সাভারে ভোটার শূন্য কেন্দ্রের বাইরে বসে খোশগল্প কিংবা লুডু খেলে অলস সময় পার করছেন দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। আর কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ভোটারের অপেক্ষায় নিরব চাহনি প্রিজাইডিং সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং এজেন্টরা। কিন্তু বেলা পেরিয়ে প্রায় দুপুর গড়ালেও রাজধানীর অদূরে সাভার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দেখা নেই ভোটারের।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ঢাকার সাভার উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
সাভারে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় মঞ্জুরুল আলম রাজীব নির্বাচিত হওয়ায় ভোটের আমেজে খানিকটা ভাটা পড়েছে। তবে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও ভোটার আকৃষ্টে ব্যর্থ হয়েছেন তারা।
দ্বিতীয় ধাপের ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঢাকার সাভারে সকাল থেকে চললেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার না আসায় অলস সময় পার করছেন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় যথাযথ প্রচার প্রচারণাও ছিল না সাভার উপজেলা নির্বাচনে। ফলে অনেক ভোটার জানেই না ভোটের খবর।
আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার ডেন্ডাবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’টি কেন্দ্রে সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত একটিও ভোট কাস্ট হয়নি। এই দুই কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়োজিত আনসার সদস্য জাকারিয়া হোসেন ও মিজানুর রহমানকে দেখা যায় কেন্দ্রের বাইরে টুল পেতে লুডু খেলায় মশগুল। তাদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ভোটার শূন্য মাঠ তাই অলস বসে থাকতে বিরক্ত লাগছে সেজন্য লুডু খেলে সময় পার করছি।
মোঃ মাইদুল নামে অপর আনসার সদস্য জানান, এ পর্যন্ত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্ত এমন ফাঁকা ভোটকেন্দ্র কখনও দেখিনি। এবারের নির্বাচন একটি রেকর্ড হয়ে থাকবে।
কেন্দ্র দু’টির দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার ওসমান গনী ও মোশাররফ হোসেন মন্ডল জানান, এই দুই কেন্দ্রে ৪ হাজার ৯৬ জন ভোটারের মধ্যে বেলা ১১টা পর্যন্ত একজন ভোটারও ভোট দিতে আসেননি। তবে তাদের আশা হয়তো বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে।
ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে সাভার উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন মঞ্জুরুল আলম রাজীব। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় আমেজ ছিল না নির্বাচনী মাঠে। ভাইস চেয়ারম্যানদের নির্বাচনী প্রচারণা তেমন না থাকায় ভোটাররা জানেন না নির্বাচনের খবর। এছাড়া প্রচার-প্রচারণা, পোস্টার, লিফলেট ও মাইকিং করে ভোট চাওয়ার চিরাচরিত নিয়ম তেমন ছিল না বললেই চলে। বাড়ি বাড়ি যাননি কোনো প্রার্থী।
স্থানীয় ভোটার মুদি দোকানদার আলী বলেন, আজ যে নির্বাচন হচ্ছে, এটা ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনি বললেন তাই মনে পড়ে গেল। এই নির্বাচনের খবর অনেকেই জানে না। আমার অনেক ক্রেতাও নির্বাচনের খবর জানে না।
দোকানটিতে থাকা কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তানিয়া আক্তার নামের এক ক্রেতা বলেন, আমরা সারা দিন কারখানায় কাজ করি। কোনো প্রার্থী কারখানাতেও যায়নি, বাসাতেও আসেনি। কোথাও কোনো পোস্টারও দেখিনি। কবে নির্বাচন এটাও তো জানি না। আগের নির্বাচনে মাইকিং শুনেছিলাম, এবার তো তাও শুনলাম না।
সাভার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহুল চন্দ্র বলেন, এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে যিনি ছিলেন তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় ভোটারদের আগ্রহ খুবই কম। আর সেজন্যই ভোটার উপস্থিতি বলতে একেবারে শূন্য।
প্রসঙ্গতঃ ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে সাভার উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ভাইস চেয়াম্যান পদে প্রতিন্দ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন— ঢাকা জেলা উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন, আশুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মোশাররফ খান ও ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইদুল ইসলাম।
সংরক্ষিত মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা উত্তর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াসমিন আক্তার সুমী, ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি মনিকা হাসান ও অধ্যক্ষ নাদিয়া নুর তনু।
ওএফ/এসআর