For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

আমতলীতে শতক ছুঁয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ লোহার সেতু

Published : Thursday, 11 July, 2024 at 1:07 PM Count : 264

বরগুনাআমতলী উপজেলায় ১০০টি লোহার সেতু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুগুলো ধসে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

গত ২২ জুন উপজেলার হলদিয়া বাজার সংলগ্ন সেতু ধসে নয় জনের প্রাণহানির পর উপজেলা এলজিইডি নড়েচড়ে বসেছে। তারা ঝুুঁকিপূর্ণ সেতুর দুই পাশে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড টানানো এবং সেতুর প্রবেশ মুখে বাঁশের বেড়া ও প্রতিবন্ধকতা খুটি স্থাপন করেছে।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭-৯৮ থেকে শুরু করে ২০০৮-২০০৯ সাল পর্যন্ত এলজিইডির আওতায় আমতলী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ‘হালকা যান চলাচল প্রকল্পের’ অধীনে শতাধিক সেতু নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পটি ২০০৮-২০০৯ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি না করায় এসব সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জায়গায় গার্ডার সেতু নির্মাণ করে দিয়েছে স্থানীয় এলজিইডি।

লোহার সেতুগুলো নির্মাণের পর এসব সেতু রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় এরই মধ্যে ২০০৭ সালের সিডরের রাতে কেওয়াবুনিয়া খালের, ২০১৫ সালের ৮ জুন আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের সোনাখালী মুচল্লী বাড়ির খালের, ২০১৫ সালের ১৪ মে সোনাখালী স্কুল এন্ড কলেজের সামনের খালের, ২০১৬ সালের ১৬ মে রোয়ানুর রাতে বাঁশবুণিয়া খালের, একই বছর ৯ জুলাই আমড়াগাছিয়া খালের, ২০১৯ সালের ১০ মার্চ কুকুয়া ইউনিয়নের কুতুবপুর খালের, ২০২২ সালের ২৪ জুন কাউনিয়া খালের, ২০২২ সালের ১৫ মে দক্ষিণ পশ্চিম আমতলীর আরপাঙ্গাশিয়া খালের, ২০২২ সালের হলদিয়া ইউনিয়নের আলতাফ হোসেন মোল্লা বাড়ির খালের, ২০২৪ সালের ২৬ মে মধ্য চন্দ্রা খালের সেতুসহ অন্তত ১৫টি সেতু অধিক জরাজীর্ণতার কারণে ধসে পড়ে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২২ জুন (শনিবার) দুপুরে হলদিয়া বাজার সংলগ্ন সেতুটি মাইক্রোবাসসহ ধসে পড়ে নয় জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
এর বাইরে এখনো যে সেতুগুলো খালের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে সেগুলোও শতভাগ জরাজীর্ণ হয়ে চলাচলের অনুপযোগী অবস্থায় রয়েছে। ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর, ২০০৯ সালের আইলায়, ২০১১ সালের মহাসেন ও ২০১৬ সালের রোয়ানু এবং সর্বশেষ রিমালের প্রভাবে অধিকাংশ সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেতুগুলোর সিমেন্টের স্লিপার, হাতল ও অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। সেতুগুলো এভাবে পড়ে থাকায় এর হাতল ও অ্যাঙ্গেলসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি হয়ে যাচ্ছে। ধসে পড়া সেতুগুলোর স্থানে এলাকার বাসিন্দারা উদ্যোগ নিয়ে বাঁশ, তক্তা, সুপারি গাছসহ অন্যান্য গাছ দিয়ে কোনো রকম মেরামত করে ঝুঁকি নিয়ে এসব সেতু পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গত ২২ জুন হলদিয়া বাজার সংলগ্ন লোহার সেতু ধসের পর এখন পুরো ইউনিয়ন উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উপজেলা সদরসহ ঢাকা কিংবা বরিশাল যেতে হলে এই সেতু পারাপার হয়ে ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের চলাচল করতে হয়। 

বর্তমানে ধসে যাওয়া সেতুর স্থানে চলাচল করার জন্য নারী সংসদ সদস্য প্রভাষক ফারজানা সুমির অনুদানের টাকায় বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁশের সাঁকো দিয়ে নারী ও শিশু ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য রুহুল আমিন বলেন, ব্রিজ ভাইঙ্গা যাওয়ায় মোগো চাওড়া ও হলদিয়া ইউনিয়নের লোকজনের যাতায়াত বন্ধ হইয়া গ্যাছিল (গেছিলো)। মহিলা এমপি মোগো বাঁশের সাঁকো দিয়ে দিয়েছে। এহন মোরা এই হাক্কা (সাঁকো) দিয়া চলাচল করি।

