For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

ঈদের আনন্দ চরবাসীর মনে দাগ কাটে না

Published : Thursday, 13 June, 2024 at 2:01 PM Count : 301

ভোলাচরফ্যাশনের মূল ভূ-খন্ড, শহর আর গ্রামে এখন ঈদের আনন্দ বইতে শুরু করলেও দ্বীপ ইউনিয়ন ঢাল চরসহ ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত চরগুলোর চিত্র ভিন্ন। এখানে কখন নদী ভাঙে আর কখন তল্পিতল্পা গোটাতে হয় এই চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটান দ্বীপ চরের বাসিন্দারা।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত চরফ্যাশন উপজেলার চরগুলোর বাসিন্দারা। রেমালে উপজেলার সাগর মোহনার ঢাল চর, চর মোতাহার, চর মানিকা, কলমি চর কুকরি মুকরি ও তেতুলিয়ার পাড়ের মজিবনগরসহ উপজেলার নয় ইউনিয়নের প্রায় ২০টি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট বেশি পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের পানি নেমে গেলেও এখনো দুর্ভোগ কমেনি চরগুলোতে। চরের ভাঙা অংশের সঙ্গে নদীর জোয়ারের লবণাক্ত পানির সংযোগ তৈরি হয়েছে। জোয়ারের সময় পথঘাট লবণ পানিতে ভেসে গেছে।

এখানকার মানুষের ঈদের আনন্দ নেই। প্রতিদিনের মত পরিবারের সবার মুখে খাবার তুলে দেয়ার যুদ্ধ তাদের। অনেকে সন্তানদের কিনে দিতে পারেননি নতুন জামা-কাপড়। ঈদের দিনও হয়তো তাদের ভালো খাবারের পরিবর্তে খেতে হবে ডাল-ভাত। জীবন আগে বাঁচাতে হবে সেই লড়াইয়ে ব্যস্ত সবাই। মনে নেই আনন্দ, এমন অবস্থায় তাদের ঈদের খুশি আসবে কিভাবে। 
সারাদেশে ঈদের আমেজ লাগলেও নদী ভাঙন ও ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষের নেই ঈদের আনন্দ। এবারের ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে চরফ্যাশনে প্রায় ছয় হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। 

এদিকে, গত দুই বছরে নদীর অব্যাহত ভাঙনে বসত-ভিটে হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা এখন নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতেই ব্যস্ত। আবার এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাত। তাদের অধিকাংশের ভাগ্যে এখনো জোটেনি ঈদের নতুন পোশাক। 

তবে জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙনকবলিত মানুষের মাঝে ঈদের আগেই সহযোগিতার হাত বাড়ানো হবে। 

ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের দুঃখের কাহিনী। দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে থাকেন রেনু বেগম। স্বামী মিয়ার চরে গেছেন এক আত্মীয়ের কাছ থেকে একসের চাল আনতে।  

রেনু বলেন, ‘আমাগো ঘর-বাড়ি-জিনিসপত্তর কিচ্ছু নাই। খালি পোতাডা (ভিটা) পইরা আছে। এক কাপড়ে আইজকা সাত দিন। হ্যাগোর (ছেলে-মেয়ের) বাফে (বাবা) গাঙ্গে যাইতে পারে না। চাল টোকাইতে গ্যাছে আরেক চরে। সরকার আমাগো কিছু দেয় না। মাঝে মাঝে মানসে চিড়া, মুড়ি, চিনি দিয়া যায়। হেইয়্যা খাইয়া আছি।’

তিনি বলেন, ‘বইন্যার দিন পোলাডা ভাইস্যা গ্যাছিল। আমিও লগে। যেরুম হউক হাতরাইয়া-মাতরাইয়া উডলাম। ওইদিনকার থেইকা ভাত খাওয়া বন্ধ। পোলাডা কান্দে ভাতের জন্য। কিন্তু মুই কি হরমু। মোরতো হাতে কোনো কাম নাই।’

জরিনা বেগম নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘মোগো আর কিছু নাই। কোস্টের (কোস্ট ফাউন্ডেশন) বিল্ডিং না থাকলে মোরাও ভাইস্যা যাইতাম। এহন হউর-হাউড়ি (শ্বশুর-শাশুড়ি), পোলা-মাইয়্যা লইয়্যা পাঁচ জন আছি শুধু। ঘরে ভাত নাই, পেন্দনের (পড়ার) মতো কাফুর (পোশাক) নাই। এক কাফুরেই আছি। সরকার মোগো এক মুঠ চাউলও দেয় নাই এহনো।’

ঢাল চর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম পাটওয়ারী বলেন, ‘ঢাল চর ইউনিয়নটি তছনছ হয়ে গেছে। হাজার খানেক গবাদিপশু ভেসে গেছে। ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। মানুষ খুবই মানবেতন জীবনযাপন করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার থেকে কোনো ত্রাণ সামগ্রী আমাদের চরে এসে পৌঁছেনি।’

বর্তমান ইউপি সদস্য মো. মোস্তফা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর ঢাল চরের মানুষ এক কথায় না খেয়ে আছে। শত শত পরিবার তাদের সহায়-সম্বল হারিয়েছে। অথচ আমাদের কেউ খোঁজ নিতেও আসে না। কোনো সহায়তাও আসে না। মানুষগুলো খাবারের জন্য হাহাকার করছে।

বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ঢাল চরে এখনো কোনো সহায়তা আমরা পাইনি। বিভিন্ন সময়ে চিড়া, মুড়ি, চিনি বা এক বেলা খিচুড়ি রেধে নিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবকরা। সেগুলো অল্প কিছু বাসিন্দার মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। মানুষ খাবার, বাসস্থান ও পানির সংকটে ভুগছে। এছাড়া গত দেড় মাস ধরে নদী ভাঙনের কবলে বসতবাড়ি হারিয়েছে অন্তত ৮/৯ শত পরিবার। নদীতে চলে গেছে স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও বিস্তর ফসলি জমি।

ঘূর্ণিঝড়ের পর বর্তমানে ঢাল চরের মানুষ নিজেদের বাড়ি-ঘর নাই বললেই চলে। বেশীর ভাগ মানুষ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। তাই আসন্ন ঈদের আনন্দ তাদের মনে আর দাগ কাটছে না। ঈদের দিনের কথা বলতেই এভাবে ক্ষোভ আর দুঃখের কথা জানালেন গৃহবধু সেলিনা (৩৫)।

তিনি বলেন, ‘১২ গন্ডা জমি ছিলো, পুকুর ছিলো, হাস-মুরগী আর গরু-ছাগল ছিলো। এখন আর কিছুই নেই। নদীতে ৬ ভাঙ্গা দিয়েছে তারপরও ছিলাম, এবারের ঘূর্ণিঝড়ের সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব। আমাদের আবার ঈদ আনন্দ কিসের? ঘূর্ণিঝড় গেছে এখন নদী তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এখন কোথায় আশ্রয় নেই সেই চিন্তায় আছি।

তিনি আরও বলেন, সরকারের দপ্তর থেকে ঈদ উপলক্ষে ঈদ বস্ত্র বিতরণ হলেও আমরা পাইনী, এই যে ঈদ আসছে,  চারদিকে হাসি আনন্দ আর উৎসব। কিন্তু আমাদের দুঃখ-কষ্টের কথা কেউ শোনেনা।

সবকিছু মিলিয়ে এবারের ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে আর নদী ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব চরবাসী। চরের মানুষের ঈদের আনন্দের নেই বললেই চলে।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,