দেশের প্রথম অ্যারোস্পেস এন্ড এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় হবে লালমনিরহাটে
Published : Friday, 23 August, 2019 at 1:06 PM Count : 691
লালমনিরহাটে অবস্থিত দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে পরিত্যক্ত বিমানবন্দরেই হবে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন এন্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। একই সঙ্গে এখানে বিমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হবে হবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু অ্যারোস্পেস এন্ড এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় স্থান নির্ধারণ করতে লালমনিরহাটে বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে লালমনিরহাটে আসেন লালমনিরহাট-২ আসনের সাংসদ ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন লালমনিরহাট-৩ আসনের সাংসদ ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, বিমানবাহিনী প্রধান মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত সহ বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নুরুজ্জামান আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টির মূল ক্যাম্পাস লালমনিরহাটে হবে তবে এর একটি শাখা রাজধানী ঢাকার আশকোনায় স্থাপন করা হবে। মন্ত্রী বলেন, দেশের পশ্চাৎপদ, অবহেলিত এবং উপেক্ষিত জেলা হিসেবে লালমনিরহাটের মানুষের কল্যাণে তথা আগামী প্রজন্মের কল্যাণে এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে সম্পৃক্ত করে তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, লালমনিরহাট বিমানবন্দরকে সচল করতে দিনে তিনটি ফ্লাইট চলাচল করতে পারে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই। সে ব্যাপারে বিমানবাহিনীর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়, বিমানবন্দর এবং কারখানা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বিশেষ বৈঠকে বসেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য জিএম কাদের, বিমানবাহিনী প্রধান মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাতসহ বিমান বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এসময় বিমানবাহিনী প্রধান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নত হওয়ার জাতি হওয়ার যে রূপকল্প ২০৪১ আছে তার জন্য আকাশ প্রযুক্তিতে উন্নত হওয়ার বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্য নিয়ে লালমনিরহাটে এরোস্পেস ইউনিভার্সিটির পাশাপাশি এখানে থাকবে আধুনিক বিশ্বের সমতুল্য এম আর ও বা মেইনটেনেন্স এন্ড রিপেয়ারিং অর্গানাইজেশন অর্থাৎ বিমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা। এমনকি এখানে একটি বিমান তৈরির কারখানাও হতে পারে। কারণ এখানে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যারা শিক্ষানবিশ থাকবেন তাদেরকে শেখাতে গেলে সম্পূরকভাবে বিমানবন্দর এবং উড়োজাহাজ নির্মাণ এবং মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কারখানাও থাকতে হবে। এই বিশাল কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সময়ের প্রয়োজন যা হয়তো আজ থেকে পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে। আর এই কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেলে শুধু বাংলাদেশ নয়, নেপাল, ভুটান এবং ভারতের সাতটি অঙ্গরাজ্য তথা এখানকার পুরো অঞ্চলের যোগাযোগ এবং আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে। ফলে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১১ ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেটা গোটা দেশের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। যেহেতু আকাশ যোগাযোগের বিষয়ে বিমান বাহিনী একটি প্রভাবক শক্তি তাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু এয়ারস্পেস এন্ড এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরামর্শ সালমান হাসান ডেভিড সাংবাদিকদের বলেন, এয়ারক্রাফট নির্মাণ মেরামত স্যাটেলাইট নির্মাণ উৎক্ষেপণ মহাকাশ গবেষণা প্রভৃতি প্রযুক্তিতে বিশ্বের উন্নত দেশ অনেক দূর এগিয়ে গেলেও কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের দেশে ইতিপূর্বে বড় কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং সাহসী পদক্ষেপে দেশে এই প্রথম একটি এভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংসদে পাস করা হয় এবং ৬ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রো-ভিসি রেজিস্টার ট্রেজারারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হয়। আমরা আশা করছি ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৭টি ফ্যাকালটি ৩৭টি ডিপার্টমেন্ট চারটি ইনস্টিটিউট রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। এই অঞ্চলের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ক্যাম্পাস লালমনিরহাটে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করার লক্ষ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা কেন্দ্র ইতিমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীর এই সাহসী এবং যুগোপযোগী উদ্যোগে সফলকাম হবে এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্বের একটি প্রথম সারির অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হবে।
এমএস/এইচএস