পঞ্চগড়ে আয়করের কোটি টাকা আত্মসাতে মূল হোতারা আড়ালে!
Published : Saturday, 1 June, 2019 at 10:07 PM Count : 582
দুদকের অভিযানের পর আয়করের ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার ৭৯১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কয়েকজনের নামে মামলা করা হলেও শুভঙ্করের ফাঁকি রয়ে গেছে। পঞ্চগড় আয়কর বিভাগ ও সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ের লোকজন জড়িত থাকলেও তাদেরকে আড়াল করতে অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আসামি করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে।
ওই সূত্র মতে, টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আয়কর বিভাগ পঞ্চগড় সার্কেলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এর দায় এড়াতে পারে না। কারণ ১৮৮১ সালের নেগোসিয়েবল ইন্সট্রুম্যান্ট অ্যাক্ট (এনআইঅ্যাক্ট) মোতাবেক পে অর্ডার জমা দেয়ার জন্য এনডোর্সমেন্টে আয়কর কর্মকর্তার সীল স্বাক্ষর থাকে। এছাড়া পঞ্চগড় কর কার্যালয়ের চলতি হিসাব নম্বরে অতিরিক্ত টাকা জমা হওয়ার বিষয়টিও ওই উর্ধ্বতন কর্মকর্তার জানার কথা। কারণ প্রতিমাসে হিসাব নম্বরের বিপরীতে ব্যালেন্স জানানো হয়। এছাড়া চেকটিও নিশ্চয়ই ওই কর্মকর্তাই স্বাক্ষর করেছেন। টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পঞ্চগড় সার্কেল-২০ এর সহকারী কর কমিশনার আফরোজা বেগম গত ১৬ই মে বাদী হয়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার আসামিদের ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সারা দেশে তদন্ত শুরু করেছে। মামলার আসামিরা হলেন-রংপুর কর অঞ্চলের সার্কেল-১৮ এর কম্পিউটার অপারেটর মো. ওবায়দুর রহমান, সার্কেল-১৪ এর উচ্চমান সহকারী মো. রফিকুল ইসলাম, সার্কেল-১৬ এর অফিস সহকারী মো. মাসুদ রানা, সার্কেল-৪ এর উচ্চমান সহকারী মো. ফিরোজ জামান, সার্কেল-২০ এর অফিস সহকারী মো. জালাল উদ্দিন, নিরাপত্তা প্রহরী রাজেকুল ইসলাম, ঝাড়–দার আব্দুস সাত্তার এবং ২০১২ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের পঞ্চগড় শাখায় কর্মরত সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তা-কার্মচারী।
মামলার পর পরই দুদক গত ২৮শে মে পঞ্চগড় কর সার্কেলের সাবেক অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম, পঞ্চগড় কর সার্কেলের সাবেক উচ্চমান সহকারী মো. ফিরোজ জামান ও পঞ্চগড় কর সার্কেল অফিস থেকে নিরাপত্তা প্রহরী মো. রাজেকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চগড় আয়কর অফিসের নিরাপত্তা প্রহরি মো. রাজেকুল ইসলামকে পঞ্চগড় উপকর কমিশনার কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। অন্য দুজনকে কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী থেকে গ্রেফতার করে দুদক।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর কর অঞ্চলের আয়কর দাতাদের পে অর্ডার নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কোষাগারে নির্ধারিত কোডে (১-১১৪১-০০৬৫-০১১১) সোনালী ব্যাংকের পঞ্চগড় শাখায় জমা করার কথা। মামলার আসামিরা করদাতারের পে অর্ডার সরকারি কোষাগারের নির্ধারিত কোডে সোনালী ব্যাংকে টাকা জমা না করে পঞ্চগড় কর কার্যালয়ের চলতি হিসাব নং ০০১০১৯৯৯৪ এ জমা করেন। পরে আসামিরা যোগসাজশে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে। মামলার আসামিরা ২০১২ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ কোটি ৬৪ লাখ ৬৯ হাজার ৭৯১ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন।
দুদক দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ পরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান জানান, জনগণের আয়করের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না হওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে দিনাজপুর ও পঞ্চগড় সোনালী ব্যাংকে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বিষয়গুলো আয়কর বিভাগকে জানানো হয়। ইতোমধ্যে পঞ্চগড় কর সার্কেলের ৩ জনকে আমরা গ্রেফতার করেছি। টাকা আত্মসাতের বিষয়ে পঞ্চগড় আয়কর বিভাগ সোনালী ব্যাংক পঞ্চগড় শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহযোগিতা চেয়েছিলেন। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের দুই শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনো প্রকার সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ করেছেন পঞ্চগড় জেলার আয়কর কর্মকর্তা আফরোজা বেগম।
তবে সোনালী ব্যাংক পঞ্চগড় শাখার জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (এসপিও) এ কে এম মতিয়ার বলেন, এ ঘটনায় ব্যাংক তদন্ত কমিটি করেছে। মামলা হওয়ায় বিচারাধীন বিষয়ে তিনি বক্তব্য দিতে চান না। অসহযোগিতার বিষয়ে জানান, কর কার্যালয় যে তথ্য চেয়েছে তা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দেশনা না দেয়ায় তথ্য দেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় সার্কেল-২০ এর সহকারী কর কমিশনার আফরোজা বেগম বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন তদন্ত চলছে। ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসআইএস/এসআর