For English Version
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
হোম

হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ধবল গরু

Published : Tuesday, 6 August, 2019 at 9:59 PM Count : 925


মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিমের ধবল (সাদা) গরুর ঐতিহ্য দেড় থেকে দুইশ বছরের। প্রায় দুইশ পরিবার এই গরু লালন-পালন করতেন। পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জ গনি মিয়ার কোরবানির হাটে এই ধবল গরুতে মাঠ ভরা থাকতো। মিরকাদিমের ধবল বা সাদা গরুর বেশ চাহিদা ঢাকার রহমতগঞ্জ মাঠে।

পুরান ঢাকার মানুষ এ গরু শখ করে কিনে কোরবানি দেন। ধনী লোকেরা অন্য গরু কিনলেও সঙ্গে মিরকাদিমের একটি সাদা গরু কিনে নেন। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে এবং পুষ্টিকর খাবারে বেড়ে উঠা এই গরুর মাংসও বেশ সুস্বাদু। কিন্তু বর্তমানে গরুর খাবারের দাম (গো-খাদ্য) ও গরুর ক্রয় মূল্য বৃদ্ধি এবং দেশি-বিদেশি ফার্ম জাতের গরু রহমতগঞ্জের হাটে আমদানির ফলে এই গরু খামারিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে করে খামারিরা ধবল গরু লালন-পালনে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছেন। এছাড়া, জায়গা সঙ্কুলানও রয়েছে।

গরুগুলোকে খামারিরা অত্যন্ত যত্নসহকারে পোষেন। বসতঘরের পাশেই ছোট একটি টিনের ঘরে ফ্যানের বাতাসে পরিস্কার পরিচ্ছন্নভাবে গরুগুলো রাখা হয়।

বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১২-১৫টি পরিবার বাপ-দাদার এই ঐতিহ্য ধবল গরুর ব্যবসা ধরে রেখেছেন। ঈদের দুইদিন আগে মিরকাদিমের প্রায় অর্ধশতাধিক ধবল গরু রহমতগঞ্জ হাটের মাঠে যাচ্ছে।  

মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম পৌরসভার পশ্চিমপাড়া, নৈদিঘিরপাথর, টেঙ্গর, কমলাঘাট, মিরাপাড়া, নগরকসবা, তিলারদিসহ কয়েকটি গ্রামে এই ধবল গরু ব্যাপকভাবে লালন-পালন করা হতো। একেকজনের অন্তত ১৫-২৫টি করে গরু ছিলো। ফার্ম জাতের গরুর কাছে দেশিয় খাবার এবং দেশিয় পদ্ধতিতে লালন পালন করা এই ধবল গরুর ব্যবসায় গৃহস্থদের প্রতিবছরই লোকসান গুনতে হয়। ফার্ম জাতের গরুর কাছে দাম এবং প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে না পেরে মিরকাদিমের ব্যবসায়ীরা ধবল গরু লালন-পালনে নিরুৎসাহিত হয়ে অধিকাংশ গৃহস্থ ধবল গরুর ব্যবসা ছেড়ে দেন। এছাড়া, গরু পালনে সরকারি কোন আর্থিক সহায়তাও তাদের দেয়া হয়না।  

এদিকে, ধান-চাল আর তেলের কারখানা থাকার কারণে মিরকাদিমের ভূষি, কুড়া, খৈলসহ বিভিন্ন উন্নতমানের গরুখাদ্য খুব সহজে পাওয়া যায়। এখানকার ব্যবসায়ীরা মিরকাদিমের গরুকে মিনিকেট চালের খুদ, এক নাম্বার খৈল, ভাতের মাড়, সিদ্ধ ভাত, খেসারির ভূষি, গমের ভূষি, বুটের ভূষি, চিটারাব ও খাওয়ান। এছাড়া গরু পালনে প্রশিক্ষিত লোক নিয়োগ করা হতো মিরকাদিমে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তারা ফরিদপুরের মালিগ্রাম, তেপাখোলা, কেরানীগঞ্জের পাড়াগ্রাম ও যশোরের যাত্রাপুরহাট থেকে পশ্চিমা একটি সাদা বা ধবল গরু এক থেকে দেড়লাখ টাকায় কিনে আনে। প্রতিটি গরুর মণ প্রতি কেনা পড়ে ৩০ হাজার টাকা। এরপর সে গরু তারা ৬-৮ মাস পর্যন্ত লালন-পালন করেন। এই লালন-পালনে খাবার ও চিকিৎসা বাবদ একটি গরুর পেছনে আরও ৫০-৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তাদের গরুকে কোন ইনজেকশন ও মোটাতাজাকরণ খাবার বা ওষুধ দেয়া হয়না। এতে করে ফার্মজাতের গরুর সঙ্গে ধবল গরু দামের পার্থক্য হয়ে যায় অনেক। হাটে এ গরুর চাহিদা কমে আসছে। লোকসান হওয়ায় অধিকাংশ গৃহস্থ ধবল গরুর ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। যারা করছেন তাদের কারোরই এখন আর ৪-৫টির বেশি ধবল গরু নেই।

