বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪৩১ উদযাপনের মঞ্চ প্রস্তুত। বাঙালির প্রাণের উৎসবকে বরণ করে নিতে উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
‘আমরা তো তিমির বিনাশী’ প্রতিপাদ্য নিয়ে রোববার সকাল সোয়া ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হবে। শাহবাগ মোড় হয়ে শিশু পার্কের সামনে দিয়ে ঘুরে ফের শাহবাগ হয়ে ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে (টিএসসি) গিয়ে শেষ হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা।
মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক রাহাত সাদিত সমকালকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছি। যথাসময়ে শোভাযাত্রা শুরু হবে।
শনিবার চারুকলা অনুষদে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি ও নববর্ষ উদযাপনের সার্বিক আয়োজন পরিদর্শন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দেবেন।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় বড় আকারের প্রতীকগুলো লোকসংস্কৃতির উপকরণ ও দেশের বিপন্ন প্রাণী নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- হাতি, বনরুই, চাকা, গন্ধগোকুল ও টেপা পুতুল। এ ছাড়া রয়েছে বড় আকারের রাজা-রানীর দুটি মুখোশ। ছোট আকারে হাতে বহন করার মতো ফুল, প্যাঁচা, পাখির মুখোশও থাকবে শতাধিক।
মঙ্গল শোভাযাত্রায় যে নির্দেশনা মানতে হবে
নববর্ষ উদযাপনে বিশ্ববিদ্যালয় কতিপয় নির্দেশনা দিয়েছে। পহেলা বৈশাখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরিধান এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভুভুজেলা বাঁশি বাজানো ও বিক্রি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ক্যাম্পাসে নববর্ষের সকল অনুষ্ঠান বিকাল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। ৫টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে। এরপর কোনভাবেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে না, শুধু বের হওয়া যাবে।
ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সম্মুখস্থ রাজু ভাস্কর্যের পেছনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট বন্ধ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আগত ব্যক্তিবর্গ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য চারুকলা অনুষদ সম্মুখস্থ ছবির হাটের গেইট, বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট ব্যবহার করতে পারবেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে প্রস্থানের পথ হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেইট, রমনা কালী মন্দির সংলগ্ন গেইট ও বাংলা একাডেমির সম্মুখস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইট ব্যবহার করা যাবে।
নববর্ষ উপলক্ষে নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
যার যে কর্মসূচি
শুভ নববর্ষ-১৪৩১ উপলক্ষে রাজধানীর সদরঘাট বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন ওবায়দুল কাদের।
এ দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাংলাদেশি বিভিন্ন নৃ—গোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব ও নববর্ষ উপলক্ষে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বর্ষবরণ উদযাপনে পহেলা বৈশাখ বর্ষবরণ ১৪৩১ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা’- এই প্রতিপাদ্যে রোববার বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ অনুষ্ঠান হবে। উদ্বোধন করবেন আন্তর্জাতিক থিয়েটার ইনস্টিটিউট- আইটিআই এর সাম্মানিক বৈশ্বিক সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। উদ্বোধন পর্বে অংশ নেবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নেতৃবৃন্দসহ বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ।
সভাপতিত্ব করবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি লেখক-গবেষক গোলাম কুদ্দুছ। আয়োজনে থাকছে একক ও দলীয় গান, নাচ ও আবৃত্তি এবং পথনাটক।
পহেলা বৈশাখ, বাংলা বর্ষবরণের আয়োজনের সময় সংকোচন করে সরকারের দেওয়া সিদ্ধান্ত মানবে না বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। রোববার পহেলা বৈশাখের দিন সন্ধ্যা ৬টা ০১ মিনিটে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে উদীচী। বাংলা বর্ষবরণ আয়োজনের অনুষ্ঠান শেষ করার সরকার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর শুরু হবে ‘বর্ষবরণ মানে না শৃঙ্খল’ শিরোনামে উদীচীর অনুষ্ঠান।
এমবি