প্রতারণার নতুন ফাঁদ, ফ্রি ভিসাই কন্টাক্ট ভিসা
Published : Sunday, 16 June, 2019 at 10:57 AM Count : 594
প্রবাসী শ্রমিকের আহাজারি ও আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠছে সৌদির আকাশ বাতাস। একটু সুখের আশায় সহায় সম্বল বিক্রি করে সুদে টাকা নিয়ে ৫ লাখ টাকা খরচ করে বৈধ কন্টাক্ট ভিসা, বিএমইটি ছাড়পত্র, কাজের চুক্তিপত্র নিয়ে সৌদি আরব এসেছেন অনেকেই। দীর্ঘ ৭ মাসে চার কোম্পানীতে কাজ করে বেতন-ভাতা না পেয়ে বাথা বাঙালি মার্কেটে একটি বহুতল ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড কার পার্কিংয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে ৩০ বাংলাদেশি প্রতারিত শ্রমিক।
শুরুতেই প্রতারণার খপ্পরে পড়েন শ্রমিকরা। তারা জানান, দালালরা তাদের নিকট থেকে টাকা নিয়েছে সৌদি আরবের ফাহাদ কোম্পানীতে রোড ক্লিনারের ভিসার কথা বলে। কিন্তু ভিসা স্ট্যাম্পিং হওয়ার পর যখন শ্রমিকরা দেখতে পায় ফাহাদ কোম্পানীর স্থলে বাবতেইন কোম্পানীর ভিসা লেগেছে তখন তারা এই ভিসায় সৌদি আরব যেতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু দালালরা শ্রমিকদের বলে এগুলো কন্টাক্ট ভিসা, বাবতেইন কোম্পানীর ভিসা হলেও কাজ কিন্তু ফাহাদ কোম্পানীতে তাই চিন্তা না করে সৌদি আরব গিয়ে কাজে যোগদানের কথা বলেন।
জনশক্তি রপ্তানীর সমস্ত নিয়ম নীতি মেনে দালালরা কৌশলে হাজার হাজার ফ্রি ভিসাকে কন্টাক্ট ভিসা বলে চালিয়ে দিলেও প্রবাসীদের কল্যাণে নিয়োজিত সংস্থাগুলোর নজরে আসছে না। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার শ্রমিক প্রতারণার স্বীকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফিরলেও টনক নড়ছেনা রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্তা ব্যক্তিদের। প্রতারণা বন্ধে নেওয়া হচ্ছেনা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তাই এই সুযোগে প্রবাসী শ্রমিকের রক্তচোষা দালাল চক্র দেশে এবং প্রবাসে গড়ে তুলেছে বিশাল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট তিন ভাগে কাজ করছে বলে জানান কয়েকজন ভুক্তভোগী। একটি অংশ বাংলাদেশে ভিসা বিক্রির কাজে নিয়োজিত, আরেকটি সৌদি আরব থেকে ভিসা সংগ্রহ এবং অন্যটি সৌদিতে কাজের সন্ধানে থাকে।
কেউ সাড়ে ৪ কেউ বা ৫ লাখ টাকা দিয়ে আটকা পড়ে বাধ্য হয়ে ৯শ রিয়াল বেতনে সৌদি আরবের রিয়াদের উদ্দেশ্যে গেলো নভেম্বর মাসে যাত্রা করেন।
শ্রমিকরা বলছেন, রিয়াদের বিমানবন্দরে অবতরণের পর তাদেরকে কর্মস্থলে নিয়ে যাওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে তারা দেশে দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দু'জন বাংলাদেশি বাসার এবং হাসান নামের একজন তাদের বিমানবন্দর থেকে নিয়ে দাখেল মওদুদ এলাকার একটি বিল্ডিংয়ে রাখেন। তারপর সেখান থেকে কখনও কনস্ট্রাকশনের কাজ, কখনও পাইপ লাইনের কাজ, কখনও আবার ক্লিনারের কাজ এভাবে ৪-৫টি কোম্পানীতে কাজ করিয়ে কোন বেতন ভাতা না দিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে তারা। ১২/১৩ ঘন্টা কাজ করে বেতন না পেয়ে হতাশ হয়ে দেশে ফিরতে চান প্রতারিত শ্রমিকরা।
শ্রমিকরা জানান, সর্বশেষ আল কাসিম শহরের পাঁচ নাম্বারে একটি কোম্পানীতে তাদের কাজ দেওয়া হয়। সেখানে ৬শ রিয়াল বেতন হলেও ৩শ রিয়াল মিশরি ফোরম্যান এবং সুপারভাইজার কেটে রাখে। টাকা না পেলে তারা মারপিট করে। ওই ক্যাম্পে একজন বাংলাদেশিকে অতিরিক্ত মারপিট করার ফলে সে এখন পাগল প্রায়। যেকোন সময় মারা যেতে পারে। সেখানে কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। এর আগে দু'জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছে বলেও জানান শ্রমিকরা।
এছাড়াও, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না ঘরে কিংবা এক রুমে ৪০/৫০ জনকে থাকতে হয়। সেই কোম্পানী থেকে তাদের বের করে দিলে এখানে এসে আশ্রয় নেন। অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন তারা।দেশে তাদের স্ত্রী-সন্তান, পরিবার পরিজন পথের ভিখারি।
শুধু তাই নয়, দেশ থেকে পাঠানো শ্রমিকের চুক্তিপত্রের সঙ্গে কাজের কোন মিল থাকছে না। আবাসিক হোটেলে কাজের কথা বলে সুপার মার্কেটের ক্লিনার কিংবা ট্রলি বয়ের কাজ, পেট্রল পাম্পে কাজের কথা বলে কনস্ট্রাকশনের কাজ করিয়ে মাসের পর মাস বেতন না দিয়ে প্রতারণা করে যাচ্ছে এই চক্র। অসহায় শ্রমিকরা ভিসা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি।
এ বিষয়ে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, প্রতারিত শ্রমিকদের সহায়তা করবে বাংলাদেশ দূতাবাস।
-এসসি/এমএ