কমলাঘাটের গৃহস্থ নুর মোহাম্মদ মুন্না বলেন, তিন থেকে সাড়ে তিনমণ ওজনের একটি গরু কেনেন। গরুর মণপ্রতি কেনা পড়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। গরু লালন-পালন করে বিক্রির উপযোগী করতে আরও খরচ হয় ৫০-৫৫ হাজার টাকা। কিন্তু কাঙ্খিত মূল্য পাওয়া যায়না। এক সময় এই অঞ্চলে দুই হাজারের ওপরে ধবল গরু পালা হতো। এখন সর্বোচ্চ ৫০-৬০ গরু থাকতে পারে গৃহস্থদের কাছে।  তার বাবা মৃত শরীয়ত মুন্সী ২৫-৩০টি ধবল গরু পালতেন। তিনি ৫টি গরু পালছেন।

নৈদিঘীরপাথর গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, আট মাস ধরে তিনি ৪টি গরু লালন-পালন করছেন। প্রতিটি গরু ৮০-৯০ হাজার টাকায় কিনে এনেছেন। হাটে বাইরে থেকে বিষখাওয়ানো (ফার্মজাত) গরুর সঙ্গে আমাদের গরুর দাম মিলেনা। আমরা প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর খাবার দেই গরুকে। ফার্মজাতের ৫ মণ গরুর সঙ্গে আমাদের তিনমণ গরু সমান এবং আমাদের গরুর মাংস বেশ সুস্বাদু। কিন্তু হাটে আমাদের গরুর দাম পাওয়া যায়না।

নৈদিঘীরপাথর গ্রামের মোস্তফা জানান, তিনি ২৫-৩০ বছর ধরে ধবল গরু পেলে আসছেন। ৫ থেকে সাড়ে ৫ মণ ওজনের ধবল গরু তারা কোরবানির হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। হাটে ধবল গরুর চাহিদাও আছে। কিন্তু দামে মিলেনা ফার্ম গরু এবং বিদেশি গরু হাটে বেশি থাকায়। জায়গার ব্যবস্থা এবং সরকারের আর্থিক সহায়তায়সহ পৃষ্টপোষকতা থাকলে মিরকাদিমে ধবল গরুর ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে বলে তিনি মনে করেন।

মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম শাহীন জানান, সরকার ধবল গরুর ঐতিহ্য ধরে রাখতে লোনের ব্যবস্থা করলে আরও অনেক মানুষ উৎসাহিত হতো। গরু পালনের জন্য জায়গার প্রয়োজন হলে সরকার ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা জমি লিজ দেবো।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কুমুদ রঞ্জন মিত্র বলেন, খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ এবং লাভের সঙ্গে মিল না হওয়ায় তারা গরু পোষতে পারছে না। খাদ্যের অভাব নিরসনে ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র (ইউরিয়া মেশানো খড়) আমরা গরুকে খাওয়াচ্ছি। এই খাদ্য খাওয়ায়ে গরু মোটাতাজা করলে একটি গরুর পেছনে ৩-৪ মাসে খরচ আছে দেড় থেকে ২ হাজার টাকা। যে গরুটি ২০ হাজার টাকায় কেনা যায়, ৪ মাস পর তা ৫০-৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এই খাদ্যটি ঈদ পরবর্তী সময়ে লিফলেট আকারে, বিভিন্ন উঠোন বৈঠক এবং প্রচার অভিযানের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো। এতে করে খামারিরা লাভবান হবে, উৎসাহ পাবে এবং মিরকাদিমের হারানো ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে।

-এইচএস

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft