ইলিশের ভরা মৌসুম চলছে। উঠে গেছে সরকারি বিধিনিষেধ। নদীতে বেড়েছে পানি-বৃষ্টি। দীর্ঘ দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে দলবেঁধে মাছ ধরতে নেমেছেন কয়েক হাজার জেলে। মৌসুমের এ সময়টাতে উপকূলের নদ-নদীতে ইলিশ ধরা পড়ার কথা। নিষেধাজ্ঞার পাঁচ দিন পার হলেও নদীতে কাঙ্ক্তি ইলিশের দেখা মিলেনি। যা কিছু জাটকা উঠছে, সেগুলোর দাম অনেক বেশি।
মৎস্যসম্পদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জালে ইলিশ না ওঠায় হতাশ হওয়ার কিছু নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগর থেকে ইলিশ নদীতে আসতে দেরি হচ্ছে। বৃষ্টি ও নদীতে জোয়ারের চাপ ও স্রোত বাড়লে ইলিশ আসবে এবং ধরাও পড়বে। এ জন্য প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। এদিকে কাঙ্ক্তি ইলিশ না পাওয়ায় মহাজনের দাদনের টাকা ও এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা।
চরফ্যাশনের বেতুয়া, সামরাজ, কুকরির মনুরা,চরপাতিলা, ঢালচরের হাওলাদার বাজার, নুরাবাদের বকসী, গাছির খাল,হাজারিগঞ্জের পাচকপাট, মাইনুদ্দিন, নীলকমলের বাংলা বাজারঘাট, চরকলমির বাবুর হাট মাছ ঘাট, নতুন সুইজ, খেজুর গাছিয়া, বেড়িভাঙ্গা মাছ ঘাট, বস্কসি, ঢালচর.চরপাতিলা সহ বেশ কয়েকটি মাছ ঘাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
উপকূলের জেলেদের পঞ্জিকার হিসাবে জুলাই (বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত) থেকেই ইলিশের মৌসুম শুরু হয়। এ সময় নদীতে ইলিশের পরিমাণ বাড়তে থাকে। জাটকাগুলো আকারে ইলিশে পরিণত হয়ে যায়। জেলেরাও এ সময় দাদন নিয়ে জাল-নৌকা মেরামত করে নদীতে নামেন ইলিশের আশায়। কিন্তু এবার জেলেদের সেই স্বপ্ন ফিকে হতে চলেছে। আষাঢ় ফুরিয়ে গেলেও তেমন ভাবে দেখা নেই ইলিশের। তাই জেলেদের মাঝে হতাশা জন্ম নিয়েছে। অন্য বছর যেখানে এই সময় বাজার নানা মাপের ইলিশে ছেয়ে যেত, এ বছর ছবিটা কার্যত উল্টো।
চরফ্যাশন বাজারের ব্যবসায়ী শাহজাহান বলেন, ‘অন্য বছর এই সময় ইলিশের ব্যাপক আমদানি হয়। ফলে দাম অনেক কম থাকে। আর এক মাছ ব্যবসায়ী বশির হালদার বলেছেন, “প্রতি বছর এই সময়টা ইলিশ বেঁচে কিছু লাভের মুখ দেখি। কিন্তু এ বার মন্দা চলছে।
বঙ্গোপসাগরের তীরের দ্বীপ ইউনিয়ন ঢালচর এলাকার জেলে রহিম মাঝি ছোট ট্রলারে নদীতে মাছ ধরেন। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘গাঙ্গে গোনে মাছ-পোনা এক্কেবারে ধুইয়্যা-মুইচ্ছা গ্যাছে।’
এ অঞ্চলের মেঘনা-তেঁতুলিয়া অববাহিকার নদ-নদীর ওপর নির্ভরশীল সব জেলের বুকেই এমন দীর্ঘশ্বাস। মাছঘাটগুলো এখন মাছের অভাবে খাঁ খাঁ করছে।
মাছের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইলিশ পাওয়ার জন্য বর্ষা প্রয়োজন। যে বৃষ্টিতে ইলিশ সমুদ্র ছেড়ে নদীতে আসে। অথচ ইলিশ পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বর্ষা, নদীতে প্রচুর পানিসহ সব লক্ষণ থাকলেও দেখা নেই শুধু ইলিশের। তারপরও প্রতিদিন আশায় বুক বেঁধে নদীতে ছুটছে হাজার হাজার জেলে নৌকা-ট্রলার নিয়ে। হাতে গনা ২/৪টি ইলিশ পাওয়া যায়, তবে এই ইলিশ বিক্রি করে খাবারের টাকা উঠছে না জেলেদের। স্বচ্ছলতা ফিরে আসছেনা অভাব-অনটনের পরিবারে। তাই ইলিশ নির্ভর বিশাল এ জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা এখন নানামুখী সংকটে।
চরফ্যাশন উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগর থেকে ইলিশ নদীতে আসতে দেরি হচ্ছে। তিনি জানান, ইলিশের জন্য প্রয়োজন ঝিরঝিরে বৃষ্টি আর পুবালি হাওয়া। এখন পর্যন্ত যার দেখা নেই। আর সেই কারণেই দেখা নেই রুপোলি ফসলের। ইলিশের মৌসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের মৌসুম কিছুটা বিলম্বে আসছে। কিন্তু অনুকূল পরিবেশ তৈরি না হওয়ায় মিষ্টি জলে ইলিশ ঢুকতে পারছে না। এটাও একটা কারণ। তবে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় কাঙ্ক্তি ইলিশের দেখা মিলবে।
এসআর