For English Version
শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
হোম

'খাই কেমন করিয়া, থাকি কোনটে বাহে?'

Published : Friday, 12 July, 2019 at 11:05 PM Count : 622

“খাই কেমন করিয়া, থাকি কোনটে বাহে? তিন দিন ধরি আইত জাগি খায়া না খায়া আছি হামরা। গরু ছাগল মাইনসের বাড়িত থুইয়া আচচি।” তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় বন্যার কবলে পড়ে এমন করেই দুর্ভোগের কথা বলছিলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের মধুরাম গ্রামের তিস্তা তীরবাসী দিনমজুর পরিবারের সদস্য মর্জিনা বেগম।

কষ্টের সংসারে স্বামী-স্ত্রী মিলে কৃষি মজুরি করে তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কোনরকমে দিন চলে তাদের। একটা ছাগল আর একটা গরুসহ সন্তানদের রেখে এসেছেন অন্যের বাড়িতে। এ কয়দিনে জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কেউ খোঁজ নিতে আসেনি তাদের।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তা-ধরলা পাড়ের কয়েক হাজার পরিবারের আপাত চিত্র মর্জিনার মতই। গত তিন দিনে তিস্তার পানি বেড়েছে প্রায় এক শত সেন্টিমিটার। শুক্রবার সকাল ৯টায় ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাত নয়টায় তা বেড়ে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে করে জেলার ৫ টি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের অন্তত ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জলমগ্ন হয়েছে নতুন নতুন এলাকা, পানি ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষজন। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে পড়েছেন দুর্গত এলাকার মানুষ। চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের কাঁচা সড়কগুলো জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ। ব্রক্ষ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার পানি কমছে ধীরে- বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম শুক্রবার রাত ১০টায় বলেছেন, আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। তবে তিস্তার পানি আপাতত স্থিতিশীল রয়েছে। আশা করছি এরপর পানি কমতে থাকবে। তবে তিস্তা ব্যারাজ এলাকা ও এর আশপাশের লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ধরলার পানিও গত চারদিনে বেড়েছে প্রায় এক শত সেন্টিমিটার। বৃহস্পতিবারের তুলনায় শুক্রবার রাতে এ নদীর পানি বেড়েছে ১০ সেন্টিমিটার। 

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকোশলী বজলার রহমান জানান, ধরলার কুড়িগ্রাম পয়েন্টে শুক্রবার রাত ৯টায় বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। 

পানি বৃদ্ধির সঙ্গে মরার উপর খড়ার ঘাঁ হয়ে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের চওড়াটারী, কুড়ুল এলাকায় ইতিমধ্যেই ধরলার ভাঙনের শিকার হয়েছে অন্তত ৩০টি পরিবার। এছাড়া খাড়ুয়ার চর এলাকার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রটি রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে। 

এদিকে, সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কয়েকটি স্থান; আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে কয়েকটি পরিবারের বসতভিটা ও আবাদি জমি তিস্তার ভাঙনের শিকার হয়েছে। আবার বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় ভেসে গেছে বেশ কয়েকটি এলাকার পুকুর ও মৎস্য খামার। পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক ১৭ হেক্টর আমন ধানের চারা বলে জানিয়েছে জেলার কৃষি বিভাগ।

সিভিল সার্জন ডা. কাশেম আলী জানান, শুক্রবার দিনভর স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ পানির ট্যাবলেট বন্যার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তবে কি পরিমাণ এবং কোথায় কোথায় তা বিতরণ করা হয়েছে সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জানাতে পারেননি।

জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারি হিসেবে জেলায় সাড়ে ৬ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়েছে। সংখ্যার হিসেবে তা প্রায় পঁচিশ হাজার মানুষ। যদিও শুক্রবারের হিসেব এখনো তাদের কাছে নেই বলে জানিয়েছে তিনি। তবে বন্যার্তদের জন্য এখন পর্যন্ত ১১০ মেট্রিক টন চাল, নগদ আড়াই লক্ষ টাকা এবং ৫৪টি শুকনা খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙন কবলিত ২২টি পরিবারের মধ্যে ঢেউটিন বিতরণ করা হয়েছে।

লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম জানান, বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। দুর্গত এলাকার লোকজনকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে আসার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো প্রস্তুত রয়েছে।

-এমএস/এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft