ভক্তকূলের আনন্দ-অশ্রুতে সিক্ত হয়ে প্রতিমা বিসর্জনে বিদায় নিলেন দেবী দুর্গা। দুপুর থেকে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে গেলেন দেবী। এক বছর পর আবার ভক্তদের মাঝে পিতৃগৃহে ফিরে আসবেন তিনি।
রাজধানীতে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুর দেড়টা থেকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বিজয়া শোভাযাত্রা শেষে বুড়িগঙ্গা নদীর সদরঘাটের ওয়াইজ বিনা স্মৃতি স্নান ঘাটসহ (কেন্দ্রীয় বিসর্জন নিয়ন্ত্রণ ঘাট) নদীটির তীরে অন্যান্য এলাকায় প্রতিমা বিসর্জন দয়া হচ্ছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যেদিয়ে দুপুর দেড়টার শুরু হয় ওয়াইজ ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের কাজ। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আসে ধানমন্ডি পূজা উদযাপন কমিটিসহ বেশ কয়েকটি কমিটি প্রতিমা বিসর্জন করে। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সময়ে প্রতিমা বিসর্জন অব্যাহত ছিল।
এদিকে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের দশমীতে আজ মণ্ডপে মণ্ডপে দশমীর বিহীত পূজার মধ্য দিয়ে ঘটে সমাপ্তি। অতঃপর দেবীর বিসর্জন আর ‘শান্তিজল’ গ্রহণ। গত শুক্রবার বোধনে অরুণ আলোর অঞ্জলি নিয়ে আনন্দময়ী মা উমাদেবীর আগমন ঘটে মর্ত্যে। হিন্দু বিশ্বাসে- টানা পাঁচদিন মৃন্ময়ীরূপে মণ্ডপে মণ্ডপে থেকে ফিরে যাচ্ছেন কৈলাসে স্বামী শিবের সান্নিধ্যে। আর ‘শান্তিজল’ গ্রহণে শেষ হচ্ছে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
ধান-দূর্বার দিব্যি, ফের এসো মা/মা তুমি আবার এসো- ভক্তদের এমন আকুতিতে বিদায় নিচ্ছেন দেবী। আজ সকাল থেকেই বিহিত পূজার পর ভক্তের কায়মনো প্রার্থনা আর ঢাক-উলুধ্বনি-শঙ্খনিনাদে হিন্দু রমণীদের পরম আকাঙ্ক্ষিত সিঁদুর খেলায় মুখর হয়ে ওঠে মন্দিরগুলো। একদিকে বিদায়ের সুর। অন্যদিকে উৎসবের আমেজ।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এবার ওয়াজ ঘাটে ৯৭ প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে। আর এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ৩৯৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন হয়েছে, যা গতবারের চেয়ে ৪৮৩টি বেশি। রাজধানীতে ২৩৬টিসহ ঢাকা বিভাগে ৭ হাজার ২৭১টি মণ্ডপে পূজা হয়।
উদযাপন পরিষদ জানায়, আজ দুপুর একটা থেকে রাত দশটার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম শেষ করার কথা রয়েছে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, মধ্যরাত পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলে।
এদিকে ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, বনানী, তাঁতী বাজার, শাঁখারী বাজার, স্বামীবাগসহ বিভিন্ন মণ্ডপে চলে বিষাদে-আনন্দে শেষ বিদায় উৎসব।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, অসুর শক্তি বিনাশকারী দেবী বিদায় নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে সকল অপশক্তির বিনাশ হয়।
নিরঞ্জনে অংশ নিতে দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পূজামণ্ডপ থেকে ভক্তরা ট্রাক ও ঠেলাগাড়িতে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করেন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে। শোভাযাত্রার পূর্বে নারীরা দেবীর ললাটের সিঁদুর আপন ললাটে এঁকে নেন। পুরুষরা অশুভ শক্তির বিনাশ কামনা করেন। তাদের অন্তরের কামনা আগামী শরতে আবার বাঙালি হিন্দুর ঘরে ঘরে ফিরে আসবেন মা ‘উমা’।
মন্দির ও শোভাযাত্রার পথে বিপুল সংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছিল। ট্রাকে প্রতিমা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতা, নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর হেঁটে এবং বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বর্ণিল পোশাকে সজ্জিত হয়ে ভক্তরা ঢাক-ঢোল, করতাল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রসহ শোভাযাত্রায় যোগ দেয়। রাস্তার দু’পাশে নারীদের উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক।
ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায় জানান, এবারের পূজা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। কোথাও কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে এবারের এই আয়োজনের সমাপ্তি হবে।
এইচএস