For English Version
বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
হোম

'ওঝার ফুঁ-ই তাদের একমাত্র ভরসা'

Published : Wednesday, 22 May, 2019 at 12:21 PM Count : 525


পটুয়াখালীর কুয়াকাটার তুলাতলী ২০ শয্যা হাসপাতালটি জেলে পল্লী খাজুরা গ্রাম থেকে ১০ কি. মি. দূরে। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আর কুসংস্কারের কারণে এ গ্রামের মানুষ আধুনিক যুগেও চিকিৎসা ও সন্তান প্রসবের জন্য ঝাড়-ফুঁকের উপর নির্ভরশীল। অদক্ষ দাইয়ের হাতে প্রসূতিরা সুস্থ্য সন্তান প্রসব করলেও কুসংস্কার আর সঠিক চিকিৎসার অভাবে সদ্যজাত শিশু মৃত্যুর ঘটনা বেড়েই চলছে।

এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোগব্যাধী হলে তাদের গলায় ঝোলানো হয় একের পর এক মাদুলী। কুয়াকাটা সৈকত ঘেষা আদর্শ গ্রামের ৬০ পরিবার সিডরে সব হারিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই পায় খাজুরার ব্রিটিশ রেড ক্রিসেন্ট পল্লীতে। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলেও নেই পর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধা। গ্রাম থেকে দুই-তিন কিলোমিটার দূরে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকায় প্রাথমিকের গন্ডি পার হতেও পারে না শিক্ষার্থীরা। বাল্য বিয়ের ঘটনা এখানে নিয়মিত। অল্প বয়সে মা হওয়ায় ও পারিবারিক অস্বচ্ছলতায় ৬০ পরিবার নিয়ে গড়ে ওঠা ওই জেলে পল্লীতে স্বামী পরিত্যক্তা ও ডিভোর্সী নারীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোড়ামীর কারণে কুয়াকাটা পৌর শহরের বাসিন্দা হয়েও তারা অবহেলিত। কুসংস্কারে ঘেরা এ গ্রামের মানুষগুলো সামান্য জ্বর, সর্দি বা যেকোনো অসুখে হলেই যায় ওঝার কাছে।
ভূক্তভোগী একাধিক গৃহবধূ জানান, সুস্থ্য সন্তান জন্ম দিয়েও সঠিক চিকিৎসার অভাবে জন্মের কয়েক ঘন্টার মধ্যে সন্তানটি মারা যায়। গ্রামবাসীরা এ মৃত্যুকে ভূত-প্রেতের দৃষ্টি বলে উল্লেখ করেন।

তাছলিমা বেগম বলেন, কয়েক বছর আগে গ্রাম্য দাইয়ের সহায়তায় তিনি ফুটফুটে জমজ সন্তান প্রসব করেন। কিন্তু সন্তান প্রসবের পাঁচ ঘন্টার মধ্যে রাত ২টার দিকে হঠাৎ ছেলে সন্তানটি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তখন তাকে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে ওই রাতে হাজির করা হয় এক ওঝাকে। ওঝা কয়েক ঘন্টা ফুঁ-ফাঁ দিয়ে চেষ্টা করে। কিন্তু আমার সন্তানটিকে বাঁচানো যায়নি। পর দিন সকালে যখন শিশুকে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছে গ্রামবাসীরা। ঠিক সেই মুহুর্তে আবার অসুস্থ্য হয়ে পড়ে মেয়ে শিশুটিও। তখনও আনা হয় ওঝাকে। মেয়েটিও মারা যায়।

তিনি বলেন, ওঝার কাছে না নিয়ে যদি তার দুই সন্তানকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া হতো তাহলে হয়তো দুই সন্তানই বেঁচে থাকতো।

একাধিক গ্রামবাসীরা বলেন, আর্থিক সংকট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দূরাবস্থার কারণে অনেক পরিবার ইচ্ছে থাকা সত্বেও কেউ অসুস্থ্য হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারছে না। এ কারণে ওঝাই তাদের একমাত্র ভরসা।

তাদের দাবি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও এলাকায় একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হোক। তাহলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে এ গ্রামের মানুষ।

কুয়াকাটা পৌর মেয়র আ. বারেক মোল্লা বলেন, এখানে হাসপাতাল আছে ঠিকই কিন্তু নেই চিকিৎসক। হাসপাতাল নির্মাণ হওয়ার প্রথম ছয় মাস তুলাতলী হাসপাতালে চিকিৎসক থাকলেও এখন চিকিৎসক এসেই চলে যায়। এ কারণে জরুরী প্রয়োজনেও মানুষ হাসপাতালে যেতে চায়না। তাই বাধ্য হচ্ছে গ্রাম্য ওঝা ও দাইয়ের চিকিৎসা নিতে।

তুলাতলী হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফুর রহমান বলেন, হাসপাতালের জনবল ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সংকট রয়েছে। তিনিই এখানে একমাত্র চিকিৎসক। এখানে সব সুবিধা না থাকায় তাদের ইচ্ছে থাকা সত্বেও সব রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারছেন না।

-এমএ

« PreviousNext »



সর্বশেষ সংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000. Phone : PABX- 0241053001-08; Online: 41053014; Advertisemnet: 41053012
E-mail: info$dailyobserverbd.com, mailobserverbd$gmail.com, news$dailyobserverbd.com, advertisement$dailyobserverbd.com,   [ABOUT US]     [CONTACT US]   [AD RATE]   Developed & Maintenance by i2soft