কাঁচা চা পাতার মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে তেঁতুলিয়ায় মহাসড়ক অবরোধ
Published : Sunday, 12 May, 2019 at 5:25 PM Count : 702
কাঁচা চা পাতার মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে কয়েক ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে তেঁতুলিয়ার ক্ষুদ্র চা চাষীরা। রোববার দুপুরে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার মাঝিপাড়া এলাকায় সকাল সাড়ে ১১টা থেকে এই অবরোধ শুরু হয়। তেঁতুলিয়া স্মলটি গ্রোয়ার্সের ডাকে এর আগে বিক্ষোভ সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সহস্রাধিক ক্ষুদ্র চা চাষী মহাসড়কে বসে পড়ে। অবরোধকারী চা চাষীরা এ সময় মহাসড়কেই জোহরের নামাজ আদায় করে। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। ফলে যাত্রীরা সাময়িক বিড়ম্বনার শিকার হয়। বেলা ২ টার সময় প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
এ সময় বক্তারা বলেন, চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত কাঁচা চা পাতার মূল্য দিচ্ছেনা চা কারখানা কর্তৃপক্ষ। পঞ্চগড়ের চা করাখানাগুলো সিন্ডিকেট তৈরীর মাধ্যমে হঠাৎ করে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা মূল্য কমিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও চা বাগান মালিকের যোগসাজসে কাঁচা চা পাতার মূল্য কমিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ফলে ক্ষুদ্র চা চাষীরা সংকটের মধ্যে পড়েছে। অনেকে বলছে ক্ষুদ্র চা চাষে এটি অশনি সংকেত।
জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় চা কারখানা মালিক, বাগানের মালিক এবং ক্ষুদ্র চা চাষীদের নেতৃবৃন্দ, টি বোর্ডের কর্মকর্তারা অংশ নেয়। ঐ সভায় এবছরের জন্য কাঁচা চা পাতার মূল্য নির্ধারণ করা ২৪ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু গত ৬ মে পঞ্চগড়ের সকল চা করাখানা হঠাৎ করেই কাঁচা চাপাতার মূল্য প্রতি কেজিতে ২০ টাকা পরিশোধ করা শুরু করে। এ নিয়ে চাষীদের মধ্যে ক্ষোভ শুরু হয়। চাষীরা এই মূল্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। কয়েকদফা মানববন্ধনও করে তারা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। এমতাবস্থায় রবিবার সকাল থেকে তারা মহাসড়ক অবরোধ শুরু করে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজনগর এলাকার ক্ষুদ্র চা চাষী শওকত আলী জানান, ৩ একর জমিতে চা চাষ করেছি। হঠাৎ করেই চা কারখানা মালিকরা নীলকরদের মতো আমাদের উপর অত্যাচার শুরু করেছে।কোন প্রকার ঘোষণা ছাড়াই তারা তাদের ইচ্ছেমতো কাঁচা চা পাতার মূল্য কমিয়েছে। এই মূল্য দেয়া হলে চাষীরা মাঠে মারা যাবে।
শালবাহান রোড এলাকার চা চাষী হাবিবুর রহমান হবি জানান, এর আগে কাঁচা চাপাতার মূল্য ছিলো ৩৭ টাকা। কোন কোন সময় ৪০ টাকাও দিয়েছে কারখানাগুলো। কিন্তু এখন সরকার কতৃক নির্ধারিত মূল্যও পরিশোধ করেনা। কারখানা মালিকদের এই ষড়যন্ত্রে এলাকার কিছু প্রভাবশালী অসাধু চা চাষী এবং চা ব্যবসায়ী হাত মিলিয়েছে। তাদের চা পাতার দাম ঠিকই পরিশোধ করছে কারখানা মালিকরা।
খুঁটাগজ এলাকার হাফিজুল ইসলাম জানান, সার কিট নাশকের দাম বেড়ে গেছে। শ্রমিকের মুজুরী বেড়েছে। তাই কাঁচা চা পাতার উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অবস্থায় মূল্য কমানো হলে চাষীরা লোকসানে পড়বে। এভাবে চা চাষ সম্প্রসারণ সম্ভব হবেনা। কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অকশন মার্কেটে আসামের চা প্রবেশের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ভারত থেকে চা আমদানী করার ব্যাপারেও নানা খবর শোনা যাচ্ছে। এসব গুঞ্জন সত্যি হলে উত্তরবঙ্গের চা চাষীরা মাঠে মারা যাবে।
বর্তমানে পঞ্চগড়ে ১৪ টি চা কারখানায় চা উৎপন্ন হচ্ছে। আরো ১০টি কারখানা শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টি ফেক্টরি অনার্স এসোসিয়েসনের সভাপতি শেখ মো. শাহ্আলম জানান, গত এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখে হঠাৎ করেই অকশন মার্কেটে প্রস্তুতকৃত চায়ের দাম কমে যায়। এ বছরেই দুই দফা প্রস্তুতকৃত চায়ের মূল্য কমেছে। গত বছর অকশন মার্কেটে ২৮০ টাকা কেজি দরে প্রস্তুত কৃত চা বিক্রি হতো। এবছর ২ দফায় ১শ থেকে দেড়’শ টাকা কমে গেছে। এ অবস্থায় নির্ধারিত মূল্যে কাঁচা চাপাতা কিনলে কারখানা মালিকরা লোকসানে পড়বে। তাই হঠাৎ করেই কাঁচা চাপাতার মূল্য কমানো হয়েছে।
বাংলাদেশ টি বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামিম আল মামুন জানান, আগামী ১৫ তারিখে চায়ের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভা ডেকেছেন জেলা প্রশাসক। আশা করি সেদিনই চাষীদের সমস্যা সমাধান হবে। এই সভায় জেলা কাঁচা চাপাতার মূল্য নির্ধারণ কমিটির পক্ষ থেকে কারখানাগুলোর কাছ থেকে মূল্য কমানোর কারণ জানতে চাওয়া হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য ২৪ টাকা ৫০ পয়সা। কমিটি আগামী ১৫ মে সভা করে নতুন মূল্য নির্ধারণ করবে। এর আগে কম বেশি করার সুযোগ নেই।’
এইচআইএইচ/এইচএস