বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের পদত্যাগ দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর এ কে এম মাসুদ। বুধবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিকেল ৩টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষক নেতারা উপস্থিত হয়ে এ দাবি করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, 'বর্তমান ভিসির অদক্ষতায় বুয়েটে এমন ঘটনা ঘটেছে। এই ভিসির পদত্যাগ চাই। যদি ভিসি নিজে থেকে পদত্যাগ না করে তবে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'
শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, 'একজন অদক্ষ উপাচার্যের কারণে আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠান বুয়েটকে নষ্ট হতে দেব না।'
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'আমরা তোমাদের নিরাপত্তা দিতে পারিনি। আমরা অপরাধী। বুয়েট শিক্ষক সমাজ আবরারের বাবা-মায়ে কাছে ক্ষমা প্রার্থী। হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত সেই শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কার করতে যাচ্ছি আমরা।'
তিনি আরও বলেন, '৩০০ জন শিক্ষকদের সম্বনয়ে একটি মিটিং হয়েছে। সে মিটিং এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা এই বিষয়ে লিখিত সুপারিশ করবো। এছাড়া বুয়েটে কোন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী রাজনীতি সঙ্গে জড়িত হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
বুয়েটে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের রাজনীতি বন্ধের বিষয়েও একমত পোষণ করেন এই শিক্ষক নেতা। তিনি বলেন, 'আমরাও চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ হোক।'
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ভর্তি পরীক্ষা বন্ধের বিষয়ে এই শিক্ষক নেতা বলেন, 'বর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে এডমিশন টেষ্ট নেয়ার পরিবেশ নেই।'
আগামী ১৬ অক্টোবর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা হবার কথা রয়েছে।
গত রোববার (০৬ অক্টোবর) মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবরারকে শের-ই-বাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরদিন সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আবরার ফাহাদ হত্যা প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট ক্যাম্পাস। হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বুয়েটের বিভিন্ন ভবনে তারা তালা লাগিয়ে দেন।
সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ভিসি ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। পরে তাকে প্রায় ৪০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
আবরার ফাহাদ হত্যার বেশ কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কেন তিনি হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে আসেননি, কেন ক্যাম্পাসে দাঙ্গা পুলিশ চড়াও হলো একের পর এক প্রশ্ন করে ভিসির কাছে উত্তর জানতে চান শিক্ষার্থীরা। পরে নানাভাবে বুঝিয়ে উপস্থিত শিক্ষক ও ডিনদের নিয়ে চলে যান ভিসি সাইফুল ইসলাম।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের শিক্ষার্থী, সিসিটিভি ফুটেজ ও আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
-এমএ