ মণ। সার, বীজ, নিড়ানি, পাট কাটা ও জাগ দেয়ার জন্য আলাদা শ্রমিক, পরিবহন খরচসহ মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৩৮ থেকে ৩৯ হাজার টাকা। বাজারে পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা মণ। মৌসুম শেষ পর্যন্ত দাম এভাবে থাকলে চাষিরা খরচ ঘরে তুলে আনতে পারবে।
পাট শুকানোর কাজে ব্যস্ত জাহাঙ্গীর মোল্লা। তিনি বলেন, পাট চাষের শুরুতে অনাবৃষ্টি, পোকার আক্রমণ, পাট কাটার সময়ে অনাবৃষ্টি, টানা খরায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কা এবং শ্রমিক সংকটে শ্রমমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এবার পাটে লাভের আশাই ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু পাটের বাজার ভালো থাকায় লাভের মুখ দেখতে পেরেছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. খোকনুজ্জামান বলেন, এবার অনাবৃষ্টি এবং আগাম বন্যায় চাষিরা তেমন একটা সুবিধা করতে পারবে না। পদ্মা পাড়ের এই অঞ্চলে ভবিষ্যতে পাটের চাষ আরও কমার সম্ভবনা রয়েছে। কারণ কৃষকরা বর্তমানে আউশ ধান, ভূট্টা ও তিল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। অল্প খরচে যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনই খাদ্য ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করছে এসব ফসল।
-এসআই/এমএ