For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

হঠাৎ বন্ধ বয়স্কভাতা, সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানলেন তারা মারা গেছেন

Published : Tuesday, 16 July, 2024 at 5:08 PM Count : 430



পটুয়াখালীর দশমিনার ৬নং বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড আমবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মোর্শেদা বেগম। এক বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন তিনি। ছয় মাস আগে হঠাৎ করেই তার ভাতা আসা বন্ধ হয়ে যায়। পরে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন। তার নামে বয়স্কভাতা প্রাপ্তির সুবিধা বাতিল করে অন্য একজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মোর্শেদার মতো এভাবে রত্তন প্যাদা, সাফিয়া, ফজলু হাওলাদার, মতলেব মল্লিক ও খোরশেদ জোমাদ্দারকে স্থানীয় ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ ও চেয়ারম্যান মিলে কাগজে কলমে মেরে ফেলছেন। তারা সবাই ওই ইউনিয়নের একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তাদের মৃত দেখিয়ে ভাতাভোগীর তালিকায় নতুন ছয়জনকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

এদিকে, কাগজে কলমে মৃত দেখানো জীবিত ওই ছয় ভাতাভোগীর কেউ কেউ জানেনইনা তাদের নামে বয়স্কভাতা চালু করে আবার তাদের মৃত দেখানো হয়েছে। তাদের কয়েকজনের অনুকূলে বয়স্কভাতা চালু করে ভিন্ন মোবাইল ফোন নম্বরে টাকা তুলে আত্মসাৎ ও একজনের ভাতার টাকা আরেকজনের মোবাইল ফোনে চলে যাওয়াসহ নানা অভিযোগ মিলছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ৯নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ইউনুস জোমাদ্দার ও গ্রাম পুলিশ আবুল বশারের যৌথ পরিকল্পনায় তাদের মৃত দেখিয়ে ভাতা প্রাপ্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ভাতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না তারা।
মাসে ৬শ টাকা একজন মানুষের জন্য পর্যাপ্ত না হলেও এটি বয়স্ক নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান। এ সম্মান ফিরে পেতে চান তারা, দাবী তাদের।

ভুক্তভোগী মোর্শেদা বেগম দ্য ডেইলি অবজারভারকে বলেন, আমি এক বছর ধরে বয়স্কভাতা পেয়ে গত দুই কিস্তি (ছয় মাস) যাবত ভাতা পাই নাই। আমাদের ওয়ার্ড মেম্বার ইউনুস ও চৌকিদার বশার আমাকে মৃত লিখে পাঠাইছে। আমার ভাতা বন্ধ করে আমার জায়গায় আরেকজনকে বয়স্ক ভাতার সুবিধা দিয়েছে। সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমি মৃত। আমি অনেক কষ্টে আছি। আমি আমার ভাতা পুনরায় পেতে চাই। যারা এ ঘৃণিত কাজটি করেছে তাদের বিচার চাই।

ভুক্তভোগী রত্তন প্যাদা বলেন, আমি দুই বছর ধরে বয়স্কভাতা পেতাম। গত ৬ মাস যাবত ভাতা পাই নাই। মেম্বার ইউনুস আমাকে মৃত দেখাইছে। গত ইউপি নির্বাচনে আমি তাকে ভোট দেই নাই। তাই সে এ কাজ করছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। আমি অসহায়। পুনরায় আমার বয়স্কভাতা পেতে চাই।

ওই ওয়ার্ডের ঢনঢনিয়া গ্রামের খোরশেদ জোমাদ্দার বলেন, আমি ইউনুসকে ভোট দেই নাই। আমার নামে বয়স্কভাতা হয়েছে জানিয়ে ইউনুস আমার কাছে এক হাজার টাকা চাইছে। আমি বলছি ভাতার টাকা হাতে পাওয়ার পর দিবো। তাতে আমার সাথে রাগারাগি করে আমাকে মৃত দেখিয়ে আমার নাম কাটছে।

