শিশু মরিয়ম হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন, মূল আসামী গ্রেফতার
Published : Wednesday, 7 February, 2024 at 11:17 PM Count : 298
৪৮ ঘন্টার মধ্যে পটুয়াখালীর দশমিনায় চাঞ্চল্যকর শিশু কন্যা মরিয়ম (৮) হত্যার মূল রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই শিশুর মা রিনা বেগম (৩৮) ও চাচা সেন্টু মৃধাকে (৫০) গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারী) বিকালে জেলার দশমিনা উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড রামবল্লভ গ্রামে ঘটনাস্থলের পাশেই জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
শিশুটির মা গ্রেফতার রিনা বেগম ওই গ্রামের মকবুল মৃধার স্ত্রী এবং গ্রেফতার চাচা সেন্টু মৃধা মৃত মুজাফফর আলী মৃধার ছেলে।
পুলিশ সুপার বলেন, গত ৩ ফেব্রুয়ারী বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে শিশু মরিয়ম (৮) বাড়ির পাশেই তার চাচা আলালের ঘরে আলালের নাতনীর সাথে খেলতে যায়। ঘটনায় জড়িত মরিয়মের চাচা সেন্টু মৃধা (৫০) আলালের ঘরে গিয়ে পান খাওয়ার ছলে মরিয়মকে নজরদারিতে রাখে। মরিয়ম আলালের ঘর থেকে সন্ধ্যা পৌনে ৭ টার দিকে বের হয়ে ফুফুর বাড়িতে যাওয়ার সময় সেন্টু তার পিছু নেয়। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ওই পথে দাড়িয়ে থাকা ভিকটিম শিশু মরিয়মের মা রিনা বেগম অদূরেই বিশ্বাস বাড়িতে ঘুরে আসবে বলে ঘটনাস্থলের দিকে যায়। স্বাভাবিকভাবেই মেয়ে মায়ের কথা বিশ্বাস করে মায়ের সাথে হাটতে থাকে। সেন্টু সামনে থাকে। সেন্টু একটু আগেই ঘটনাস্থল সামসুর পরিত্যক্ত ভিটায় পৌঁছায়। একটু পর রিনা বেগমও শিশু কন্যা মরিয়মকে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখানে শিশু মরিয়ম যাতে চিৎকার দিতে না পারে সেজন্য শিশুটির ব্যবহৃত ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় মা রিনা বেগম। তখন সেন্টু মৃধা রেইন্ট্রি গাছের ডাল দিয়ে মরিয়মের মাথায় দুইটি ও পায়ে একটি আঘাত করলে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলেই শিশুটির মৃত্যু হয়। শিশুটির মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে চাচা সেন্টু একদিকে ও মা রিনা বেগম বাড়ির দিকে চলে যায়। রিনা বাড়িতে গিয়ে চিৎকার করে মেয়ে মরিয়মকে খুঁজতে থাকে। নিজের শরীরে রক্ত লেগে আছে সন্দেহে রক্ত ধুয়ে ফেলার জন্য মেয়ে মরিয়মকে খোঁজার ছলে পুকুরে লাফ দেয়।
পুলিশ সুপার বলেন, অধিকতর তদন্ত ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এ ঘটনায় সেন্টু মৃধাকে গ্রেফতারের পর সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। তার স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে ঘটনাস্থলের পাশ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত চারটি গিটযুক্ত একটি রেইন্ট্রি গাছের ৪৭ ইঞ্চি দীর্ঘ ডাল জব্দ করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেফতার উভয় আসামীই মরিয়ম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। আসামীদের সাথে জমিজমার বিষয়ে একই বাড়ির রাজ্জাক মৃধা, হারুন মৃধা গংদের সাথে মামলা মোকদ্দমাসহ বিরোধ বিদ্যমান রয়েছে মর্মে জানা যায়। রাজ্জাক মৃধা, হারুন মৃধা গংদের ঘায়েলের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শিশুটির চাচা সেন্টু মৃধা ও মা রিনা বেগম কয়েক মাস যাবত এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ৩ ফেব্রুয়ারী সেন্টুর সাথে রিনা একাধিকবার মোবাইল ফোনে কথা বলে এবং শিশুটির পিতা বাদী মকবুল মৃধার বোন ফরিদার বাড়িতে দুপুরে একসাথে খাবার খায়। সেখানেই হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা করে তারা।
প্রসঙ্গত, গত ৩ ফেব্রুয়ারী রাতে শিশুটির বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ গজ উত্তরে বিলের মধ্যে জনৈক শামসু বিশ্বাসের পরিত্যক্ত ভিটি থেকে মরিয়মের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মরিয়ম উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড রামবল্লভ গ্রামের মকবুল মৃধার মেয়ে। সে স্থানীয় উত্তর রামবল্লভ অগ্রণী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।
এ ঘটনায় নিহত শিশুটির পিতা মকবুল মৃধা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে গত ৫ ফেব্রুয়ারী দশমিনা থানায় একটি পরিকল্পিত হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এসটি/এসআর