রাষ্ট্রীয় দিবসে পার্ক, চিড়িয়াখানা ও জাদুঘর শিশুদের জন্য উন্মুক্ত রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে। তবে স্বাধীনতা দিবসে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় ছাড় পায়নি শিশুরা। বড়দের মতো তাদেরও ২৫ টাকায় কিনতে হয়েছে প্রবেশের টিকিট। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিড়িয়াখানায় গিয়ে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
বেশিরভাগ শিশুর অভিভাবক জানিয়েছেন, স্বাধীনতা দিবসে শিশুদের টিকিট লাগে না- এটা তারা জানেনই না। তবে কেউ কেউ বলেছেন, তারা বিষয়টি জানেন। কিন্তু কাউন্টারে শিশুদের জন্যও টিকিট নিতে বলা হয়।
পাঁচ বছরের তাহাসিনা আলমকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলেন মহানগরীর কাজিহাটা এলাকার ব্যাংক কর্মকর্তৃা তৌহিদুল আলম। তিনি বলেন, মেয়েটা নার্সারিতে পড়ে। তারপরেও কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে বলা হয়। তিনি কোনো ঝামেলা না করে টিকিট নিয়েই ভেতরে ঢোকেন। তৌহিদুল বলেন, এতো ছোট মেয়ের তো অন্য দিনেই টিকিট নেয়ার কথা না। তারপরেও টিকিট নেয়া হলো, যেদিন শিশুদের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা।
ঘোড়ার ঘূর্ণি রাইডের সামনে কথা হয় পাবনা সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি চিড়িয়াখানায় এসেছেন। প্রবেশ পথে শিশুদের টিকিট লেগেছে। রাইডে চড়তেও টিকিট কিনতে হচ্ছে।
শফিকুল বলেন, ‘বাংলাদেশে ফ্রী বলে কিছু নেই’। এ রাইডের দায়িত্বে থাকা আরাফাত হোসেন বলেন, রাষ্ট্রীয় দিবসে প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের সময় শিশুদের টিকিট লাগে না। কিন্তু ভেতরে সব রাইডেই আলাদা আলাদা টিকিট কিনতে হয়। এসবের দিবস বলে কিছু নেই।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইনসান আলীও তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা দিবসে বাচ্চাদের টিকিট লাগবে না জেনেই তিনি এসেছেন। ভেবেছিলেন, টিকিটের টাকায় গাড়ি ভাড়া হয়ে যাবে। কিন্তু এসে দেখেন, বাচ্চাদেরও টিকিট লাগছে।
ইনসান বলেন, শিশুদের স্বাধীনতা দিবসের সুবিধা দিতেই সরকার এই দিনে তাদের বিনা টিকিটে চিড়িয়াখানা দর্শনের সুযোগ রেখেছে। কিন্তু চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ শিশুদের সেটা বঞ্চিত করছে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) পরিচালিত এই চিড়িয়াখানার টিকিট কাউন্টারে গিয়ে সুমন আলী নামে এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে তিনিই টিকিট বিক্রি করছিলেন। তিনি দাবি করেন, শিশুদের কাছে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। সুমন বলেন, অনেক অভিভাবকই শিশুদের কথা না জানিয়ে টিকিট কেটে নিয়েছেন। তিনি যেসব অভিভাবকের কাছে শিশু দেখেছেন তাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে টিকিট লাগবে না।
তবে অভিভাবকের সঙ্গে যায়নি এমন শিশুকেও কাউন্টার থেকে টিকিট কিনতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে দুইজন হলো, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মোহনপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র বিজয় হাসান ও আলিফ হোসেন স্বাধীন। সম্পর্কে এ দুই চাচাতো ভাইয়ের বাড়ি উপজেলার পাকড়া গ্রামে। বিজয় ও স্বাধীন জানায়, দুজনকেই টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কিনতে হয়েছে। তারপর তাদের চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিড়িয়াখানার সুপারভাইজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্বাধীনতা দিবসে শিশুদের বিনাটিকিটি ঢুকতে দেয়ার জন্য রাসিক থেকে নির্দেশনা রয়েছে। তারপরেও কেন শিশুদের কাছে টিকিট বিক্রি করা হয়েছে সেটা বুঝতে পারছি না। তবে এখন আমি কাউন্টারে বলে দিচ্ছি, সারাদিন যেন শিশুদের বিনাটিকিটেই চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
আরএইচএফ/এইচএস