লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা ৩১ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. কামনা শীষ মজুমদারের বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মেঘনার ভাঙ্গন কবলিত উপকুলীয় এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র মাধ্যম রামগতি উপজেলা এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।
একজন মেডিকেল অফিসারের ঘুষ বাণিজ্য, অসদাচরণ, সরকারী সম্পদ লুটপাট, রোগীদের থেকে বেপরোয়া অর্থ আদায়, নারীদের প্রতি অশ্লীল আচরণসহ নানা অনিয়ম আর ক্ষমতার অপব্যবহারে জিম্মি হয়ে পড়েছে হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা, নার্স ও রোগীরা। বর্তমানে প্রায় অচলের অবস্থা এই হাসপাতালটি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের আলোকে সরেজমিনে গিয়ে পাওয়া যায় ডা. কামনা শীষ মজুমদারের ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র। বেরিয়ে এসেছে তার ভয়ঙ্কর দুর্নীতির খতিয়ান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেখানে কর্মরত নার্সদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, কর্মকর্তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ওই মেডিকেল অফিসারের নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালের মহিলা মেডিকেল অফিসার ডা. সুজনা মালেক তিনুকে প্রতিনিয়ত সরকারি বাসা থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি ও এ হাসপাতাল থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে বেড়ান। ডাক্তার সুজনার অপরাধ তিনি তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন।
অন্যদিকে, হাসপাতালের ডিউটি ফাঁকি দিয়ে ডা. কামনা শীষ মজুমদার উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে এসে তাস খেলায় ব্যস্ত থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সদ্য ঘূর্ণিঝড় ফনির তাণ্ডবের রাতে ডিউটি ফাঁকি দিয়ে ক্লাবে এসে তাস খেলা অবস্থায় উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফত উদ্দিন আজাদ সোহেলের নিকট হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি। পরে ক্ষমা চেয়ে রেহাই পান এই অফিসার। এছাড়া ২০১৫ সালে সরকারি অনুমোদন ছাড়া রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রায় ৪ লক্ষ টাকার সরকারি গাছ রাতের আধারে বিক্রি করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিরীহ ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের চাকুরি খাওয়ার হুমকি দিয়ে অনৈতিক কাজ আদায় করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সুন্দরী নারী রোগীদের সঙ্গে প্রায় সময় অশ্লীল আচরণ করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী রোগীদের।
সরকারি দায়িত্ব পালনকালে হাসপাতালে ভিজিট গ্রহণ করা, পল্লী চিকিৎসক ও ফার্মেসী ব্যবসায়ীদের রেজিষ্ট্রেশন করার নামে কোন রকম আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই ভয় দেখিয়ে অবৈধভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করে হাসপাতালে প্রকাশ্য ধূমপান সেবনের বিস্তর অভিযোগ রোগীদের। অভিযুক্ত এই চিকিৎসকের কর্মকাণ্ডে গোটা হাসপাতালে এক রাম রাজত্ব কায়েম করে বিভিন্ন সেক্টর থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। তার দুর্ব্যবহার, একক কর্তৃত্ব কায়েম করে পুরো হাসপাতালে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জিম্মি করে রাখেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ তুললে বহিরাগত লোক দিয়ে লাঞ্চিত করার হুমকি দিয়ে বেড়ান। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর লোকজনের থেকে মোট অংকের টাকার বিনিময়ে কমিশন বাণিজ্য তার ওপেন সিক্রেট।
এ বিষয়ে সরেজমিনে গিয়ে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য গ্রহণ ও সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান এই কর্মকর্তা।
পরে তার এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে কামনা শীষ মজুমদার বলেন, কিছু লোক মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার নামে কুৎসা রটাচ্ছে। আমি এই ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত নই। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে নারাজ তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুর রহিম জানান, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো অনেক আগে থেকে শুনতেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রফিকুল হক জানান, অপরাধী যেই হোক, তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান শরাফত উদ্দিন আজাদ সোহেল সাংবাদিক পরিচয় শুনে ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
-এমএ