For English Version
রবিবার ৬ অক্টোবর ২০২৪
হোম

কী আছে রাজশাহীর বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে?

Published : Friday, 17 November, 2023 at 7:31 PM Count : 469


রাজধানী ঢাকার পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নভোথিয়েটার তৈরি করা হয়েছে রাজশাহী মহানগরীতে। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার’।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গত মঙ্গলবার আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছে, দেশের সর্ববৃহৎ পরিধির এই স্থাপনায় থাকছে প্ল্যানাটেরিয়ামসহ ফাইভ-জি হল ও আধুনিক অবজারবেটেড টেলিস্কোপ; যা দেশে প্রথম। তবে বিজ্ঞান অনুরাগীরা বলছেন, শুধু প্রদর্শনীর জন্য প্রকল্প না করে এখানে গবেষণার সুযোগ না থাকলে বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গড়ে উঠবে না।
২০১৮ সালে ২৩২ কেটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান উদ্যানের সামনে নির্মাণ শুরু হয়। নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে কাজ শেষ হয় চলতি বছরের জুলাই মাসে।

রাজশাহী গণপূর্ত-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ জানান, প্রকল্পে শুধু ভবন তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১৪০ কেটি টাকা, আর বাকি অর্থ ব্যয় হয়েছে নভোথিয়েটারের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য খাতে। শুধু প্ল্যানেটেরিয়াম ছাড়াও এখানে রয়েছে বিশাল জায়গা। যেকোনো বিজ্ঞান প্রদর্শনী ছাড়াও চাইলে শিক্ষা বিষয়ক নানা অনুষ্ঠান এখানে করা সম্ভব। স্থাপন করা হচ্ছে বিশ্বের আধুনিক টেলিস্কোপ। যা দিয়ে গবেষকরা নভোমণ্ডলের গবেষণা আরও এগিয়ে নিতে পারবেন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্পটি গণপূর্ত অধিদপ্তর যথাযথ গুণগত মান বজায় রেখে নির্মাণ করেছে বলে জানান তিনি। প্রতিটি ফ্লোরে ১ লাখ ৪০ হাজার করে স্থান রয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক ডেকোরেশন। লাইটিং, ভবনের সম্মুখে সুদৃশ্য পানির ফোয়ারা। পুরো ভবনে সেন্ট্রাল এসি স্থাপন, টিকিটিং সিস্টেম পুরোপুরি অটোমেটেড ও ডিজিটাল। আধুনিক ফায়ার প্রটেকশন ও ডিটেকশন ব্যবস্থাসহ নিরাপত্তা নিশ্চিতে লাগানো হয়েছে ১৪০টিরও বেশি সিসি ক্যামেরা।

দর্শনার্থীদের জন্য আরও থাকছে অন্তত ১০০টি কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আধুনিক ভবন এই বিজ্ঞান গবেষণা ও মহাকাশ প্রদর্শনী কেন্দ্রটি। এখানে কয়টি শো এখানে চলবে বা টিকিটের দাম কতো হবে, তা এখনো জানানো হয়নি। সেটি ঠিক করবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

প্রকল্পের মূল আকর্ষণ প্ল্যানাটেরিয়াম। চওড়া সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে তিন তলায় যেতে ভেতরে দুটি বড় সিঁড়ি ছাড়াও রয়েছে লিফট ও এস্কেলেটর। তৃতীয় তলায় পূর্ব উত্তর কোনায় বসানো হয়েছে ডুম বা গম্বুজ। কক্ষটিতে প্রবেশ করতে হচ্ছে জুতো খুলে। কারণ ভেতরে খুবই স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও মেঝেতে বিছানো হয়েছে মূল্যবান মাদুর। সারি সারি লাল রঙের আরামদায়ক চেয়ার স্থাপন করা শেষ। কম্পিউটারের মাধ্যমে অপারেট করা হবে এ প্রদর্শনী কেন্দ্রটি।

সফটওয়ার চালুর সঙ্গে সঙ্গে ক্লিক করলেই গম্বুজের চারপাশ থেকে হালকা আলোতে আলোকিত হলো মাথার ওপরের সাদা পর্দা। চারপাশের মোট ৫টি প্রোজেক্টর একসঙ্গে চালু হয়ে শুরু হয় দ্যা বিগ ব্যাং শো। অসীম মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি, সূর্য, চাঁদ, গ্রহ, নক্ষত্র সবই এক পর্দায় ভেসে উঠছে নিমিষেই। নিখুঁত সাউন্ডের জন্য পুরো হলে লাগানো হয়েছে ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম। যা আপনাকে প্রদর্শনীর মাধ্যমে নিয়ে যাবে সরাসরি মহাশূন্যে গ্রহ-নক্ষত্রের খুব কাছে।

একসঙ্গে ১৫০ জন এমন আসনগুলোতে বসে অসীম মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতে ও দেখতে পারবেন। দিনে অন্তত ৬ থেকে ৭টি শো চালানো সম্ভব বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে শিশুরা বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী হবে। বিজ্ঞানমনস্ক জ্ঞান পিপাসুরা আধুনিক টেলিস্কোপের মাধ্যমে নভোমন্ডল প্রত্যক্ষ ও গবেষণায় যুক্ত হতে পারবেন।

এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলছেন, রাজশাহীতে এ নভোথিয়েটার অসীম মহাকাশ সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শেখাবে দর্শনার্থী ও শিক্ষার্থীদের। শিক্ষা নগরী হওয়ায় ভবিষ্যতে এখানে মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কিত একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হবে। এছাড়া সুন্দর এ মহানগরীতে পর্যটন খাতেও নভোথিয়েটার জুড়ে দেবে নতুন এক মাত্রা। তিনি আশা করছেন, নভোথিয়েটারের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সফল হবে।

এমন একটি প্রতিষ্ঠান রাজশাহীতে পেয়ে খুশি বিজ্ঞান পিপাসুরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক সাজ্জাদ বকুল এবং সামাজিক উন্নয়নকর্মী সুব্রত কুমার পাল বলছেন, এটি অবশ্যই মহানগরবাসীর জন্য খুবই ভালো সংবাদ। কিন্তু এটি যেন শুধু দর্শনার্থীদের জন্য বিনোদনের কেন্দ্র না হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানটিতে বিজ্ঞান চর্চা, মহাকাশ নিয়ে পড়াশোনা ও ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ থাকতে হবে বলে মনে করছেন তারা।

অন্যান্য দেশের উদাহরণ টেনে তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের মহাকাশ সম্পর্কে ধারণা দিতে এবং বিজ্ঞানমনষ্ক করে গড়ে তুলতে নভোথিয়েটারের চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না। কে জানে হয়তো ভবিষ্যতে এ শিক্ষার্থীরাই হয়ে উঠবে মহাকাশ বিজ্ঞানী, কাজ করবে নাসার মতো প্রতিষ্ঠানে।

মহানগরীর সাহেব বাজার থেকে কোর্ট পর্যন্ত যে সড়ক সেটির পাশেই দূর থেকে সুদৃশ্য ভবনটির নীল গম্বুজ আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবে রাজশাহীর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার’ এর সঙ্গে। এখন সবাই অপেক্ষায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের।

নভোথিয়েটার নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক নায়মা ইয়াসমীন বলেন, নভোথিয়েটার এখন দর্শনার্থীদের জন্য প্রস্তুত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং রাজশাহীর জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে এখন এটি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।


এমবি

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,