For English Version
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
হোম

নাম বদলের পরিণতি: লাশ সৎকার নিয়ে জটিলতা

Published : Saturday, 2 March, 2024 at 10:47 AM Count : 282

রাজধানীবেইলি রোডে বৃহস্পতিবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে একজন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। পেশায় তিনি নারী সাংবাদিক। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ইনস্টিটিউটের মর্গে রয়েছে তার মরদেহ। মরদেহ নিতে এসেছেন তার বাবা শাবলুল আলম সবুজ। 

কিন্তু মরদেহ নিতে গিয়ে শাবলুল আলম জানতে পারেন নিহতের নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। পরিবারের অগোচরেই না কি ধর্ম পরিবর্তন করেন মেয়ে। কিন্তু নিহতের আসল নাম বৃষ্টি খাতুন বলে জানান তার বাবা। এর ফলে সৃষ্ট জটিলতায় শনিবার সকাল পর্যন্ত লাশ হস্তান্তর করা হয়নি।

প্রাথমিক ভাবে অভিশ্রুতি শাস্ত্রীকে শনাক্ত করেন তার সহকর্মীরা। তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের হয়ে নির্বাচন কমিশন বিট কভার করতেন। 

জানা গেছে, তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বনগ্রামে।
সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের পরিবার, স্বজন ও বেতবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ।

তার বাবা শাবলুল আলম সবুজ ইসলাম ধর্মের অনুসারী এবং তার মা স্ত্রী বিউটি বেগমও ইসলাম ধর্মের অনুসারী। তবে অভিশ্রুতির বায়োডাটায় দেখা গেছে তিনি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী।

বৃষ্টির মা বিউটি বেগম ও তার খালা সাবানা খাতুন বলেন, বৃষ্টি কবে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছে জানি না। সে মুসলিম পরিবারের মেয়ে। সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন। তার লাশ আমরা গ্রামের বাড়িতে দাফন করব। বৃষ্টি যতই ভুল করুক না কেন, আমাদের সন্তান আমরা দাফন করব।

তামিম নামে বৃষ্টির কাজিন জানায়, বৃষ্টি ধর্মান্তরিত হয়েছিল। তারপর স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টির সত্যতা মেলে।

৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ বলেন, অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল নাম বৃষ্টি। তিনি মুসলিম। বৃষ্টি ইডেন কলেজে পড়াশোনা করতেন। সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি।

নিহত সাংবাদিকের বাবা শাবলুল আলম সবুজ রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। দরিদ্র পিতার তিনটিই কন্যা সন্তান। বৃষ্টি খাতুন সবার বড়। মেঝো মেয়ে শারমিনা সুলতানা ঝর্ণা রাজবাড়ী সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে বর্ষা পড়ে দশম শ্রেণিতে।

বৃষ্টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়েছেন গ্রামের বিদ্যালয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছেন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার ইডেন কলেজে দর্শন শাস্ত্র নিয়ে পড়েছেন। উচ্চশিক্ষা শেষ করার আগে বিসিএস কোচিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।

নিহতের ছোট বোন শারমিনা সুলতানা ঝর্না বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে মায়ের সঙ্গে বৃষ্টির শেষ বার মোবাইল ফোনে কথা হয়। বৃষ্টি সাংবাদিকতা করলেও বাড়ি থেকে মা টাকা পাঠাতেন। বড় বোনের মৃত্যুতে তাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। দুই মাস আগে অভিশ্রুতি সর্বশেষ গ্রামের বাড়ি এসেছিলেন।

তার বোন হিন্দু ধর্মে গ্রহণ করেছিলেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা হতেই পারে না। আমার বোন মনে প্রাণে একজন মুসলিম। সে কখনই নিজ ধর্ম ত্যাগ করেনি। তবে সম্প্রতি তার বোন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে ফেসবুক আইডি খুলেছিলেন এবং ওই নামেই সাংবাদিকতা করতেন বলে স্বীকার করেন ঝর্না।

বেতবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও বনগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পাশ করে বৃষ্টি। স্বাধীনচেতা ছিল। ছোট বেলা থেকে সে সরকারি বড় চাকরির স্বপ্ন দেখত।

বৃষ্টির ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়টি তিনিও অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, মাস দুয়েক আগে ওর সঙ্গে রাজধানীর ফার্মগেটে দেখা ও কথা হয়। তার দাবি ধর্মান্তরের যে কথাটি বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

জানা গেছে, মুসলিম পরিবারে বেড়ে উঠলেও অভিশ্রুতি ওরফে বৃষ্টি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতো চলাফেরা করতেন, নিজেই নিজের নাম বদলে 'অভিশ্রুতি' রাখেন। সহকর্মীরাও তাকে অভিশ্রুতি হিসেবেই চিনতেন। হিন্দিতে কথা বলায় পটু ছিলেন তিনি। তার যাতায়াত ছিল রমনা কালী মন্দিরেও। তবে পারিবারিক পরিচয় গোপন করতেন। কর্মক্ষেত্রে জমা দেওয়া বায়োডাটায়ও নিজেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী হিসেবে উল্লেখ করেছেন এই তরুণী।

রমনা কালী মন্দির কমিটির সভাপতি উৎপল সাহা বলছেন, নিয়মিত মন্দিরে এসে হিন্দু ধর্ম চর্চা ও পূজা-অর্চনা করতেন ওই সাংবাদিক তরুণী। 

এসব কারণে শনিবার সকাল পর্যন্ত অভিশ্রুতি ওরফে বৃষ্টির লাশ বুঝে পাননি শাবলুল আলম সবুজ শেখ। শুরুতে তাকে একবার প্রতারক সন্দেহ করে আটকও করা হয়েছিল। তবে পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশ লাশ হস্তান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে লাশ কুষ্টিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজের অগ্নিকাণ্ডে মারা যান অভিশ্রুতি ওরফে বৃষ্টি। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের হয়ে নির্বাচন কমিশন বিট কভার করতেন। দুর্ঘটনার আগে এক বন্ধুর সঙ্গে গ্রিন কোজি কটেজের একটি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন তিনি।

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,