সফল নারী উদ্যোক্তা সাজেদা খাতুন
Published : Tuesday, 16 July, 2019 at 12:06 PM Count : 548
শখের বসে মুরগি পালন করতে গিয়ে একজন সফল নারী উদ্যোক্তার খাতায় নাম লিখেছেন জয়পুরহাটের অদম্য সাহসী সাজেদা খাতুন। পেয়েছেন সফলতার পুরস্কারও। নারীদের উন্নয়নে সরকারের নানা সুযোগ কাজে লাগিয়ে নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভাবে অবদান রাখছেন সাজেদা।
পিতা-মাতার সংসারে অভাবের কারণে অল্প বয়সে বিয়ের পিড়িঁতে বসতে হলেও নিজে কিছু একটা করবেন এ চেষ্টা থেকে পিছুপা হননি। বিটিভিতে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে একজন মহিলার মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প শুনে প্রথমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা জানালেন সাজেদা খাতুন।
২০০৩ সালে শখের বসে ২১টি লেয়ার মুরগি লালন পালনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এ কাজে পরিবারের সহযোগিতা নেন ৬ হাজার টাকা। খরচ বাদে এখানে লাভ আসে তিন মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এতে আগ্রহ বেড়ে যায়।
২০০৪ সালে স্থানীয় প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে এক মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও মুরগির বিভিন্ন রোগবালাই সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়। এরপর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ৩ মাস মেয়াদী গবাদি পশু, হাসমুরগী পালন, মৎস চাষ, প্রাথমিক চিকিৎসা, কৃষি বিষয়কসহ ৬টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে সাজেদা খাতুন জেলা শহরের গুলশান মোড় এলাকায় ১৯ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তুলেছেন মুরগির খামার, ছাগল, ভেড়ার খামার, মৎস্য চাষ ও ফলদ বাগান। বর্তমানে মুরগির খামারে রয়েছে ৩ হাজার সোনালী জাতের মুরগি, ১ হাজার ডিমের মুরগি এবং দেড় হাজার ৭ দিনের বাচ্চা। এখন সাজেদা খাতুনের নিজস্ব পুঁজির পরিমাণ ১৫ লাখ টাকা হলেও ব্যবসায় সফলতা দেখে ঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য এগিয়ে আসে স্থানীয় ইসলামী ব্যাংক। সেখান থেকে গ্রহণ করেন আরও ১৫ লাখ টাকা। সবগুলো থেকে মাসিক আয় আসে প্রায় এক লাখ টাকা।
অদম্য সাজেদা খাতুন খামারের আয় থেকে বাড়ি করার পাশাপাশি ২ বিঘা জমিও কিনেছেন। বড় মেয়ে সানজিদা আকতার তুলির বিয়ে দেওয়ার খরচসহ ছেলে শাহরিয়ার হোসেনের লেখাপড়ার খরচও চালাচ্ছেন খামারের আয় থেকে। তার এ কাজে স্বামী শাহাদৎ হোসেন সহযোগিতা করে থাকেন।
সরকারি বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ছাড়াও প্রতিবেশী ও বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসেন তার সফলতার গল্প শোনার জন্য। সামান্য এসএসসি পাশ করা একজন নারী হলেও সফলতার জন্য সমাজে এখন অনেক দামী মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার আনন্দ চোখে মুখে সাজেদা খাতুনের। নিজে নারী হওয়ার কারণে কাজের সুবিধার্থে খামারে আরও তিনজন নারী কর্মী রয়েছে সার্বক্ষণিক। রোগবালাই সম্পর্কে প্রশিক্ষণ গ্রহণের ফলে মুরগির যেকোনো ধরনের সমস্য হলে নিজেই তার চিকিৎসা করতে পারেন বলে জানান সাজেদা খাতুন। এ সফলতা দেখে প্রতিবেশী নারীরাও উদ্বুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি খামার গড়ে তুলছেন।
পাশের খামারী লুৎফা বেগম বলেন, সাজেদা খাতুন আমাদের সামনে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তাকে দেখেই মুরগি পালনে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা জানান লুৎফা বেগম।
নারী উন্নয়নে সরকারের নানা সুযোগ কাজে লাগিয়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য খামারী সৃষ্টি করা মাছ ও মুরগী চাষে উদ্বুদ্ধ করাসহ তাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলার পেছনে সফল আত্মকর্মী সাজেদা খাতুন বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন বলে জানান জয়পুরহাট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক তোছাদ্দেক হোসেন।
অদম্য সাহসী ও সফল আত্মকর্মী সাজেদা খাতুন ক্ষুদ্র ঋণে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে সাবেক গভর্ণর ড. আতিউর রহমানের নিকট থেকে গ্রহণ করেন সফল নারী উদ্যোক্তা পুরস্কারও।
-এমএ