শ্রমিক সংকটে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে 'স্বপ্নের' ধান
Published : Sunday, 12 May, 2019 at 11:59 AM Count : 525
নওগাঁয় বর্তমানে ধান কাটার শ্রমিকের চরম সংকট। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষকের ফলানো ইরি-বোরো পাকা ধান জমিতেই খড়ায় পুড়ছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার কৃষকরা।
জেলার ১১টি উপজেলায় মাঠের পর মাঠ পাকা ধান ঘরে তুলতে অনেক কৃষক প্রতি মণের বিপরীতে ২০ কেজি ধান দিতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রমিকদের। তারপরও মিলছে না ধান কাটা শ্রমিক।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মিনহাজুল (৫২), মোকলেছার রহমান (৪৭) ও পত্নীতলা উপজেলার জাহিদুল রহমান (৫১) সহ অনেক কৃষক নওগাঁর চৌমাশিয়া নওহাটামোড় বাজারে এসে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বসে থেকেও কোন ধান কাটার শ্রমিক পাননি।
তারা জানান, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফলানো আমাদের পাকা ধান শ্রমিক সংকটের কারণে জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত বছর ইরি-বোরো মৌসুমেও আমাদের এ বিপদে পড়তে হয়নি। গত বছর যেখানে মাত্র জমি থেকে ধান কেটে বাড়িতে তুলতে প্রতি মণ ধানের বিপরীতে শ্রমিকদের মাত্র ৫ কেজি ধান দিতে হয়েচ্ছে। আর মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সেই একই জমির ধান কেটে ঘরে তুলতে প্রতি মণের বিপরীতে এখন ২০ কেজি ধান দিতে বাধ্য হচ্ছি।
একদিকে ধান কাটা শ্রমিকের চরম সংকট অপরদিকে বাজারে ধানের মূল্য নেই জানিয়ে তারা বলেন, শ্রমিক সংকট সমাধান না হলে এবং প্রতি মণের বিপরীতে ২০ কেজি ধান শ্রমিকদের দিয়ে কেটে নিলে সর্ব নিম্ন প্রতি মণ ধানের বিপরীতে শুধুমাত্র আমাদের খরচই পড়বে সাড়ে ৮শ থেকে সাড়ে ৯শ টাকা। বর্তমান ধানের হাট-বাজারে আপনারা দেখুন লম্বা জিরা শাইল প্রতি মণ কেনাবেচা হচ্ছে সাড়ে ৫শ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা। আর খাটো জিরা শাইল ধান সাড়ে ৬শ থকে ৭শ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা হচ্ছে।
সরস্বতীপুর হাটে ধান বিক্রি করতে আসা আজিপুর অজুনি গ্রামের কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েক দিন আগে ফণী নামের ঝড় ও বাতাসের কারণে আমার মাঠের সব ধান জমিতে শুয়ে পড়ে এবং কিছু ধান পানিতে তলিয়ে থাকায় অনেক কষ্টে ১৩ জন শ্রমিক নিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলেছি। আমরা কৃষকরাই সারাজীবন লোকসান দিয়ে বেঁচে থাকি এসব লিখেও কোন লাভ নেই। আর কিছু দিন বা বছর পর আমাদের মত মাঝাড়ি আকারে কৃষকদের জমি বিক্রি করে খেতে হবে, না হয় অন্যের বাড়িতে দিনমজুরী কাজ করতে হবে। ধান রোপণের খরচ থেকে শুরু করে সার, কিটনাশক ও সর্বশেষ ধান কাটার সময় শ্রমিককেই দিতে হচ্ছে প্রায় অর্ধেক ধান এতে করে আমরা প্রতি মণে যে খরচ করছি কিন্তু বাজারে গিয়ে সেই খরচের টাকাও উঠছে না।
জেলার মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া, বাগধানা, খোর্দ্দনারায়ণপুর ও নলবলোসহ বেশ কয়েকটি মাঠ ঘুড়ে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠে জমিতে ধান পেকে তীব্র খড়ায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব গ্রামের কৃষকদেরও একই অভিযোগ, ধান কাটিয়া শ্রমিকের চরম সংকট।
এই ধান কাটিয়া শ্রমিক সংকটের সমাধান যদি চলতি সপ্তাহেও না হয়। সে ক্ষেত্রে অনেক মাঠে কষ্টে ফলানো কৃষকদের ইরি-বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবে এমন ধারণা সচেতন মহলের। একইসঙ্গে সাধারণ কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে হাট-বাজারে ধানের মূল্য সর্ব নিম্ন প্রতি মণ সাড়ে ৮শ থেকে ৯শ টাকা দরে বিক্রি যেন হয় বা কৃষকরা বিক্রি করতে পারে এ জন্য সরকারের খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের পদক্ষেপ কামনাও করেছেন তারা।
-এমএ