For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

আমার ছেলেকে কেন মেরে ফেললো?

Published : Wednesday, 17 July, 2024 at 10:44 AM Count : 202

‘আমার ছেলেকে কেন মেরে ফেললো। ওর পা ভেঙে দিতো। আমি খোড়া ছেলেকে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিতাম। ওর মেধাবী হওয়াই কি দোষের ছিল?’

কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করলো রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী নিহত আবু সাইদের বাবা মকবুল হোসেন।

রংপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত বেরোবি'র শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২৩) ছিলেন পরিবারের সবার ছোট। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আবু সাঈদের শিক্ষাজীবন ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল।

সাঈদের এক ভাই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন, অন্যরা পড়েছেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যন্ত। তাই পুরো পরিবারের স্বপ্ন ছিল আবু সাঈদকে ঘিরে। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আবু সাঈদ ছিল সবচেয়ে মেধাবী। তাই পরিবারের সবার উপার্জন দিয়ে তাকে এতদূর পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে নিয়ে এসেছেন তার পরিবার।
সাঈদের এক ভাই উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন, অন্যরা পড়েছেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যন্ত। তাই পুরো পরিবারের স্বপ্ন ছিল আবু সাঈদকে ঘিরে। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে আবু সাঈদ ছিল সবচেয়ে মেধাবী। তাই পরিবারের সবার উপার্জন দিয়ে তাকে এতদূর পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে নিয়ে এসেছেন তার পরিবার।

জানা গেছে, সাঈদ খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। রংপুর সরকারি কলেজ থেকে একই ফলাফল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন সাঈদ।  

আদরের ছোট ভাইকে হারিয়ে হতভম্ব বড় ভাই রমজান। তিনি বলেন, 'আমার বাবা মকবুল হোসেন শারীরিক অসুস্থতায় শয্যাশায়ী। পরিবারের সবার উপার্জন দিয়ে তাকে এতদূর পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে নিয়ে এসেছি। একদিন সে অনেক বড় হবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে সে আশা ছিল।'

নিহতের ছোট বোন সুমির আর্তনাদে আকাশ বাতাশ ভারী হয়েছে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'আমার ভাইকে ওরা মেরে ফেললো কেন? আমার ভাইতো বিবিএস ক্যাডার হতে চেয়েছিল। আমাদের স্বপ্ন কে পূরণ করবে।'
 
সাঈদের মা মনোয়ারা নির্বাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে সবার দিয়ে তাকিয়ে আছেন। মাঝে মাঝে বাবা বাবা বলে ডাকছেন তিনি।

এদিকে, ১০৬তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্তে অনির্দিষ্টকালের জন্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার বেলা ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এর আগে রংপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২ ব্যাচের ছাত্র আবু সাঈদের মৃত্যুর পর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রংপুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। লাঠি সোটা, রড নিয়ে শিক্ষার্থীরা জড়ো হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের সামনে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখলে নেয় আন্দোলনকারীরা।

এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ঢুকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে রাখা ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেলের প্রাইভেটকার গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। এ সময় সঙ্গে থাকা আরও পাঁচ মোটরসাইকেলেও আগুন দেওয়া হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান।

এর আগে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার পর পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকলে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে প্রধান গেটে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় স্লোগান স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে পার্কের মোড় এলাকা।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর জেলা স্কুলের সামনে জড়ো হন রংপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা মিছিল নিয়ে রংপুর জিলা স্কুলের সামনে থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট পর্যন্ত মিছিল নিয়ে হেঁটে আসে। এ সময় তাদের আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পুলিশ।

কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটে অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরানোর চেষ্টা করে। পরে আন্দোলনকারীরা পুলিশের বাঁধা ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মূহূর্মুহু রাবার বুলেট ও টিয়াল শেল ছুড়তে থাকে। এ সময় আন্দোলনকারীরাও ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় ১০ সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন।

পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হল থেকে লাঠি, ছোরা, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়।দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে ধাওয়া পালটাধাওয়া। একপর্যায়ে শহর থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা যোগ দেয় ছাত্রলীগের সাথে। পরে আন্দোলনকারীদের তোপে পিছু হটতে বাধ্য হন তারা।

অন্যদিকে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও কোটা আন্দোলনকারীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রী মিফতাহুল জান্নাতের মৃত্যুর ঘটনাটি গুজব বলে জানিয়েছে সেই ছাত্রী। বর্তমানে চিকিৎসা নেয়ার পর সে সুস্থ রয়েছে।
 
-এলওয়াই

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,