পঞ্চগড়ে বন বিভাগের দখলে থাকা জমির রেকর্ড পাচ্ছে না বৈধ মালিকরা
Published : Wednesday, 18 September, 2019 at 12:53 PM Count : 700
পঞ্চগড় জেলার চার উপজেলায় ৫৬০২.৭৩ একর জমি বন বিভাগ ৫৬ বছর ধরে অবৈধ দখলে রেখেছে। জরিপ বিভাগ বন বিভাগের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এসব ভূমি মালিকদের জমি বৈধতার রেকর্ড দিচ্ছেনা। ১৯৬২ সালের পর এই এলাকায় আরএস জরিপ শুরু হয়েছে। সঠিকভাবে রেকর্ড করাতে না পারলে ভূমি মালিকদের যুগ যুগ ধরে দেওয়ানি আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হবে।
এ নিয়ে এসব জমির মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। ২০১৭ সালের ৭ মে জেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেন।
এসব জমির মালিকরা অভিযোগ করে বলেন, বন বিভাগ প্রাইভেট ফরেস্ট অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯ অনুযায়ী পঞ্চগড় জেলার ৫৬০২.৭৩ একর জমি ১৯৬৩ থেকে ১৯৯৬৭ সালের মধ্যে গেজেটভূক্ত করে। কিন্তু জমির মালিকদের কোন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। বন বিভাগ ওর্য়াকিং প্লান অনুযায়ী সরকারি ভাবে গাছ লাগাবে। কিন্তু বন বিভাগ যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে জমিগুলো কাগজে কলমে দখলে রেখেছে। এসব জমির মধ্যে অনেকের বসতবাড়ি আছে। কিছু জমি বন বিভাগের নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারীরা স্থানীয় ভাবে বর্গা দিয়েছেন। বন বিভাগ শুধুমাত্র ১৯২৭ সালের সংরক্ষিত বনভূমির মালিকানা পাবেন। প্রাইভেট ফরেস্ট অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯ আওতায় গেজেটভূক্ত এসব জমির মালিকানা বন বিভাগকে দেওয়া হয়নি। তবে অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯ অনুযায়ী গেজেটভূক্ত জমি ও ভূমি মালিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান সাপেক্ষে যেকোনো সময় ফরেস্ট সেটেলমেন্ট অফিসার সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা দিতে পারেন।
অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯ অনুযায়ী, বন বিভাগ এসব জমি কোনভাবেই দাবি করতে পারে না। কিন্তু এ জেলায় এ আইন অনুসরণ না করে নিরীহ ভূমি মালিকদের অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। পঞ্চগড় জেলায় আরএস রেকর্ড প্রস্তুতের কাজ চলমান রয়েছে। অসহায় ভূমি মালিকরা রেকর্ড না পেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে ধর্ণা দিচ্ছেন। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রাইভেট ফরেস্ট অর্ডিন্যান্স ১৯৫৯ পর্যালোচনা করে গেজেটভূক্ত এসব জমি ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী গেজেটভূক্ত এসব জমি মালিকদের নামে রেকর্ড প্রস্তুত ও খতিয়ানের মন্তব্যে বন বিভাগের ব্যবহার্য লিখা যায় বলে নির্দেশনা দিয়েছেন। বন আইনের ৬ ধারায় ঘোষিত বনভূমি সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা সংক্রান্ত ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাসের সভায় সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব জমি বৈধ মালিকদের নামে রেকর্ড হালনাগাদ করার জন্য আদেশ প্রদান করেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বরের এক পত্রে এসব জমির রেকর্ড সংশোধন করার যোগ্য বলে মত দিয়েছেন। কিন্তু এ নির্দেশনা ও আদেশ কার্যকর হয়নি।
জমির মালিকদের সঙ্গে স্থানীয় বন বিভাগ বিভিন্ন সময়ে বিরোধে জড়িয়ে সাধারণ ও নিরীহ মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। পঞ্চগড়ের বিভিন্ন আদালতে শতাধিক দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় কয়েক হাজার নিরীহ সাধারণ মানুষ আসামি। সমস্যা সমাধানে বন মন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সালে ফরেষ্ট সেটেলমেন্ট আদালত স্থাপন করে। তৎকালীন জেলা প্রশাসককে সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে ক্ষমতা দেওয়া হয়।
শুনানি শেষে ২০০১ সালের ২৮ মার্চ ফরেষ্ট সেটেলমেন্ট অফিসার তাঁর রায়ে বলেন, জমিগুলো মালিকদের ফেরত দেওয়া যেতে পারে। বন বিভাগ ইচ্ছা করলে অংশিদারের ভিত্তিতে চা চাষের পরিকল্পনা নিতে পারে। অথবা বন বিভাগ সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পূর্বে জমির মালিকদের বিগত বছরগুলোর ক্ষতিপূরণসহ জমির মূল্য প্রদান করে বনায়ন সৃষ্টি করে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করতে পারে।
কিন্তু ১৯ বছরেও এ রায় বাস্তবায়ন হয়নি।
দেবীগঞ্জ উপজেলার ভূমি মালিক ইসমাইল হোসেন, নুরুল আমিন, মো. খোরশেদ আলম, বোদা উপজেলার মো. ওয়ালিউল ইসলাম বলেন, সরকার ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় প্রচলিত আইনে ভূমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করে এসব জমিতে সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণা করতে পারে। কিন্তু সংরক্ষিত বনভূমি ঘোষণা না করা পর্যন্ত কোনভাবেই চলমান রেকর্ড ও খাজনা প্রদান বন্ধ রেখে ভূমি মালিকদের এভাবে হয়রানি করতে পারে না। জরিপ অফিসে দিনের পর দিন ঘুরছি। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। এ জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীসহ জরিপ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
দিনাজপুরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মো. শামছুল আজম বলেন, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব জমি বৈধ মালিকদের নামে রেকর্ড করা যায়। কিন্তু বন বিভাগের আপত্তির কারণে তা হচ্ছে না।
-এসআইএস/এমএ