এদিকে, একই গ্রামের মতলেব মল্লিক ও ফজলু হাওলাদার জানেনইনা তাদের নামে বয়স্কভাতা চালু হয়েছে আবার তাদের মৃত দেখিয়ে ভাতা বঞ্চিত করে অন্য কাউকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ভাতাভোগীর তালিকাভুক্তি করে কে এই ভাতার টাকা আত্মসাৎ করলো, আবার কে আমাকে মৃত দেখিয়ে ভাতাভোগীর তালিকায় অন্য ব্যক্তিকে প্রতিস্থাপন করলো তার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবী জানান তারা।

এ ব্যাপারে জানার জন্য ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য ইউনুস জোমাদ্দারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি তিনি।

বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আবুল কালাম দ্য ডেইলি অবজারভারকে বলেন, ভুক্তভোগীরা আমার কাছে আসছিলো। ইউপি সদস্য ইউনুস ও চৌকিদার (গ্রাম পুলিশ) বশার ৯নং ওয়ার্ডের মৃতদের তালিকা করে নিয়ে আসছে। আমি আর অতটা চিন্তাও করলাম না। ওদের বাড়ির পাশে ছোট একটা ওয়ার্ড, মারা না গেলেই বা ওরা তালিকা করে নিয়ে আসছে কেন? আমি স্বাক্ষর করে দিয়েছি। পরে যখন জেনেছি তখন তাদের ডেকে পনের দিনের মধ্যে এগুলো ঠিক করে দিতে বলেছি। নইলে আমি ব্যবস্থা নিব।

দশমিনা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড সদস্যের যৌথ স্বাক্ষরিত প্রত্যয়ন দেয়ার পরে আমাদের আর কিছু করার থাকেনা। তারা মৃতদের যে তালিকা দিবে সেটা দেখে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি। তালিকাটা এখন আমাদের অনলাইনে চলে গেছে। মৃত ভাতাভোগীদের তথ্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকেই আমাদের দিবে। এখানে আমাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।

পটুয়াখালী জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শিলা রানী দাস বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যদি ডেথ সার্টিফিকেট না দিয়ে  থাকে, তাহলে তো নতুন ভাতাভোগী প্রতিস্থাপন করা যায় না। এখন নির্বাচন কমিশনেও তারা ডেথ। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের এমইও আছে, তারা যদি বলে এই লোক মৃত তাহলে তো ওখানে প্রতিস্থাপন করতে পারে। জীবিত ভাতাভোগীদের মৃত দেখানোর ঘটনায় কারা দায়ী এ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারবো না। তবে যিনি ভাতাভোগী তার আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল।        
এদিকে, দশমিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাফিসা নাজ নীরা বলছেন, মৃত দেখানো হয়েছে এমন যারা যারা জীবিত রয়েছেন তাদেরকে আবার পুনর্বহাল করা যাবে। অভিযোগ পেলে এ ব্যপারে ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. নুর কুতুবুল আলম মুঠোফোনে দ্য ডেইলি অবজারভারকে বলেন, ভুক্তভোগীদের যেকোনো একজনকে আমার কাছে আবেদন করতে বলেন। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের যিনি মেম্বার রয়েছেন তিনি একটা লিষ্ট দিবেন, একজন জীবিতকে মৃত বলবেন আর চেয়ারম্যান সাহেবও কোন খোঁজ-খবর না করে সই স্বাক্ষর করবেন, আবার আমাদের সমাজসেবা অফিস তারাও অন্ধের মতো কাজ করবে, কোন যাচাই-বাছাই করবেনা মাঠ পর্যায়ে, এটা হতে পারেনা। এর জন্য সবাই দায়ী। সবার বিরুদ্ধেই আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর যারা এ ভাতা আগে পাইতো কিন্তু এখন পায়না, যদি তারা নিজেরা সমস্ত শর্ত পূরণ করে বয়স্কভাতায় নাম অন্তর্ভূক্ত করে ঠিকমত ভাতা পেয়ে থাকে তারা যেন আবারও পায় আমি সেই ব্যবস্থা করবো। তারা যদি আবার দুই নম্বরি করে নাম অন্তর্ভূক্ত করে থাকে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এসটি/এসআর


« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,