মণিপুরি, গারো ও খাসিয়াদের পৃথক উৎসব ঘীরে চলছে প্রস্তুতি |
![]() পর্যটন নগরী হিসেবে সারাদেশের মধ্যে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার খ্যাতি রয়েছে। এখানে যেমন রয়েছে সারি সারি চায়ের বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হাওর, লেক ইত্যাদি, পাশাপাশি রয়েছে লোকালয় ও উচু নিচু টিলার উপরে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীরা। এখানে আসা পর্যটকদের কাছে তাই এই ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর জীবনযাপন ও তাদের নানান উৎসব আকর্ষণ করছে পর্যটকদের। সারাবছরই নানান অনুষ্ঠানে মেতে উঠেন ক্ষুদ নৃ গোষ্ঠীরা। তবে প্রধান উৎসবগুলো হয় শীতেই। ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে এ বছরের এই নভেম্বর মাসেই গারো, খাসি (খাসিয়া) ও মণিপুরিদের পৃথক বড় তিনটা উৎসব রয়েছে। যে উৎসবগুলো দেখতে ভীড় জমান দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পর্যটক ও স্থানীয়রা। শ্রীমঙ্গলে গারোদের ওয়ানগালা উৎসব: গারোদের অন্যতম বড় উৎসব ওয়ানগালা। সাধারণত শীতের শুরুতে নতুন ফসল ঘরে তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে তাদের নতুন খাদ্যশস্য খাওয়া নিষেধ। গারো ভাষায় ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেব-দেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ শব্দের অর্থ উৎসর্গ করা। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে তারা তাদের দেবতার কাছে ফসল উৎসর্গ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই এ উৎসবের উদ্দেশ্য। আগামী ১৯ নভেম্বর রোববার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়ি গারো পল্লীর মাঠে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসবাসরত গারো জনগোষ্ঠীর লোকজন ছাড়াও অন্যান্যরা এই উৎসবে যোগ দিবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকেরা। কমলগঞ্জে খাসিদের (খাসিয়া) খাসি সেং কুটস্নেম উৎসব: খাসি (খাসিয়া) জনগোষ্ঠীর প্রধান উৎসব খাসি সেং কুটস্নেম। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে খাসিরা তাদের পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। আগামী ২৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার খাসি (খাসিয়া) জনগোষ্ঠীর এই 'খাসি সেং কুটস্নেম' উৎসব আয়োজন করা হয়েছে।মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মাঠে দিনব্যাপী এই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। উৎসব উপলক্ষে খাসি সোশ্যাল কাউন্সিল বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ঐতিহ্যগত খেলা, ঐতিহ্যগত পোশাক পরিধান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ঐতিহ্যবাহী খাবারসহ আরও অনেক কিছু। মেলায় খাসিয়া জনগোষ্ঠীর মানুষ বসবেন বাহারি পণ্যের পসরা নিয়ে। বিভিন্ন স্টলে খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, পান, তীর, ধনুকসহ বাঁশ-বেতের জিনিসপত্র থাকবে। সিলেট বিভাগের প্রায় প্রত্যেকটি পুঞ্জি থেকেই এখানে এসে সবাই উৎসবে যোগ দেবেন। কমলগঞ্জে মণিপুরীদের মহারাস লীলা উৎসব: নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা, সাহিত্য ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির দিকে এগিয়ে থাকা মণিপুরিদের প্রধান উৎসব মহারাস লীলা উৎসব। আগামী ২৭ নভেম্বর ১৮১তম সোমবার কমলগঞ্জের মাধবপুরের শিববাজারে (জোড়ামণ্ডপে) ও আদমপুরের তেতইগাঁওয়ে আয়োজন করা হয়েছে এই উৎসবের। রাস উৎসবের দুটি পর্ব থাকে। দিনের বেলায় রাখালনৃত্য আর রাতে মহারাস। রাখাল নৃত্যে শ্রীকৃষ্ণের শিশুকাল এর নানান লীলা তুলে ধরা হয়। রাতের বেলা শুরু হয় মহারাস লীলা। ভোর অব্দি রাধাকৃষ্ণের নানান কাহিনি ফুটিয়ে তুলেন মণিপুরিরা। মাধবপুর মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাংঘঠনিক সম্পাদক নির্মল এস পলাশ বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবধারায় ১৮১তম শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই মহোৎসব উপলক্ষ্যে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। মণিপুরী সম্প্রদায়ের শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। রাসলীলা মণিপুরীদের আয়োজন হলেও সকলের আগমনে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাপর সকল জাতিগোষ্ঠীর মাঝে সম্প্রীতির বাঁধনে বেধে চলেছে এই উৎসব রাসলীলা, গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রেমপ্রীতির ঐতিহ্য দর্শন। রাসলীলা বা রাসনৃত্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ঐতিহ্যময় লীলার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মণিপুরী সম্প্রদায়ের এই রাসলীলা গভীর ধর্মীয় ভাব আবেগিত ও অন্যদিকে এক নির্মল সংস্কৃতি। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো লাখো ভক্তজন, সংস্কৃতি অনুরাগী,গবেষক ছুটে আসেন। কাগজের কারুকার্য খচিত তৈরি শিল্পসমৃদ্ধ রাসকুঞ্জ, বৈচিত্র্যময় রাজকীয় পোশাক আবরণে ধ্রুপদী নৃত্য দর্শন ও শ্রুতিমধুর গীত শ্রবণের মানসে। রাসলীলা আজ একটি সর্বজনীন উৎসব হিসেবে সর্বজনের কাছে সুপরিচিতি লাভ করেছে। এই উৎসব ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা বৃদ্ধি পেয়ে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করে তুলেছে বলে আমারা বিশ্বাস রাখি । মাধবপুর মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, ‘এবারের রাসোৎসব আমরা বড় পরিসরে আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এমবি |