For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

চিকিৎসক ছাড়াই তৈরি হয় রোগের ভুয়া সনদ

Published : Tuesday, 9 July, 2024 at 1:22 PM Count : 149

নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নেই টেকনিশিয়ান ও আধুনিক যন্ত্রপাতি। যে দু’একটি রোগ পরীক্ষার চিকিৎসা যন্ত্র রয়েছে, সেটির রক্ষণাবেক্ষণের মতো লোকবল নেই। সেই প্যাথলজিতে রোগীর রোগ নির্ণয় হচ্ছে দিব্যি। এটি করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞ সেজে নিজেরাই রোগ পরীক্ষার প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করছেন প্যাথলজিতে দায়িত্বরত কর্মচারীরা।

এমন জালিয়াতি করে চলেছে রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুরে মোড়ে অবস্থিত অনুমোদনহীন নিউ রাজশাহী স্কয়ার ডায়াগনস্টিক কনসালটেশন সেন্টার। এখানে চিকিৎসা সনদও বিক্রি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এমন জালিয়াতির খপ্পরে পড়ে রোগীরা যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন, তেমনি ভুয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের নামে প্রতারণার মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। এসব কাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে নাম উঠে এসেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মরত (ব্রাদার) মিজানুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে। তিনি এই ডায়গনস্টিক সেন্টারটির মালিক বলে পরিচিত। শুধু তাই নয়, এই মিজান রামেক হাসপাতালের দালাল সিন্ডিকেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৮ জুন রামেক হাসপাতালের ভেতরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সন্ধ্যায় নিউ রাজশাহী স্কয়ার ডায়াগনস্টিক কনসালটেশন সেন্টারের তিন নারী দালালকে আটক করে হাসপাতালের কর্মরত আনসার সদস্যরা। এ সময় তাদের ছাড়াতে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ছুটে যান ব্রাদার মিজানুর রহমান। পরে তিনি হাসপাতালে মুচলেকা দিয়ে ওই তিন নারী দালাল সদস্যকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। এতে হাসপাতালের অন্যান্য ব্রাদারদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের বেশ কয়েকজন ব্রাদার বলেন, মিজান দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালে রয়েছে। তিনি সরকারি চাকরি করলেও একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন। যদিও সেটি সরকারি চাকরি আইন পরিপন্থী।

তারা আরও বলেন, দীর্ঘ সময় চাকরির সুবাদে হাসপাতালের দালালদের সাথে মিজানের বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে ১৩, ১৫ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদিনই মিজান এই দালাল সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর তিনি নিউ রাজশাহী স্কয়ার ডায়াগনস্টিক কনসাল্টেশন সেন্টারে রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর জন্য তার প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে থাকেন।

মিজানের এমন ঘটনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে বেশ কয়েক বার ডেকে মৌখিক ভাবে সতর্ক করেন। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। বরং প্রতিনিয়তই দালাল সিন্ডিকেট নেটওয়ার্ক শক্ত করে গড়ে তুলেছেন এই মিজান।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৮ জুন রামেক হাসপাতালের ১৫ নং ওয়ার্ডে আয়েশা বেগম নামে এক বয়স্ক নারী রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেই রোগীকে চিকিৎসক ইলেকট্রলাইট ও সিভিসি পরীক্ষা করতে দেন। এরপর সেই নমুনাটি নিউ রাজশাহী স্কয়ার ডায়াগনস্টিক কনসালটেশন সেন্টারে পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। মাত্র ১ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে ওই রোগীর দুটি পরীক্ষার সনদ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

আর সেই সনদটি তৈরি করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের (অব.) সহকারী অধ্যাপক ডা. ইরফান রেজার নামে। অথচ এই অধ্যাপক নিজেও জানেন না তার স্বাক্ষর জাল করে তৈরি করা হয়েছে ভুয়া সনদ।

ডা. ইরফান রেজা বলেন, গত ২৮ তারিখ রাতে আমি ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাইনি। সনদে ব্যবহারকৃত স্বাক্ষরটি আমার নয়। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউ রাজশাহী স্কয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির চেয়ারম্যান মিজানের বাবা জয়নাল হোসেন। তিনি পেশায় একজন মুয়াজ্জিন। তিনি বগুড়া জেলার মাগুরা গ্রামে থাকেন। মুয়াজ্জিনের পাশাপাশি তিনি কৃষি কাজ করেন। তবে নিউ রাজশাহী স্কয়ার ডায়গনস্টিক সেন্টারে চেয়ারম্যান হিসেবে জয়নাল হোসেনের নাম উল্লেখ থাকলেও তিনি খুব কম সময়ই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। তবে মিজানই এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সবকিছু দেখভাল করেন।

এসব বিষয়ে জয়নাল হোসেনের সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করতে চাইলে তাকে পাওয়া যায়নি। 

তবে রামেক হাসপাতালের ব্রাদার ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, এরই মধ্যে আমি ওই প্রতিষ্ঠানে ইস্তফা দিয়েছি। ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।

সরকারি চাকরি করে কিভাবে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক হলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার ভুল হয়েছে, সেটি আমি বুঝতে পেরেছি। তাই ইস্তফা দিয়েছি। আর যাদের সাথে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শেয়ারের নামে টাকা নেওয়া হয়েছে, সেই টাকা অল্প সময়ের মধ্যে ফেরত দেয়া হবে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহাম্মদ বলেন, এরই মধ্যে হাসপাতালের ব্রাদার মিজানের বেশ কিছু অভিযোগ সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি। অনুসন্ধান করে তার বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আনোয়ারুল কবির জানান, নিউ স্কয়ার রাজশাহী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কোনো অনুমোদন নেই। তবে তারা অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। যদি সত্যি তারা এমন অনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,