চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগকালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালের হালনাগাদ লাইসেন্স নেই |
![]() গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বড়নগর সড়কে অবস্থিত কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার (১৮ নভেম্বর) এ ঘটনা ঘটনা ঘটে। এই হাসপাতালটির হালনাগাদ লাইসেন্সসহ কোনো কাগজপত্র ছিল না বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম মনজুর-এ-এলাহী। মৃত মুক্তা দে (৩২) কালীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রী কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। তিনি উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের মুকুল দে'র মেয়ে ও ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার মহদীপুর গ্রামের শ্রীকান্ত সরকারের স্ত্রী। তার চার বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। এটা ছিল তার দ্বিতীয় সিজার। নবজাতক পুত্র সন্তানটি বর্তমানে সুস্থ আছে। জানা যায়, গত শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে প্রসব বেদনা উঠলে প্রভাষক মুক্তা দে কে গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার বড়নগর সড়কে অবস্থিত কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যান তার স্বজনরা। সেখানে যাওয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে সিজারের পরামর্শে দেন ডাক্তার। কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডাক্তার মো. মাইনুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে সিজার শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুক্তাকে দেওয়া হয় বেডে। পরে রাত আড়াইটার দিকে রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ডাক্তার মাইনুল ইসলাম কালীগঞ্জের সাবেক এক গাইনি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে তড়িঘড়ি করে উত্তরার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। রোগীর স্বজনরা উপায়ান্তর না পেয়ে একটি প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সে উত্তরার ওই হাসপাতালে নিয়ে যেতে রওনা হয়। রাস্তার রোগীর অবস্থা খারাপ হলে এ্যাম্বুলেন্সের চালকের পরামর্শে উত্তরার অন্য একটি হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা। সেখানে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে সেই হাসপাতাল রোগীকে সেখানে না রাখায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথিমধ্যেই প্রসূতি মুক্তার মৃত্যু হয়। অভিযুক্ত ডাক্তার মো. মাইনুল ইসলাম কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালে সিজার করাতেন। এছাড়াও তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল হাসপাতালে কর্মরত আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, সিজারের পর রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখেও ডাক্তার না থাকায় সময়মত অন্যত্র রেফার্ড করা হয়নি। রাত ৩টার দিকে রেফার্ড করা হয়। ওই সময় যানযাহন সময়মত না পাওয়া এবং রোগীর অবস্থা অনুয়ায়ী এ্যাম্বুলেন্স চালানো সব মিলিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, ডাক্তার মাইনুল ইসলাম রাত ১১টার দিকে সিজার করে স্থানীয় অন্য আরেকটি হাসপাতালে সিজার করাতে যায়। এদিকে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে তিনি রোগী দেখে ব্যবস্থা নেবেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান। রাতে অবস্থা খারাপ হলে তিনি পুনরায় এসে রোগী দেখে অন্য এক গাইনি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে তড়িঘড়ি করে উত্তরায় পাঠান। জানা যায়, চলতি বছরের জুলাই মাসে কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালকে ‘দি মেডিক্যাল প্রাকটিস এন্ড প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ল্যাবরেটরি অরডিন্যান্স ১৯৮২ এর ০৯ ধারায় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রামামাণ আদালত। হালনাগাদ কাগজপত্র না থাকার পরও কেন ওই হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, উনাদের একাধিকবার হাসপাতালে ডাকা হয়েছে এবং আমাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিল। তবে এখন যেহেতু একটা ঘটনা ঘটেই গেছে, বিষয়টি নিয়ে সব ধরনের তদন্ত করা হচ্ছে। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল ইসলাম কুসুমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। কালীগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করা অভিযুক্ত ডা. মাইনুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের এখানে সিজার হয়েছে ঠিক আছে। পরে রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে আমি তাদের রেফার্ড করেছি। কিন্তু তারা সময় মত নিয়ে যায়নি।' সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজিজুর রহমান বলেন, 'বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়ে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নেব।' -আরএস/এমএ |