ইউরোপিয়ান প্রযুক্তিতে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম ইটের কারখানা
Published : Monday, 16 September, 2019 at 1:12 PM Count : 843
বাংলাদেশে এই প্রথম ইউরোপ ও জাপানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে ব্রিক (ইট) তৈরির কারখানা গড়ে উঠছে মুন্সীগঞ্জে। সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের পশ্চিম কয়রাখোলা গ্রামের ধলেশ্বরী নদীর তীরে ‘ইকো সিরামিকস’ নামে কারখানাটি প্রস্তুতের কাজ চলছে।
কারখানাটি ক্রাউন সিমেন্ট ও জিপিএইচ ইস্পাত গ্রুপের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। আগামী জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এই কারখানা থেকে ইট উৎপাদন হবে। ইউরোপের সর্বশেষ ট্যানেল ক্লিন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এই ইট তৈরিতে।
পরিবেশ বান্ধব এই কারখানাটি চালু হলে বাংলাদেশের সিরামিক শিল্পে ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২৫ একর জমির ওপর গড়ে উঠছে ইকো সিরামিক কারখানাটি। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা। দৈনিক ২ লাখ পিস ইট তৈরি হবে এই সিরামিক কারখানাটিতে। জার্মানি প্রযুক্তি আর ইতালি, চীন ও জাপানের মেশিনারিজ সংযুক্ত হচ্ছে কারখানাটিতে। ইটের সাইজ হবে সলিড ও হলো ব্লকে। ৩-৪ শ’ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে কারখানাটিতে। এছাড়াও, বাইরের অনেক লোকের কর্মসংস্থানসহ সারাদেশে ডিলার এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সুযোগ থাকছে এই শিল্পের সঙ্গে। এরই মধ্যে আশপাশের কিছু লোকজনেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। দু'জন চাইনিজ টেকনেশিয়ান আনা হয়েছে। এ দেশে টেকনেশিয়ানের অভাব থাকায় প্রজেক্ট চালু হওয়ার পর চাইনিজরা নিয়োগপ্রাপ্তদের দক্ষ করে গড়ে তুলবেন- এমন চুক্তি রয়েছে কোম্পানির সঙ্গে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সলিড, থ্রি হলো, টেন হলো এবং হলো ব্লক এই চার ধরনের ইট তৈরি হবে কারখানায়। লম্বায় সাড়ে ৯ ইঞ্চি, চওড়া সাড়ে ৪ ইঞ্চি ও পুরুত্ব পৌনে তিন ইঞ্চি এবং লম্বায় সাড়ে ৯ ইঞ্চি, চওড়া সাড়ে ৪ ইঞ্চি ও পুরুত্ব সাড়ে ৯ ইঞ্চি সাইজের হবে এই ইট। তবে, ভোক্তা বা কাস্টমারের চাহিদানুযায়ী ইট ছোট-বড় সাইজের করে দেয়া যাবে।
বর্তমানে বাজারে সাধারণ ইটের চেয়ে এই ইটের গুণগত মান দুই থেকে আড়াইগুণ বেশি হবে। সাধারণ ইট ২০ বছর টেকসই হলে এই ইট হবে ৫০ বছর।
মাটি, বালু ও কয়লা দিয়ে এই ইট তৈরি করা হবে। ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে কয়লা আমদানি করা হবে। নদী শাসন, নদীতে ড্রেজিং পয়েন্ট থেকে মাটি সংগ্রহ করা হবে। বিল্ডিং ঢালাইয়ের কাজে যে বালু ব্যবহার করা হয় সেই কাস্টিন বালু আনা হবে সুনামগঞ্জ থেকে। কোন অগ্নিকাণ্ডে এই ইট আগুনে পুড়তে সময় লাগবে বেশি, লোনা ধরবে না, বর্ষায় পানি ও বৃষ্টির পানিতে জলবদ্ধতায় পানি চুষবে না। বিল্ডিংয়ে বাইরে প্লাস্টার লাগবে না। আর ভেতরে কেউ প্লাস্টার করতে চাইলে খরচ কম পড়বে, মর্টারের খরচ কম হবে। বর্তমান বাজারের ইটের চেয়ে শতকরা ২০ ভাগ দাম বেশি পড়বে এই ইট ক্রয়ে।
ইকো সিরামিকস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক নুরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, জাতিকে আমরা একটি টেকসই অবকাঠামো দিতে চাচ্ছি। এই কারখানাটি চালু হওয়ার পর জাতিকে ভালো ও গুণগত মানসম্পন্ন একটি ব্রিক দিতে পারবো। ইউরোপের সর্বশেষ ট্যানেল ক্লিন প্রযুক্তি দিয়ে এই ইট তৈরি হবে।
আরেক পরিচালক আবদুল আহাদ বলেন, ইউরোপ, জাপান ও পাশাপাশি চায়না প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই মডার্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইটের কোয়ালিটি ও গুণগতমান ব্যবহারকারীদের নিশ্চিত করতে পারবো। এটা কি মানে হচ্ছে- সে ইটের মান নিশ্চিত করার জন্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টেকনিশিয়ানদের বিল্ডিং কন্ট্রাকশন থেকে শুরু করে মেশিনারিজসহ সব কিছু চেক করার জন্য আনা হয়েছে। এ পর্যন্ত যতটুকু কাজ এগিয়েছে তা তাদের নিয়ন্ত্রণেই হয়েছে। বাংলাদেশ সিরামিক শিল্পে বলা যায়- এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
পরিবশে বান্ধব ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সুলভমূল্যে ভালোমানের ইট উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়নে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য, দেশকে সমৃদ্ধশালী এবং দেশের অর্থকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য উন্নতমানের প্রযুক্তিতে তারা হলো ব্লক তৈরি করবেন। এখানে বিশ্বমানের প্রডাক্ট পাওয়া যাবে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪০-১৪৫ কোটি টাকা।
মুন্সীগঞ্জ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক জুলিয়া জেসমিন বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেলায় দেশের সর্বপ্রথম একটি ব্রিক কারখানা স্থাপন হতে যাচ্ছে। এটি পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী। এই ধারা অব্যাহত থাকলে পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে কমে যাবে এবং ইটভাটার কারণে যে পরিবেশ দূষণে এতদিন সমস্যা ছিলো- সেটা দূরীভূত হবে।
-এমএইচএস/এমএ