দীর্ঘ ৫৭ বছর একটি ব্রিজের দাবি
Published : Thursday, 22 August, 2019 at 4:12 PM Count : 775
রাঙ্গামাটির পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের মাঝেরবস্তিতে একটি ব্রিজের জন্য গত ৫৭ বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন পারাপার করছে হাজারো মানুষ। এতে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অনতিবিলম্ভে এই এলাকায় একটি ব্রিজের দাবি জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, রাঙ্গামাটির মাঝেরবস্তি পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের নদী পারাপারের জন্য দীর্ঘ ৫৭ বছর জোড়াতালি দেয়া বাঁশের সাঁকোর ওপর ভরসা করছে। এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তবে কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর নিচে নেমে গেলে চলাচল স্বাভাবিক হলেও প্রতি বর্ষা মৌসুমে ৪ মাস রাস্তাটি পানিতে তলিয়ে গেলে স্থানীয়রা আবারো পড়েন জীবনের ঝুঁতে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ যাতায়াত করতে হয় এই বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে। আর প্রতিবছর এই বাঁশের সাঁকো তৈরী করতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করে এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, ভৌগলিক কারণে রাঙ্গামাটির মাঝেরবস্তি সদর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের অবহেলিত জনপদের মধ্যে এই একটি এলাকা। এখানে কখনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের ছোয়া লাগলেও এই এলাকায় কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। আর মাঝেরবস্তি সদর পুলিশ ফাঁড়ি এলাকাটি ঘণবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় সেখানে চলাচলের রাস্তা সরু হওয়ায় কোন প্রকার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার রাস্তা নেই। আর এলাকায় কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাকে এই সাঁকো দিয়ে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যে কি দূরহ ব্যাপার তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘণবসতি এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার তেমন কোন উন্নয়ন না হওয়ায় রাষ্ট্রের অনেক জরুরী সুযোগ-সুবিধা ও সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে এখানকার সাধারণ জনগণ। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই আধুনিকতার যুগে এসেও রাঙ্গামাটি শহরের ৩নং ওয়ার্ডের মাঝেরবস্তির পুলিশ ফাঁড়ি নামক স্থানে নদীর ওপর আজও কোন ব্রিজ নির্মাণ হয়নি।
একটি ব্রিজের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কখনো নৌকা আবার কখনো বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হয় স্কুল-কলেজ, ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকার মানুষদের। বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগে বছরের বেশির ভাগ সময় ধরে বন্যার পানি চার দিকে থই থই করে। তখন পারিবারিক প্রয়োজনে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায় জরাজীর্ণ বাঁশের সাঁকো অথবা ভাড়ায় চালিত নৌকা। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই হ্রদের পানি কমে গেলেও পানি-কাঁদায় একাকার হলেও হেঁটেই এলাকার মানুষ তাদের প্রয়োজনের তাগিদে তবলছড়ি বাজার, রিজার্ভ বাজার ও বনরূপা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে।
এব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা অলি আহমেদ জানান, যুগের পর যুগ এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে এলাকার মানুষ কষ্ট করে পারাপার হলেও এখানে একটি সেতু নির্মাণ এলাকাবাসীর দাবি থাকলেও কারো যেন মাথা ব্যথা নেই। প্রতিবছর কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পেলে প্রায় ৪ মাস জরাজীর্ণ বাঁশের সাঁকো অথবা ভাড়ায় চালিত নৌকা দিয়ে পারাপার করতে হয়।
অন্যদিকে প্রতিবছর এই বাঁশের সাঁকো তৈরী করতে গচ্ছা দিতে হচ্ছে প্রায় ১০/১৫ হাজার টাকা। অনেক সময় বাঁশের এই সাঁকো তৈরী করতে সময় লাগার কারণে তারা ভাড়ায় চালিত নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এতে অনেক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হিমশীম খেতে হয়।
মাঝেরবস্তির পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার বাসিন্দা বাবুল শুক্লা দাশ ও সুজন ত্রিপুরা জানান, এই এলাকার হঠাৎ করে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেয়া অনেক কষ্ট হয়ে পড়ে। আবার এলাকায় মধ্যরাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা গর্ভবতীদের নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। আর এই পাড়ার চলাচলরত রাস্তা সরু হওয়ার কারণে যে কোন সময় আগুন লাগলে বা বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পৌঁছাতে বেগ পেতে হবে। তাই এখানে প্রশাসনের কাছে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। দীর্ঘ ৫৭ বছরেও কোনো সরকার এই দাবি বাস্তবায়ন করেনি। একটি ব্রিজের না থাকার কারণে এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই জরুরি ভিত্তিতে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে।
এব্যাপারে রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, ব্রিজের ব্যাপারে আমার জানা আছে। এবার ব্রিজ নির্মাণে প্রকল্প গ্রহন করা হয় নাই। আগামীতে এই ব্রিজ যাতে বাস্তবায়ন হয় তার জন্য প্রকল্প গ্রহন করা হবে।
এইচএস