সকাল থেকেই বৃষ্টি। কখনো হালকা, কখনো গুঁড়িগুঁড়ি। বৃষ্টি আবহাওয়ার গরম কমিয়ে স্বস্তি দিলেও তা বিনোদন প্রেমিদের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্বস্তির বৃষ্টি ঈদের আনন্দে বাগড়া দিয়েছে। কিন্তু বিনোদন প্রেমিদের কথা, বৃষ্টি ঝরলেও বাইরে বেরুতে হবে। তা সে আবহাওয়া যেমনই হোক।
গতকাল বুধবার সাতসকালে শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টিতে অনেকেই বের হতে পারেনি ঘর থেকে। কেউ কেউ বৃষ্টি উপেক্ষা করে বের হয়েছেন ছাতা নিয়ে। বৃষ্টির এমন ধারা ছিলো দুপুর পর্যন্ত। বেলা তিনটার পরে থেমে যায় বৃষ্টি।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানায়, গত বুধবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ২৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে ঈদের দিন সন্ধ্যা ও রাতের দিকে বৃষ্টিপাত হয়। এছাড়া গত মঙ্গলবার সারাদিন কেটেছে বৃষ্টিময়। তবে বৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছুটে যায় হাজারো মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর প্রধান বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা, জিয়া শিশুপার্ক, পদ্মা নদীর পাড়, ভদ্রা পার্কে ব্যাপক দর্শনার্থীর ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।
বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ছিলো দর্শনার্থীদের ঢল। মহানগরীর বাইরের জেলার বিভিন্ন স্থানের মানুষের সমাগম ঘটে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। তাদের আনন্দ উপভোগ করতে দেখা গেছে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে।
মহানগরীর শহিদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যানে দর্শণার্থীরা দূরদুরান্ত থেকে এসেছেন বাড়তি বিনোদনের জন্য। কেন্দ্রীয় উদ্যানের ভেতর ছিল লোকারণ্য। তবে সকালের দিকে বৃষ্টির কারণে দর্শণার্থীদের উপস্থিতি কম ছিলো বলে জানায় উদ্যান কর্তৃপক্ষ। তবে বিকালের দিকে দর্শণার্থীদের ভিড় বেড়ে যায় বলে জানা গেছে।
রাজশাহীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা পদ্মা নদীর ধারে অন্য দিনগুলোতে শুধু বিকেলেই মানুষের উপস্থিতি বাড়ে। কিন্তু ঈদের ছুটিতে সকাল, দুপুর, বিকেল-সব সময়ই ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা দল বেঁধে ভিড় জমাচ্ছেন পদ্মার পাড়ে। কেউ কেউ আসছেন পরিবারসহ। এমন ভিড় থাকবে আরও দুয়েকদিন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বিকেলে বৃষ্টির পর রংধনু দেখা যায় নদীতে। রংধনুর সাত রং বিনোদনের মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দেয়। পদ্মার পাড়ে যাওয়া বিনোদন পিপাসুদের প্রায় সবাই ছবি তুলতে শুরু করেন রংধনুর সঙ্গে। পদ্মার পাড়ে গিয়ে অনেকেই নৌকায় চড়ে ঘুরতে যান নদীতে।
ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে মহানগরীর বড়কুঠি এলাকায় পদ্মার পাড়ে ঘুরতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছেন অনেকেই।
বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা জুলফিকার হোসেন বলেন, তার পরিবার থাকে রাজশাহীতে। কিন্তু তিনি থাকেন ঢাকায়। তাই ঈদের ছুটিতে তিনি স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে পদ্মার পাড়ে এসেছেন।
মহানগরীর বিজিবি’র সীমান্ত অবকাশ নোঙ্গর এলাকায় পরিবার পরিজনদের সঙ্গে বেড়াতে আসেন নিশা খাতুন। তিনি বলেন, তাদের অল্প কয়েকদিন হলো বিয়ে হয়েছে। স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যের সঙ্গে বেড়াতে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, পেয়ারা ও ফুচকা খেয়েছি। নৌকাতে ভ্রমণ করেছি। অনেক ভালো লাগছে। এখানে আসার পর তার ঈদের আনন্দ দ্বিগুণ হয়েছে।
রাজশাহীর দুর্গাপুর থেকে বেড়াতে এসেছেন আবদুর রহমান, জনি ও আশফাক নামে তিন যুবক। তারা জানান, নদীর পাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও নির্মল বাতাস তাদের বেশি ভালো লাগে। ফলে পদ্মা পাড়ে তারা প্রায় বেড়াতে আসেন। এছাড়া ঈদের সময় বেশি লোকজন হওয়ায় সেখানে আরও বেশি আনন্দ হয়।
ট্রি-বাঁধ এলাকায় স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে নৌকা ভ্রমণ করেন বাবু। তিনি বলেন, নৌকায় উঠে নদীর ওপার থেকে ঘুরেও এসেছেন। ভরা নদীতে নৌকায় ঘুরে অনেকে আনন্দ উপভোগ করছেন। নদীর মাঝখানে গিয়ে পদ্মা পাড়ের সৌন্দর্য দেখে তাদের মন জুড়িয়ে যায়।
শহিদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িায়াখানার কর্মচারী এইচএম রমজান বলেন, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দর্শণার্থীরা এসেছেন। বৃষ্টি না থাকলে আরও দর্শণার্থী বাড়তো। গত মঙ্গলবার ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ও গত বুধবার প্রায় আড়ায় লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দর্শণার্থীদের বেশির ভাগ মহানগরীর বাইরের মানুষ।
আরএইচএফ/এসআর