ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম আলহাজ কেয়াম উদ্দিন ভূইয়া, মায়ের নাম আফজারুন্নেছা। তাঁর পিতা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক।
মোজাফফর আহমদ যথাক্রমে হোসেনতলা স্কুল ও জাফরগঞ্জ রাজ ইনস্টিটিউশনে প্রাথমিক, দেবিদ্বার রেয়াজউদ্দিন পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক এবং ভিক্টোরিয়া কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গ্রহণ করেন এবং ইউনেস্কো থেকে একটি ডিপ্লোমা লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র মোজাফফর দীর্ঘদিন বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেন ১৯৫২ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত।
অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের রাজনৈতিক জীবন অত্যন্ত বর্ণিল। রাজনীতিতে তাঁর শুভসূচনা হয় ১৯৩৭ সালের দিকে। তিনি ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে সার্বক্ষণিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিজ জেলা কুমিল্লার দেবিদ্বার আসনে মুসলিম লীগের প্রার্থী তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রীকে পরাজিত করে তাক লাগিয়ে দেন।
আওয়ামী লীগের বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে ন্যাপ এর প্রতিনিধি হিসেবে অধ্যাপক মোজাফফর আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সামরিক শাসক আইয়ুব সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও হুলিয়া জারি করে ১৯৫৮ সালের দিকে। তাঁকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়। আত্মগোপন থাকা অবস্থায়ই তিনি আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সুসংগঠিত করেন। দীর্ঘ আট বছর আত্মগোপনে থাকার পর ১৯৬৬ সালে তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফেরেন।
পরের বছর ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। একই সময় সমগ্র পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি কারাবরণ করেন।
১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। সে সময় তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ন্যাপ, সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের জনবল থেকে নিজস্ব উনিশ হাজার মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনে অধ্যাপক আহমদের ভূমিকা অবিস্মরণীয়।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৯ সালে অধ্যাপক মোজাফফর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি ন্যাপ, সিপিবি ও প্রগতিশীল শক্তির পক্ষে ত্রিদলীয় জোট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। স্বৈরাচারী শাসক এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের শুরুতে অধ্যাপক আহমদ কারারুদ্ধ হন।