বর্ষার শুরুতে যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আরিচা ঘাট ও আশপাশের এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে কমপক্ষে ৫০ ফুট এলাকা নদী ভেঙ্গে টার্মিনালের দিকে এসেছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী শিবালয় বাজার, আরিচা নদী বন্দর, নবনির্মিত আবহাওয়া অফিস, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ও তেওতা-জাফরগঞ্জ রাস্তাসহ আশপাশের গ্রামগুলো।
মঙ্গলবার সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আরিচা ট্রাক টার্মিনালের পশ্চিম পাশে নদীতে ঘুর্ণিপাকের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘুর্ণিপাকের কারণে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন।
এছাড়া, আরিচা সরকারী ডাক বাংলো এবং আরিচা বন্দর ও বাজারের পশ্চিমে নদীর পাড় দিয়ে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে বাজারের দোকান-পাটগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। এমতবস্থায় ব্যবসায়ীরা চরম আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে, সব সময় নদীর নিচু এলাকা দিয়েই পানির প্রবাহ বইতে থাকে। তাই বর্ষার এ সময়ে পানির প্রবল স্রোতে নদীর পার এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙ্গনের কারণে ঐতিহ্যবাহী আরিচা নদী বন্দর, শিবালয় বন্দর বাজার, আবহাওয়া অফিস, প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট, পিসিপোল নির্মাণ প্ল্যান্ট, তেওতা-জাফরগঞ্জ, আরিচা-দাসকান্দি বেড়িবাঁধ কাম সড়ক এবং বিআইডব্লিউটিএ, বিআইডব্লিউটিসি অফিস, শিবালয় থানা ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, সরকারী ডাকবাংলো ও তিনটি হাই স্কুল একটি কলেজ, মসজিদ মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং নদী সংলগ্ন আশপাশের গ্রামগুলো নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার বর্ষায় আরিচা এলাকায় নদী ভাঙ্গনের কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আরিচা ঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নিহালপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এবার যেভাবে নদী ভাঙ্গছে এ রকম ভাঙ্গন আজ থেকে ৫০ বছর আগে ছোট বেলায় আমরা দেখেছি। একবার ভাঙ্গন শুরু হলে বাড়ি-ঘর, জমি-জমা মুহুর্তের মধ্যে নদী গর্ভে তলিয়ে যায়। সরানোরও সময় পাওয়া যেতো না। এবার সে রকম অবস্থা দেখছি। কারণ বিগত বছরগুলোতে যেখানে চর পড়ে নদী ভরাট হয়ে যেতো। এবার সেখানে অনেক গভীরতা সৃষ্টি হয়ে পানির ঘুর্ণিপাক পড়েছে। প্রবোল স্রোত ও ঘুর্ণিপাকের কারণে ব্যাপক আকারে নদী ভাঙ্গনের সম্ভাবনা রয়েছে।
শিবালয় গ্রামের হারুণ শেখ বলেন, নদী পাড় এলাকায় ড্রেজিং করায় ক্যানেলের সৃষ্টি হয়ে স্রোত পড়েছে। নদীর মাঝে চর থাকায় আরেকটি স্রোত ওই চরে বাড়ি খেয়ে এপার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই স্রোত একত্রিত হয়ে আরিচা ঘাটের পাড় ঘেষে প্রবাহিত হওয়ায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এ রকম নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে আরিচা ঘাটসহ আশপাশের বিস্তির্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। নদী ভাঙ্গন রোধে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমরা।
এ ব্যাপারে শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউর রহমান খান জানু জানান, মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে নদী ভাঙ্গনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বাঁশ পুতে বেড়া দিয়ে ও বালুর বস্তা ফেলে প্রাথমিকভাবে নদী ভাঙ্গন রোধে শিবালয় উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আরিচার জন্য ২ লাখ, কুষ্টিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভাঙ্গন ঠেকাতে ২ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। এর আগে নিহালপুর এলাকার ব্যাড়িবাধের ভাঙ্গন রোধে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৬ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।
ভাঙ্গন রোধে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
-এসআইএস/এমএ