অপরদিকে, হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের বাশবুনিয়া খালের জেবি শেনের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সেতুটি ২০১৬ সালের ১৬ মে (শনিবার) বিকেলে রোয়ানুর প্রভাবে মুষলধারে বৃষ্টির সময় কয়েকজন পথচারীসহ সেতুটির মাঝ বরাবর ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের অংশ ধসে খালের পানিতে পড়ে যায়। এ সময় সেতু দিয়ে পারাপার হওয়া যাত্রী দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের আলতাফ, সেলিম, ওসমান, গনি, সোহাগ মোল্লা, নাসিম ফকির, সোহেল মোল্লা ও জাহিদুল মৃধা খালে পড়ে গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাদের ডাক চিৎকার শুনে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান। সেতুটি ধসে পড়ায় জগৎ চাঁদ, মধ্য টেপুরা, উত্তর টেপুরা, দক্ষিণ টেপুরা, পূর্ব টেপুরা ও দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। 

এছাড়া, সেতুর পশ্চিম পাড়ে জেবি শেনের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া মাধ্যমিক  বিদ্যালয়ের ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের পারাপারে ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী নিরুপায় হয়ে যাতায়াতের জন্য বর্তমানে সেতুর জায়গায় একটি তিন তক্তার ডিঙ্গী নৌকায় খেয়া পারাপার হিসেবে চালু করেছেন।

কুকুয়া ইউনিয়নের কেওয়াবুনিয়া খালের লোহার সেতুটি সিডরের সময় দুমড়ে মুচড়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখনও সংস্কার করা হয়নি।

স্থানীয় শিক্ষক মোজাম্মেল হক বলেন, সেতুর এক প্রান্তে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের চলাচলের সুবিধার জন্য বাঁশের সাঁকে দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করছে। একই অবস্থা হলদিয়া ইউনিয়নের মোল্লাবাড়ি সংলগ্ন সেতুটি ধসে পড়ার পর স্থানীয়রা একটি বাঁশের সাকো তৈরী করে পারাপার হচ্ছে।

কাউনিয়া খালের সেতুটি ধসের পর সেখানে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে প্লাস্টিকের ড্রাম এবং কাঠ দিয়ে একটি ভাসমান সেতু তৈরী করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এখানে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী কাউনিয়া ইব্রাহিম একাডেমী ও কাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। 

উপজেলা এলজিইডি তালিকা অনুযায়ী দেখা যায়, হলদিয়া ইউনিয়নে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে ১৮টি, গুলিশাখালী ইউনিয়নে ২৫টি, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে আটটি, কুকুয়া ইউনিয়নে চারটি, আমতলী সদর ইউনিয়নে আটটি, আঠারগাছিয়া ইউনিয়নে ২১টি, চাওড়া ইউনিয়নে ১২টি এবং আমতলী পৌরসভায় চারটিসহ মোট ১০০টি সেতু রয়েছে। 

উপজেলা এলজিইডি কার্যালয়ের প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ৯৯টি ঝুঁকিপূর্ণ লোহার সেতুর তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। এ সকল সেতুর প্রবেশমুখে সতর্কীকরণ সাইনবোর্ডসহ ভারী যানবাহন চলাচলের প্রতিবন্ধকতার জন্য খুটি পুতে দেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, ২০০৭-২০০৮ সালে গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্ক সৃষ্টির জন্য এসব সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এই প্রকল্পটি বাতিল করায় ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলো মেরামত কিংবা সংস্কার করা যায়নি। যে সকল স্থানে লোহার সেতু রয়েছে তা অপসারন করে গার্ডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব গোলাম ছরোয়ার ফোরকান বলেন, আমতলী উপজেলার সকল লোহার সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। এসব সেতু পার হয়ে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ মানুষ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে। তাই যেকোনো সময় এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু ধসে আবার বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দুর্ঘটনার আগেই এ সকল সেতু অপসারণ করে গার্ডার সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন। 

বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদি হাসান খান বলেন, অধিক ঝুঁকিপূর্ণ সেতু চিহ্নিত করে সেগুলোর তালিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। আশা করি  খুব শীঘ্রই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলোর স্থানে গার্ডার ব্রিজের কাজ শুরু করা যাবে।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,